Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
তদন্ত কমিটি গড়ল মেডিক্যাল

অপমানেই আত্মঘাতী ছাত্রী, নালিশ স্বজনের

নার্সিং হস্টেলে ছাত্রীর অপমৃত্যুর ঘটনায় কলেজের পাঁচ জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করল পরিবার। হস্টেল কর্তৃপক্ষের অপমানজনক কথাবার্তায় তাঁর মেয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ছাত্রীটির বাবা সৌয়দ রওসন আলি। ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার নার্সিং কলেজের ছাত্রীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে মিছিল করেন।

ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল ছাত্রীদের।—নিজস্ব চিত্র।

ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল ছাত্রীদের।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:১৫
Share: Save:

নার্সিং হস্টেলে ছাত্রীর অপমৃত্যুর ঘটনায় কলেজের পাঁচ জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করল পরিবার। হস্টেল কর্তৃপক্ষের অপমানজনক কথাবার্তায় তাঁর মেয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ছাত্রীটির বাবা সৌয়দ রওসন আলি। ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার নার্সিং কলেজের ছাত্রীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে মিছিল করেন।

মঙ্গলবার মেয়ের দেহ নিতে বর্ধমান মেডিক্যালে এসে নাজিরা আল ফিরদৌস নামে ওই ছাত্রীর বাবা দাবি করেন, শনিবার ক্লাস করার পরে ছুটি নিয়ে বীরভূমের নানুরে আত্মীয়ের বিয়েতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন তাঁর মেয়ে। রবিবার সন্ধ্যায় তাঁর হস্টেলে ফেরার কথা ছিল। সেই সন্ধ্যায় কাটোয়া পৌঁছলেও বর্ধমানমুখি শেষ চলে যাওয়ায় মেয়ে আর হস্টেলে ফিরতে পারেননি। বাধ্য হয়ে মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামে নিজের বাড়ি চলে যান।

রওসনের অভিযোগ, “আমার মেয়ে বাড়ি ফিরে বলে, ডাক্তারি সার্টিফিকেট দিতে হবে এই দেরির জন্য। না হলে তার হেনস্থার শেষ থাকবে না। আমি তার হাতে সার্টিফিকেট এবং না যেতে পারার কারণ জানিয়ে দরখাস্ত লিখে দিয়েছিলাম। পর দিন ১২টা নাগাদ মেয়েকে বর্ধমানে পৌঁছে দিয়ে ফিরে যাই। কিন্তু হস্টেলে গিয়ে কাগজপত্র জমা দিতেই তাকে প্রচণ্ড বকাঝকা ও কটূক্তি করা শুরু করেন নার্সিং অধ্যক্ষা কবিতা কুণ্ডু, ক্লিনিক্যাল কো-অর্ডিনেটার রীতা মাইতি-সহ পাঁচ জন।”

রওসন জানান, সোমবার দুপুর ২টো নাগাদ মেয়েকে ফোন করলেও তিনি ধরেননি। বিকেল ৪টে নাগাদ এক ছাত্রী তাঁকে ফোন করে জানান, নাজিরা গুরুতর অসুস্থ। রওসন বলেন, “সওয়া ৮টা নাগাদ এসে মেয়ের মৃতদেহ দেখতে পাই।”

নাজিরার মৃত্যুর পরে হস্টেলের ছাত্রীরা প্রথমে পুলিশকে ঢুকতে না দিয়ে নার্সিং প্রিন্সিপ্যাল ও কো-অর্ডিনেটারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার উত্‌পলকুমার দাঁ-র হস্তক্ষেপে পুলিশ দেহ উদ্ধার করলেও গভীর রাত পর্যন্ত ওই ছাত্রীরা অধ্যক্ষা এবং কো-অর্ডিনেটরকে ঘেরাও করে রাখেন। রাত ১১টা নাগাদ পুলিশ ওই দু’জনকে থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবে তাঁরা অসুস্থ বোধ করায় বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়।

জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা জানান, এই ঘটনার পরে কলেজের কো-অর্ডিনেটর রীতা মাইতি, অধ্যক্ষা কবিতা কুণ্ডু, তিন শিক্ষিকা মধুশ্রী রায়, সুমনা ভুঁইয়া ও সুস্মিতা সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে ৩০৬ ধারায় মামলা রজু হয়েছে। তবে কবিতাদেবী, রীতাদেবী ও সুস্মিতাদেবী অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁদের বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাই পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি।

গোটা ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে মুখে কালো কাপড় বেঁধে নার্সিং কলেজের ছাত্রীরা মিছিল করেন। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে হবে, তাঁদের সাসপেন্ড করতে হবে। নার্সিং কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের প্রতি অমানবিক ব্যবহারের অভিযোগও তোলেন তাঁরা। মেডিক্যালের অধ্যক্ষা মঞ্জুশ্রী রায়ের ঘরের সামনেও বিক্ষোভ দেখান ও স্মারকলিপি জমা দেন। বিক্ষোভ দেখানো হয় মেডিক্যালের সুপারের ঘরের সামনেও। তাঁদের সঙ্গে এই মিছিলে যোগ দেন এমবিবিএস ছাত্রছাত্রীরাও। নার্সিং ছাত্রীরা মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্ট কাল ক্লাস না করার ডাক দিয়েছেন।

মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষা মঞ্জুশ্রী রায় বলেন, “আমার কাছে নার্সিং ছাত্রীরা অনেকগুলি অভিযোগ করেছেন। আমি ওঁদের বলেছি, ঠান্ডা মাথায় ঠিক কী কী সমস্যা রয়েছে তা ভেবে চার-পাঁচ দিন পরে জানাতে। তবে এই মৃত্যুর ঘটনায় উত্‌পলকুমার দাঁ, গদাধর মিত্র ও জোনাকি দাস সরকার, এই তিন সিনিয়র শিক্ষককে নিয়ে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গড়েছি। তাঁরা তদন্ত করে আমাকে রিপোর্ট দেবেন।”

এ দিনই আবার এসইউসি-র ‘হাসপাতাল ও জনস্বাস্থ্য রক্ষা’ সংগঠনের পক্ষ থেকে হাসপাতালের সুপারের কাছে ঘটনায় দোষীদের সাজা, ছাত্রীদের উপরে মানসিক নির্যাতন বন্ধ, নার্সিং কলেজ ও হস্টেলে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরানোর দাবিতে স্মরাকলিপি দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE