Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

এলাকায় সন্ত্রাস ছড়াতে অস্ত্র মজুতের অভিযোগ, ধৃত ডাবলু

বাম আমলে মঙ্গলকোটের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই ছিল তাঁর মুঠোয়। আশপাশের কেতুগ্রাম, নানুর, ভাতারের নানা এলাকাতেও যথেষ্টই প্রভাব ছিল তাঁর। একসময়ে মঙ্গলকোটের বহু এলাকায় তাঁর দাপটে পতাকা টাঙানো যেত না বলেও অভিযোগ ছিল বিরোধীদের। সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগে সিপিএমের সেই দাপুটে নেতা ডাবলু আনসারিকে গ্রেফতার করল পুলিশ।

ডাবলুর বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। ছবি তুলেছেন উদিত সিংহ।

ডাবলুর বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। ছবি তুলেছেন উদিত সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান ও কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৪ ০০:৫০
Share: Save:

বাম আমলে মঙ্গলকোটের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই ছিল তাঁর মুঠোয়। আশপাশের কেতুগ্রাম, নানুর, ভাতারের নানা এলাকাতেও যথেষ্টই প্রভাব ছিল তাঁর। একসময়ে মঙ্গলকোটের বহু এলাকায় তাঁর দাপটে পতাকা টাঙানো যেত না বলেও অভিযোগ ছিল বিরোধীদের। সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগে সিপিএমের সেই দাপুটে নেতা ডাবলু আনসারিকে গ্রেফতার করল পুলিশ।

রবিবার ভোরে মুর্শিদাবাদের কান্দির একটি বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, জানুয়ারি মাসে টোটন শেখ নামে কংগ্রসের এক কর্মীকে খুন, মঙ্গলকোটের পিন্ডিরা গ্রামে বোমাবাজি করা, মঙ্গলকোট পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শান্ত সরকারকে ফোনে হুমকি দেওয়া ইত্যাদি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ডাবলু আনসারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “মঙ্গলকোট জুড়ে ফের গোলমাল পাকানোর ছক কষছিলেন ডাবলু।” এসপি জানিয়েছেন, ডাবলুর বাড়ি থেকে ২০ রাউন্ড গুলি, তিনটি রিভালবার, তিনটি পাইপগান, দুটি নাইনএমএম পিস্তল, সকেট বোমা তৈরি করার পাইপ বা যন্ত্রাংশ, তিন কিলো ৪০০ গ্রাম বোমা তৈরির মশলা ও ৮২টি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ডাবলুর ব্যবহার করা গাড়িটিও।

গত বিধানসভা ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনের চাপে পুলিশ গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা অভিযুক্তদের ধরতে শুরু করলে গ্রেফতার হন ডাবলুও। পরে তত্‌কালীন পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীরের নির্দেশে মঙ্গলকোট থানার ওসি তীর্থেন্দু মুখোপাধ্যায় বেঙ্গালুরু থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেন। তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া তিনটি খুনের মামলার মধ্যে দুটির বিচার শুরু হয়েছে কাটোয়া আদালতে। পরে জামিনে ছাড়া পেলেও তৃণমূলের জমানায় মঙ্গলকোটে আর ঢুকতে পারেননি ডাবলু।

রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে এসপি দাবি করেন, গত ১৭ জানুয়ারি মঙ্গলকোটে গুলিতে খুন হন কংগ্রেস কর্মী টোটন শেখ। তারপরে মে মাসে মঙ্গলকোটে এক ব্যক্তিকে বোমা মেরে খুনের চেষ্টা করা হয়। পিন্ডিরা গ্রামে গত ৩ মে কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে, আহত হন তিন ব্যক্তি। এই ঘটনাগুলিতে ডাবলু ওরফে আবু বাসের আনসারি জড়িত বলে খবর পায় পুলিশ। তারপরেই তাঁকে গ্রেফতারের চেষ্টা শুরু হয়। কিন্তু পুলিশ ওই সিপিএম নেতার হদিশ পাচ্ছিল না। পরে ৩ জুলাই ডাবলু মঙ্গলকোট থেকে বর্ধমানের খোসবাগানে আসা দুই ব্যক্তিকে খুনের নির্দেশ দিয়েছে বলে জানতে পারে পুলিশ। পুলিশ সুপার বলেন, “সঙ্গেসঙ্গে ওই দুই ব্যক্তিকে সনাক্ত করে নিরাপদে পৌঁছে দিয়েছিলাম আমরা।” ডাবলুকে জেরা করে এমন অনেক ঘটনার কথা জানা গিয়েছে বলেও পুলিশের দাবি।

কী ভাবে গ্রেফতার হলেন ডাবলু? এসপি জানান, ডাবলুকে গ্রেফতার করার জন্য আমরা একটি দল তৈরি করেছিলাম। তাতে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ), এসডিপিও কাটোয়া, বর্ধমান থানার আইসি আব্দুল গফ্ফর ও মঙ্গলকোট থানার ওসি সঞ্জয় চক্রবর্তী। খবর মেলে ডাবলু মুর্শিদাবাদের কান্দির দোহারিয়াতে বাড়ি ভাড়া করে রয়েছেন। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীরের নির্দেশে কান্দি থানা বর্ধমান জেলা পুলিশের দলটির সঙ্গে অভিযান চালায়। সেই অভিযানেই ধরা পড়েন ডাবলু।

বেশ কিছুদিন আগে কাটোয়া আদালতে এসে বিজেপির জেলা সভাপতি অলোকতরঙ্গ গোস্বামীর সামনেই ডাবলু জানিয়েছিলেন তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে চান। আবেদন জানিয়ে দলের নেতৃত্বকে চিঠিও পাঠান। এমনকী ২৯ জুন মঙ্গলকোটে বিজেপির সভায় ডাবলু আনসারি যোগ দিতে পারেন বলেও জল্পনা চলছিল। তবে বিষয়টি বিবেচনাধীন ছিল বলে জানান বিজেপি-র জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি রাজীব ভৌমিক। পরের দিনই (৩০ জুন) মঙ্গলকোটে সভা করেন তৃণমূলের সর্ববারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। বিজেপি ডাবলুকে দলে টেনে এলাকায় সন্ত্রাস ছড়াতে চায়ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর মন্তব্য ছিল, “এখানে এক জন আছেন ডাবলু আনসারি। কে তিনি? ডাবলু আনসারির নেতৃত্বে মঙ্গলকোটে এক সময়ে ১১ জন মানুষ খুন হয়েছেন। তিনি বিজেপি-তে যোগ দিলেন। মনে রাখতে হবে, খুনির কোনও জাত নেই। মঙ্গলকোটে আজ যখন শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তখন তা বিঘ্নিত করার চেষ্টা হচ্ছে।”

সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক অমল হালদার অবশ্য বলেন, “ডাবলুর সঙ্গে গত তিন বছর ধরে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। তবে শুনেছিলাম উনি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন।”

তবে যে কংগ্রেস কর্মী খুনে অভিযুক্ত হিসেবে ডাবলুকে ধরা হয়েছে, সেই ঘটনার মূল সাক্ষী সুরত শেখ এফআইআরে তিন জনের নাম জানান। তারা হলেন, সাদ্দাম শেখ, রাজা ও টাইগার। কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যয় বলেন, “ওই ঘটনায় ডাবলুর নাম ছিল না। পুলিশ কেন ওকে ধরল বুঝতে পারছি না।” পিণ্ডিরায় বাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনাটিও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলে স্থানীয় সূত্রের খবর।

এ দিন রাজীববাবু বলেন, “চক্রান্ত করে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে ডাবলুকে। ওঁর পরিবারের লোকেরাও জানেন না গ্রেফতারের কারণ কী। আমরা ওর পাশে আছি।” তবে তাঁর প্রশ্ন, একদিকে যখন চক্রান্ত করে ডাবলুকে ধরা হচ্ছে, তখন একাধিক খুনে অভিযুক্ত তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী আজাদ মুন্সি কিংবা জঙ্গল শেখরা প্রকাশ্যে কী ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE