রুগন দশা কাটতে চলেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থা ইসিএল বিআইএফআর থেকে বেরিয়া আসার রাস্তা করে ফেলেছে বলে দাবি সংস্থার কর্তাদের। জুনের মধ্যে তা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হবে বলে ইসিএল কর্তৃপক্ষ জানান। এ জন্য সংস্থার কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও আধুনিকীকরণের মাধ্যমেই সংস্থা দুঃসময় কাটিয়ে উঠেছে, দাবি ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়ের।
ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯-১০ আর্থিক বর্ষ থেকেই সংস্থাটি লাগাতার লাভের মুখ দেখছে. কিন্তু সম্পত্তির তুলনায় দায়ের পরিমাণ কমানো যাচ্ছিল না। ফলে বিআইএফআর থেকে বেরোনো যাচ্ছিল না। যে ভাবেই হোক ২০১৬ সালের মধ্যে সংস্থাকে বিআইএফআর মুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেন কর্তৃপক্ষ। সংস্থার সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রিবাবু বলেন, “আমরা দু’বছর আগেই এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছি। বিআইএফআর থেকে বেরিয়ে আসার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।” প্রায় তিন দশক ধরে ইসিএল একটি ‘অলাভজনক সংস্থা’ হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন সেই তকমা ঘুচে যাওয়ায় খুশি সংস্থার শ্রমিক-কর্মী থেকে আধিকারিকেরা। তাঁরা মনে করেন, এত দিন বহু পরিশ্রম করে এই সাফল্য এসেছে। কিন্তু সংস্থাটি এই জায়গায় দাঁড় করিয়ে রাখতে এ বার লড়াইটা আরও কঠিন হবে।
কী ভাবে এই ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হল? নীলাদ্রিবাবু জানান, কী ভাবে এর পুনরুজ্জীবন করে সংস্থাকে লাভজনক করা যাবে, সম্পত্তির তুলনায় দায়ের পরিমাণ কমানো যাবেতা ঠিক করতে ইসিএলকে ১৯৯৯ সালে বিআইএফআরে পাঠানো হয়। একের পর এক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়া চালিয়ে শেষ পর্যন্ত সাফল্য এসেছে। নীলাদ্রিবাবু আরও জানান, ব্যয় সংকোচনের পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ খনিগুলিতে কারিগরি উন্নয়ন করে কয়লা উত্তোলনের ব্যয় কমানো হয়েছে। তিনটি বড় খনি ঝাঁঝরা, বাঁকোলা ও সরপিতে ‘কন্টিনিউয়াস মাইনিং’ পদ্ধতি চালু করে কয়লা তোলার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। একাধিক খনিতে আরও আধুনিক ‘লং ওয়াল’ পদ্ধিতে কয়লা তোলার ব্যবস্থা পাকা করা হয়েছে। ফলে, উৎপাদন খরচ অন্তত ৭০ শতাংশ কমবে। নীলাদ্রিবাবু বলেন, “এক মাসের মধ্যেই এই পদ্ধতি চালু হবে।” তিনি জানিয়েছেন, কয়লা মন্ত্রক ইসিএলকে ১৭টি খোলামুখ খনিতে ঠিকাদার সংস্থা দিয়ে কয়লা তোলার (আউটসোর্সিং) অনুমতি দিয়েছে। ইসিএলের আওতায় এমন অনেক খনি আছে যেখানে সংস্থা নিজে কয়লা তুললে আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হবে। সেগুলিতে ঠিকাদার সংস্থার মাধ্যমে কয়লা তোলায় অনেক আয় বেড়েছে বলে তাঁর দাবি। এ ছাড়া কয়লা বিক্রির ক্ষেত্রে ই-অকসন পদ্ধতি চালু হওয়ায় সংস্থা নিজের মতো কয়লার দাম ঠিক করে আগ্রহী ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পেরেছে। এ সব কারণেই ইসিএল ০৯-১০ সালে ৩৩ কোটি, ১০-১১ সালে ১০৭ কোটি, ১১-১২ সালে ৯৬২ কোটি, ১২-১৩ সালে ১৬৫৫ কোটি এবং ১৩-১৪ সালে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা লাভ করেছে। নীলাদ্রিবাবু জানান, এর ফলে সংস্থার সম্পত্তির তুলনায় দায়ের পরিমাণও কমেছে।
তবে গত বারের তুলনায় এ বার লাভের অঙ্ক ১৬৫৫ কোটি থেকে এক ধাক্কায় ৯০০ কোটি টাকায় নেমে যাওয়ায় সংস্থার কর্তারা খানিকটা চিন্তায়। ইসিএল কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা, কয়লা মন্ত্রক কয়লার দাম কমিয়েছে। এ ছাড়াও অবৈধ খনন ও কয়লা চুরি বড় কারণ বলে মনে করেন সংস্থার অনেক কর্তা। রাজ্য প্রশাসন অবশ্য কয়লা চুরি চলছে এ কথা মানতে নারাজ। দিন কয়েক আগে এই খনি-শিল্পাঞ্চলে ভোটের প্রচারে এসে জনসভায় খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, বর্তমান রাজ্য সরকার অবৈধ খনন বন্ধ করেছে। ইসিএলের সাফল্যের পিছনে এটিও একটি কারণ বলে মনে করেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy