একই জমির জন্য কর দিতে হচ্ছে দু’বার।
নিয়ম অনুযায়ী, কোনও জমির চরিত্র বদল করার জন্য ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরে কর দিতে হয়। কিন্তু বর্তমানে জমির চরিত্র বদলের জন্য আরও এক দফা কর নিচ্ছে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ)। ফলে একই জমির ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য দু’জায়গায় কর দিতে হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে সময়।
ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষিজমি কিংবা পতিত জমিকে বাস্তু বা ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহারের জন্য প্রথমে জমির চরিত্র পরিবর্তন করতে হয়। শহর এলাকায় কোনও জমিকে বাস্তুজমিতে পরিবর্তিত করার জন্য শতক পিছু ৫০ টাকা হারে কর দিতে হয়। আগে ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরে এই কর জমা দিলেই জমির চরিত্র বদলের অনুমোদন মিলত। রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে পরিস্থিতি বদলে যায়। এ বার এডিডিএ তার এলাকায় জমির চরিত্র পরিবর্তনের জন্য কর চাপাতে শুরু করে। এডিডিএ জানায়, তাদের কাছে কর জমা দেওয়ার পরেই মিলবে জমির ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্র। এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, শহর এলাকায় কোনও জমিকে বাস্তু জমিতে বদল করার জন্য শতক পিছু প্রায় ৮০০ টাকা নেওয়া হয়। তবে বাণিজ্যিক কারণে জমি ব্যবহার করতে চাইলে করের হার আরও বেশি। এডিডিএ-র এক কর্তা বলেন, “ওয়েস্ট বেঙ্গল টাউন অ্যান্ড কান্ট্রি প্ল্যানিং অ্যাক্ট অনুযায়ী এই কর নেওয়া হয়।”
এডিডিএ এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, দু’দফায় ছাড়পত্র নিতে হবে বলে কৃষিজমি কিংবা পতিত জমিতে বাড়ি তৈরি করতে গেলে রীতিমতো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। প্রথমে ভূমি রাজস্ব দফতর ও পরে এডিডিএ থেকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র পাওয়ার পরেই শুরু করা যাচ্ছে নির্মাণকাজ। দুর্গাপুরের সগড়ভাঙ্গার বাসিন্দা ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “এডিডিএ’কে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হচ্ছে। তার উপর কয়েক মাস লাগছে ‘নো অবজেকশনে’র শংসাপত্র পেতে। রাজ্য সরকার যখন নানা জায়গায় এক জানালা নীতি নিয়েছে তখন এডিডিএ পিছনে হাঁটছে।”
বিধাননগরের বাসিন্দা দেবব্রত দাসের দাবি, “এডিডিএ-র যদি তহবিল বাড়ানোই উদ্দেশ্য হয় তাহলে বাণিজ্যিক কারণে নেওয়া জমির জন্য কর নিক। কিন্তু ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য নেওয়া জমিতে কর ছাড় দিক এডিডিএ।” তাঁরা আরও জানান, দুই দফতর থেকে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে লেগে যাচ্ছে বেশ কয়েক মাস। ফলে নির্মাণ কাজও পিছিয়ে যাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে নির্মাণের খরচ। ফলে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষজন। দুই দফতর থেকে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে লেগে যাচ্ছে কয়েক মাস। বেড়ে যাচ্ছে নির্মাণের খরচ।
দুর্গাপুরের প্রাক্তন বিধায়ক ও এডিডিএ-র প্রাক্তন বোর্ড সদস্য বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী জানান, সাধারণ মানুষের কথা ভেবেই বাম আমলে দুই দফতর থেকে আলাদা করে কর নেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করা হয়। তিনি বলেন, “দুই দফতরের কাজ মানেই বেশি সময় লাগবে। তাই আমাদের সময় এডিডিএ কর নিত না।” তাঁর প্রশ্ন, “একই কাজের জন্য দু’টি সরকারি দফতর কেন আলাদা করে কর নেবে?”
এডিডিএ-র বর্তমান চেয়ারম্যান তথা দুর্গাপুরের তৃণমূল বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “ওয়েস্ট বেঙ্গল টাউন অ্যান্ড কান্ট্রি প্ল্যানিং অ্যাক্ট অনুযায়ী এডিডিএ এলাকায় জমির চরিত্র পরিবর্তন করার জন্য এডিডিএ থেকে নো অবজেকশন শংসাপত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক হয়েছে। সরকারি আইন মেনেই এডিডিএ কর নিচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy