Advertisement
০৩ মে ২০২৪

অনলাইন নয়, ফর্ম তুলতে ধৈর্যের পরীক্ষা

চড়া রোদ মাথায় নিয়ে সকাল থেকে লম্বা লাইন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ল লাইনও। দূরদূরান্ত থেকে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফর্ম তুলতে হল সদ্য স্কুল পেরোনো পড়ুয়ারা। ঘেমেনেয়ে ফর্ম তুলে বাড়ি ফেরার পথে অনেক পড়ুয়ারই প্রতিক্রিয়া, “অনলাইনে ফর্ম দেওয়া হলে এত কষ্ট হত না।” সোমবার সকালে আসানসোল ও দুর্গাপুরের নানা কলেজে দেখা গেল এমনই সব দৃশ্য।

লম্বা লাইন। দুর্গাপুরের মাইকেল মধুসূদন কলেজ।ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

লম্বা লাইন। দুর্গাপুরের মাইকেল মধুসূদন কলেজ।ছবি: সব্যসাচী ইসলাম

সুব্রত সীট ও সুশান্ত বণিক
দুর্গাপুর ও  আসানসোল শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৪ ০২:৪৮
Share: Save:

চড়া রোদ মাথায় নিয়ে সকাল থেকে লম্বা লাইন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ল লাইনও। দূরদূরান্ত থেকে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফর্ম তুলতে হল সদ্য স্কুল পেরোনো পড়ুয়ারা। ঘেমেনেয়ে ফর্ম তুলে বাড়ি ফেরার পথে অনেক পড়ুয়ারই প্রতিক্রিয়া, “অনলাইনে ফর্ম দেওয়া হলে এত কষ্ট হত না।” সোমবার সকালে আসানসোল ও দুর্গাপুরের নানা কলেজে দেখা গেল এমনই সব দৃশ্য।

এ দিন থেকে নানা কলেজে স্নাতক স্তরে ভর্তির ফর্ম বিলি শুরু হয়েছে। গত বছর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলিতে অনলাইনেই ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল। এ বার দুর্গাপুর গভর্নমেন্ট কলেজ ছাড়া শিল্পাঞ্চলের বাকি সব কলেজে ফর্ম দেওয়া হচ্ছে হাতে-হাতে। এ দিন সকাল থেকেই তাই কলেজগুলির সামনে ভিড় জমে।

মাইকেল মধুসুদন মেমোরিয়াল কলেজে সকাল থেকে যাঁরা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন, ফর্ম পেতে তাঁদের অনেকেরই দুপুর গড়িয়ে গিয়েছে। কাঁকসার আমলাজোড়া থেকে আসা সুমন গড়াই বলেন, “সকালে প্রথমে হেঁটে বাসস্ট্যান্ডে এসে দু’টি বাস বদলে এখানে পৌঁছেছি। সময় তো নষ্ট হলই, সঙ্গে বাসভাড়া। অথচ, অনলাইনে হলে ১০ টাকা খরচ করলেই ফর্ম হাতে পেয়ে যেতাম।” ফর্ম নেওয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে গোপালপুর এলাকার বিপ্লব বসু, বিপাশা বসুরা জানান, অনলাইনে ফর্ম দেওয়ায় আগের বার পড়ুয়ারা ঘরে বসে ফর্ম পেয়েছিলেন। তাঁদের বক্তব্য, “আমাদের দুর্ভাগ্য, এই গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ঠোলাঠেলি করতে হচ্ছে।” কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, গত বার কেন্দ্রীয় ভাবে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ফর্ম দিয়েছিল অনলাইনে। কিন্তু এ বার তা না হওয়ায় হাতে-হাতে ফর্ম দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। এ ব্যাপারে তাঁদের হাত-পা বাঁধা।

আসানসোলের বিবি কলেজের সামনে লম্বা লাইন। মঙ্গলবার ছবি তুলেছেন শৈলেন সরকার।

দুর্গাপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষা মধুমিতা জাজোদিয়া বলেন, “অনলাইনে ফর্ম দেওয়া না গেলেও পড়ুয়ারা যাতে খুব বেশি সমস্যায় না পড়ে, সে দিকটা খেয়াল রাখা হচ্ছে।” কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেনারেল কোর্সে সরাসরি ভর্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাই এক দিনেই পড়ুয়ারা এসে ফর্ম নিয়ে তা পূরণ করে জমা দিয়ে ভর্তি হতে পারেন। বারবার কলেজ আসার দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। কিন্তু স্নাতক স্তরে সরাসরি ভর্তির ব্যবস্থা নেই। মধুমিতাদেবী বলেন, “জেনারেল কোর্সের পড়ুয়াদের তত সমস্যা হবে না। তবে স্নাতক স্তরে পড়ুয়ারা মেধা তালিকা অনুযায়ী ভর্তি হবে। তাই তাদের একাধিক দিন কলেজে আসতে হবে।” দুর্গাপুর গভর্নমেন্ট কলেজের তরফে জানানো হয়, তাদের ফর্ম দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে অনলাইনে। আজ, মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অনলাইনে ফর্ম দেওয়া হবে।

ফর্ম তোলার লাইন রাজ কলেজে।

আসানসোলের তিনটি কলেজে এবং রানিগঞ্জ টিডিবি কলেজ ও চিত্তরঞ্জন দেশবন্ধু কলেজেও এ দিন সকাল থেকে পড়ুয়াদের লম্বা লাইন ছিল। রানিগঞ্জের সৌমি ঘোষ, জামুড়িয়ার পুজা বন্দ্যোপাধ্যায়, কুলটির রাজেশ কুমারেরা জানান, সকাল ৮টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। দুপুর ১২টাতেও ফর্ম হাতে পাননি। তাঁদের বক্তব্য, “অনলাইনে ফর্ম পেলে এই ঝামেলা পোহাতে হত না!” এক অভিভাবক মৃদুলা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গত বছর অনলাইনে ফর্ম দেওয়া হয়েছিল। বড় মেয়েকে ভর্তি করতে সুবিধা হয়েছিল। এ বার ছোট মেয়ের ক্ষেত্রে তা আর হল না।” খনিকর্মী দিলীপ সরকার অসুস্থ। সম্প্রতি অস্ত্রোপচার হয়েছে তাঁর মেয়ে প্রিয়া সরকারেরও। ফর্ম তোলার জন্য আর কেউ না থাকায় দু’জন মিলেই এসেছিলেন কলেজে। তাঁরা জানান, সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দাঁড়িয়ে দুপুর ১২টা নাগাদ ফর্ম পান।

আসানসোল বিবি কলেজের অধ্যক্ষ অমলেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গত বছর অনলাইনে ফর্ম দিয়েছিলাম। সমস্যা কম ছিল। এ বার বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশে অনলাইনে ফর্ম দেওয়া গেল না।” রানিগঞ্জ টিডিবি কলেজের অধ্যক্ষ নৃপঙ্কর হাজরা বলেন, “এ বার নিয়ম বদলেছে। কিছু করার নেই। তবে পড়ুয়াদের সমস্যা যাতে কম হয়, সে চেষ্টা করা হয়েছে।” চিত্তরঞ্জন দেশবন্ধু কলেজের অধ্যক্ষ আশিস দে-র বক্তব্য, “নিয়মের জন্য অনলাইনে ফর্ম এ বার দেওয়া যায়নি। তবে আমরা নির্দিষ্ট নম্বরের মান বেধে দিয়েছি। সরাসরি ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন বহু পড়ুয়া।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE