Advertisement
E-Paper

কোর্টের নির্দেশ, তবু অনীহা বাবা-মাকে দেখভালে

বৃদ্ধ বাবা-মা যেন বড় বোঝা। কখনও সন্তানের থেকে শীতবস্ত্র পেতে আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়। কোথাও আবার এক আদালত বাবা-মাকে সামান্য মাসোহারা দেওয়ার নির্দেশ দিলে তার বিরুদ্ধে অন্য আদালতে যায় ছেলে।

রানা সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২৭

বৃদ্ধ বাবা-মা যেন বড় বোঝা।

কখনও সন্তানের থেকে শীতবস্ত্র পেতে আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়। কোথাও আবার এক আদালত বাবা-মাকে সামান্য মাসোহারা দেওয়ার নির্দেশ দিলে তার বিরুদ্ধে অন্য আদালতে যায় ছেলে।

আদালত নির্দেশ দেওয়ার পরেও সন্তানেরা বাবা-মায়ের দেখভাল করছেন না, এমন অভিযোগ বহু। সম্প্রতি বর্ধমানেই এমন দু’টি ঘটনা সামনে এসেছে।

বর্ধমান শহরের জগতবেড়ের ৬৫ বছরের আনু মণ্ডল সম্প্রতি পুলিশে অভিযোগ করেন, ছেলে বিশ্বজিৎ মণ্ডল ও তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাঁকে বাড়ির মালিকানা লিখে দিতে চাপ দিচ্ছিলেন। রাজি না হওয়ায় গত ২৪ অগস্ট তাঁর স্বামী, ৮০ বছরের মদন মণ্ডলকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। ছেলের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করায় মেয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন আনুদেবীরা। পরে বর্ধমান সিজেএম আদালতে ছেলে, ছেলের বৌ ও শ্বশুরবাড়ির কয়েক জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

আনুদেবী জানান, এর পরে তাঁর ছেলে নিজেদের বাড়িতে তালা দিয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকছেন। তিনি ৩ নভেম্বর গার্হস্থ্য হিংসা আইনের ধারায় ছেলে-সহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। বাড়িতে ঢুকতে না পারায় শীতবস্ত্রের অভাবে তিনি ও তাঁর স্বামী কষ্ট পাচ্ছেন। আনুদেবীর আইনজীবী শান্তিরঞ্জন হাজরা বলেন, “আদালত আমার মক্কেলের ছেলেকে অবিলম্বে বাবা-মায়ের শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা ও বাড়িতে ঢুকতে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কেন তাঁদের বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতেও বলেছে। কিন্তু তিনি নির্দেশ মানেননি।”

আনুদেবীর ছেলের অবশ্য দাবি, তাঁর স্ত্রী ইন্দ্রাণীদেবী সেপ্টেম্বরে বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের মামলা করেছেন। তার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি আদালতের রায় মানবেন না। আনুদেবীর প্রতিবেশী দেবু নন্দী, বাবলু ঘোষেরা বলেন, “বিশ্বজিৎকে আমরা বারবার বুঝিয়েছি, এ ভাবে বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া অপরাধ। কিন্তু তিনি তা শোনেননি। উল্টে, ওঁদের জব্দ করতে প্যাঁচ কষছেন। আমরা চাই, আদালত উপযুক্ত সাজা দিক।”

অপর ঘটনায়, ২০১১ সালের জুলাইয়ে ছেলে রবিয়েল মল্লিকের বিরুদ্ধে বর্ধমানের সিজেএম আদালতের দারস্থ হন খণ্ডঘোষের গোপালপুর গ্রামের ৬৮ বছরের হেবিবা বিবি। তিনি জানান, একমাত্র ছেলে রবিয়েল এখন পঞ্চায়েতের ১০০ দিনের প্রকল্পের সুপারভাইজার। সে টিউশন করেও মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা রোজগার করে। তাঁদের ১২ বিঘা জমি রয়েছে। ওই বৃদ্ধা অভিযোগ করেন, তাঁকে দিয়ে রবিয়েল সমস্ত সম্পত্তি লিখিয়ে নেয়। জমির কিছুটা ও তাঁর পাঁচ ভরি সোনা বিক্রি করে নিজের জন্য পাকা বাড়ি তৈরি করার পরে সে বৃদ্ধা মা ও অবিবাহিতা বোনকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বৃদ্ধ বাবা হাসেম মল্লিককে বাড়িতে থাকতে দিলেও তাঁর চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা করেনি। বিনা চিকিৎসায় হাসেমের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ হেবিবার। তিনি জানান, এখন ভাইয়ের একটি পরিত্যক্ত গোয়ালঘরে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। ছেলে যাতে মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে দেয়, আদালতে সেই আবেদন জানান তিনি।

২০১২ সালের অক্টোবরে আদালত রবিয়েলকে নির্দেশ দেয়, মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মাকে মাসে দেড় হাজার টাকা করে দিতে হবে। রবিয়েল এই নির্দেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে মামলা করে। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে দ্বিতীয় সেশন জজ আদালত রবিয়েলের আবেদন বাতিল করেন। এর পরে ১১ নভেম্বর আদালত মামলার চূড়ান্ত রায় দেয়, মাসের ১০ তারিখের মধ্যে মাকে ২০০০ টাকা করে দিতে হবে রবিয়েলকে। হেবিবার আইনজীবী সদন তা-র দাবি, “নির্দেশের পরে মাস ফুরোতে চলল, রবিয়েল মাকে কিছুই দেয়নি। তার বিরুদ্ধে দু’বার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। কিন্তু খণ্ডঘোষ থানা তা কার্যকর করেনি।” খণ্ডঘোষ থানা অবশ্য জানায়, এই রকম কোনও পরোয়ানা থানায় পৌঁছেছিল কি না, খতিয়ে দেখতে হবে।

বর্ধমনে বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “আদালত নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও অনেক সময়ে সন্তানেরা মানছেন না, এমন ঘটনা বারবার ঘটছে। শুধু আদালত এই সমস্যা মেটাতে পারবে না। পুলিশের উপযুক্ত পদক্ষেপ প্রয়োজন।” জেলার পুলিশকর্তাদের যদিও দাবি, আদালতের নির্দেশ পেলেই তা পালন করা হয়।

থানা-আদালত দৌড়োদৌড়ি করে অসহায়ই রয়ে যান বাবা-মায়েরা।

court rana sengupta bardwan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy