শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়ে গিয়েছে মাস ছয়েক আগে। কিন্তু দুর্গাপুর মহকুমার হিন্দি ও ঊর্দু মাধ্যম স্কুলগুলিতে এখনও এসে পৌঁছায়নি সব বিষয়ের পাঠ্যপুস্তক। তার ফলে পঠন-পাঠন ব্যাহত হচ্ছে বলে পড়ুয়া ও অভিভাবকদের অভিযোগ। ইতিমধ্যে বিনা পাঠ্যপুস্তকেই দু’টি ইউনিট টেস্ট দিতে বাধ্য হয়েছে বহু পড়ুয়া। বিপাকে পড়ছেন শিক্ষকেরাও।
নিয়ম মতো এ বার শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়ে গিয়েছে ২ জানুয়ারি। তার পরে ছ’মাস পার। আর মাস ছয়েক পরে ফাইনাল পরীক্ষা। দুর্গাপুর মহকুমার হিন্দি ও ঊর্দু মাধ্যম স্কুলগুলিতে খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, কোথাও সামান্য কয়েক জন পড়ুয়ার হাতে পৌঁছেছে পাঠ্যপুস্তক। কোথাও সব বিষয়ের বই আসেনি। কোনও কোনও স্কুলে আবার কোনও বিষয়েরই বই আসেনি। শুধুমাত্র মাত্র ক্লাসনোট ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় পরীক্ষায় ইউনিট টেস্টে বসেছে পড়ুয়ারা।
অভিভাবকদের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে এই সমস্যা। এক অভিভাবক সুনীল যাদব বলেন, “আমার ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এখনও হাতে প্রথম পত্রেরই (হিন্দি) বই নেই। কী ভাবে যে সামলাবে জানি না!” তিনি আরও জানান, আগে বছরে দু’বার পরীক্ষা হত। তাই দেরিতে বই এলেও তেমন সমস্যা হত না। কিন্তু এখন চার বার পরীক্ষা। বাড়িতে পড়াশোনার জন্য হাতে পাঠ্যপুস্তক থাকা খুবই জরুরি। কিন্তু, শিক্ষাবর্ষের মাঝপথেও হাতে বই না আসায় পরীক্ষায় কী করবে পড়ুয়ারা, তা নিয়ে সংশয়ে সুনীলবাবুর মতো অনেক অভিভাবকই।
সরকারি নিয়মে পঞ্চম শ্রেণিতে হিন্দি বা ঊর্দু, গণিত, ইংরেজি, পরিবেশ বিজ্ঞান, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে হিন্দি বা ঊর্দু, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান-পরিবেশ, ইতিহাস ও ভূগোল বই দেওয়ার কথা। দুর্গাপুরের ভারতী হিন্দি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ধর্মেন্দ্র প্রসাদ জানান, ষষ্ঠ, সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণির প্রথম পত্র, গণিত ও বিজ্ঞান-পরিবেশ বিষয়ের বই আসেনি। নেতাজি হিন্দি হাইস্কুলেও একই সমস্যা। সেখানেও প্রথম পত্র-সহ অনেক বই এখনও স্কুলের হাতে আসেনি। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, মাত্র ১০ শতাংশ পড়ুয়া এখনও পর্যন্ত বই পেয়েছে। পানাগড় হিন্দি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুরজ প্রসাদ জানান, সব বিষয়ের বই এসেছে। কিন্তু তা মোট পড়ুয়ার ৭৫ শতাংশের পাওয়ার মতো। অর্থাৎ, এখনও ২৫ শতাংশ পড়ুয়া বই পায়নি। অন্ডালের ঊর্দু মাধ্যম স্কুল ‘ইকবাল অ্যাকাডেমি’তে পঞ্চম শ্রেণির বই এলেও সপ্তম শ্রেণির ঊর্দু, গণিত ও ইংরেজি বই আসেনি। এ ছাড়া ষষ্ঠ, অষ্টম, নবম শ্রেণিতেও বেশ কিছু বিষয়ের বই আসেনি। এর ফলে পঠনপাঠন চালাতে বেজায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকেরা। দুর্গাপুর মহকুমা এবিটিএ-র সম্পাদক তন্ময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা এই সমস্যা নিয়ে ইতিমধ্যে স্কুল পরিদর্শকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি।”
পড়ুয়ারা ঠিক কবে পাঠ্যপুস্তক হাতে পাবে, সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করে তা জানা যায়নি। অসুস্থতার জন্য কথা বলতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত দুর্গাপুরের সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক সুকুমার সেন। তবে সর্বশিক্ষা মিশনের বর্ধমান জেলা কো-অর্ডিনেটর তাহের আলি শেখ জানান, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক দিয়ে থাকে এই দফতর। স্কুল পরিদর্শকের কাছ থেকে পাওয়া হিসেব মতো বই আগেই পাঠানো হয়েছে বলে তাঁর দাবি। নতুন করে বই চেয়ে আবেদন করলে তা পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy