কেউ মনে করছেন, বৈষম্য দূর হয়ে উন্নয়ন হবে এক ধারায়। কারও আবার মত, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষজনের পক্ষে পরিষেবা পাওয়া মুশকিল হবে। রাজ্য সরকারের আসানসোল পুরসভার পরিধি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে এমনই নানা মত দিলেন শহরবাসী থেকে রাজনৈতিক দলগুলি।
সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, উন্নয়নে গতি আনতে রাজ্যে সাতটি নতুন কর্পোরেশন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া ও কুলটি পুরসভাকে আসানসোলের মধ্যে এনে একটি কর্পোরেশন গঠিত হবে বলে জানানো হয়। অর্থাৎ, আসানসোলের ৫০টি, কুলটির ৩৫টি, রানিগঞ্জের ২৩টি ও জামুড়িয়ার ২২টি ওয়ার্ড নিয়ে মোট ১৩০ ওয়ার্ডের এই কর্পোরেশন তৈরি হবে। আসানসোল ও কুলটি পুরসভার বোর্ডের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। কিছু দিনের মধ্যে সেখানে ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের পরে আপাতত সেই ভোট হচ্ছে না বলেই রাজনৈতিক দলগুলি মনে করছে।
নানা রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রশাসনের কর্তাদের মতে, পরিকাঠামোর উন্নয়ন করা গেলে এই সিদ্ধান্তের সঠিক রূপায়ণ সম্ভব। তবে মফস্বল শহরের জন্য এই সিদ্ধান্ত মোটেই সুখকর হবে না বলে সিপিএম পরিচালিত রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়া পুরসভার দুই পুরপ্রধানের দাবি। এই দুই পুরসভাতেই আগামী বছর ভোট হওয়ার কথা। রানিগঞ্জের পুরপ্রধান অনুপ মিত্র বলেন, “১৮৭৬ সাল থেকে চলা এই পুরসভা ভেঙে দেওয়ার কোনও যুক্তি নেই। আমার মনে হয়, সাধারণ নাগরিকেরা এতে সম্পূর্ণ পরিষেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন।” তাঁর দাবি, পুরসভায় ছোটখাট কাজের জন্য ১৭ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে যদি আসানসোলে যেতে হয়, তা নিশ্চয় রানিগঞ্জের মানুষের কাছে খুব একটি সুবিধার হবে না। জামুড়িয়ার পুরপ্রধান ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, “অশনি সংকেত দেখছি। ছোট এই পুরসভার পরিকাঠামোর উন্নতি করতেই হিমসিম খাচ্ছি। জানি না এ বার কী হবে!”
তবে আসানসোলের মেয়র তৃণমূলের তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য সরকারের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটি খুবই ইতিবাচক পদক্ষেপ। একই ছাদের তলায় বিস্তীর্ণ এলাকার উন্নয়ন হবে। কোনও বৈষম্য থাকবে না।” তাঁর আরও দাবি, এর ফলে গোটা শিল্পাঞ্চলের উন্নয়নমূলক কাজ একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে পর্যবেক্ষণ করা যাবে। আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র সিপিএমের তাপস রায় অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, “সরকার আসলেকী করতে চাইছে, তা আগে দেখি। তার পরে মন্তব্য করব।” কুলটির পুরপ্রধান তথা তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয় ভাল কিছু বুঝেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।” আসানসোলের কংগ্রেস নেতা চণ্ডী চট্টোপাধ্যায়েরও মত, “এই উদ্যোগ কার্যকর হলে হয়তো কিছু ভালই হবে।” বিজেপি-র জেলা সভাপতি নির্মল কর্মকার অবশ্য এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাবতে নারাজ। তাঁর দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী যা-ই করুন, সে নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। তবে এ বার পুরসভা বিজেপি দখল করবে।”
রাজ্যের এই সিদ্ধান্তের ফল নিয়ে সন্দিহান ব্যবসায়ী মহলের একাংশও। ফেডারেশন অব সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতান যেমন বলেন, “এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাতে পারছি না। এলাকার শিল্প ও ব্যবসায়ী মহলকে ছোটখাট প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে হয়। এখন এই সব কাজে রানিগঞ্জ থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে আসানসোলে যেতে হয়, সমস্যা বাড়বে।”
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রশাসনের নানা কর্তা। তাঁদের মতে, কলকাতায় যেমন একাধিক বরো অফিস স্বতন্ত্র ভাবে কাজ করে, এখানেও সে রকম পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পারলে কোনও সমস্যা থাকবে না। নাগরিকেরা বরো অফিসগুলিতে গিয়েই নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে পারবেন। ওই আধিকারিকেরা আরও মনে করেন, কুলটি, রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়া পুরসভার অফিসগুলিকেই এক একটি স্বতন্ত্র বরো অফিস করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ওই সব পুরসভার মানুষ আগের মতোই নিজেদের এলাকায় নাগরিক পরিষেবা পেয়ে যাবেন। প্রশাসনের অনেক কর্তারও দাবি, একটি বড় পুরসভা হলে সরকারের আর্থিক অনুমোদন বেশি মিলবে। কেন্দ্রের অনুদানও বেশি পাওয়া যাবে। সব এলাকায় বৈষম্যহীন ভাবে কাজ হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy