শহরের একটা বড় এলাকা পড়ে দুর্গাপুর থানার আওতায়। অথচ, সেই থানায় দু’মাস ধরে স্থায়ী ওসি নেই। সার্কেল ইনস্পেক্টর পদে যিনি আছেন, তিনিই বাড়তি দায়িত্ব হিসাবে ওসি-র পদ সামলাচ্ছেন। শুধু দুর্গাপুর থানার ওসি নয়, আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ফাঁকা পড়ে রয়েছে বহু পদই। ফলে, অপরাধমূলক কাজকর্ম বাড়ছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
শহরবাসীর অভিযোগ, একের পর এক অপরাধমূলক কাজকর্ম ঘটছে খনি-শিল্পাঞ্চলে। সম্প্রতি বাঁকুড়ার ঠিকাদারকে খুনের ঘটনায় সিটি সেন্টারের একটি স্পা-এর নাম জড়িয়ে গিয়েছে। বাঁকুড়ার পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জেনেছে, অভিযুক্তেরা সিটি সেন্টারের ভাড়া বাড়িতে বসেই অপরাধ ঘটিয়েছে। এরই মধ্যে আবার উপযুক্ত পরিচয়পত্র ছাড়া সিটি সেন্টার এলাকায় বাস করছিলেন বাংলাদেশের দুই মহিলা। পুলিশ সম্প্রতি তাঁদের গ্রেফতার করে কী ভাবে এ দেশে এসেছেন, সে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। জুনের মাঝামাঝি অর্থের বিনিয়মে চাকরি দেওয়ার নাম করে আন্তঃরাজ্য প্রতারণা চক্র ধরা পড়ে সেপকো এলাকা থেকে। সপ্তাহখানেক আগে কাদা রোড এলাকায় জাতীয় সড়কে কাজ করা শ্রমিকদের অপহরণের অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে শ্রমিকদের উদ্ধার করে পুলিশ। জুলাইয়ের শুরুতে সিটুর জাতীয় সড়ক অবরোধ কর্মসূচিতে বেশ কয়েক জন পুলিশ কর্মী প্রহৃত হন বলে অভিযোগ ওঠে। শহরবাসীর দাবি, এখনও পর্যন্ত দুর্গাপুর থানার পুলিশ এই সব ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পেরেছে। তবু এ ভাবে এলাকায় পরপর অপরাধ ঘটে চলায় মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন।
কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, জুনের শুরুতে দুর্গাপুর তৎকালীন ওসি বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। তখন থেকে এই শহরের তিন থানার দায়িত্বে থাকা সার্কেল ইনস্পেক্টর ওই থানার ওসি-র অতিরিক্ত দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, কমিশনারেটে এডিসিপি-র পদ ৬টি। কিন্তু রয়েছেন মোটে তিন জন। ১৩টি এসিপি পদের মধ্যে ৬টি ফাঁকা। আসানসোল এবং দুর্গাপুরের দু’টি মহিলা থানায় অধিকাংশ পুলিশকর্মীর পদই ফাঁকা। সব মিলিয়ে, প্রায় দেড় হাজার পদ খালি পড়ে রয়েছে বলে কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে।
এক পুলিশকর্তা জানান, লোকবলের বেশ ঘাটতি রয়েছে। তার মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার জন্য সাধ্য মতো চেষ্টা চালানো হচ্ছে। প্রায় ১৪০০ সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁরা অনেকটা সাহায্য করছেন। ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘শূন্য পদে নিয়োগ হচ্ছে না বলে তো আর হাত গুটিয়ে বসে থাকা যায় না। সীমিত ক্ষমতা নিয়েই লড়াই করতে হচ্ছে। তবে বাসিন্দাদের আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই।’’
পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, বেশ তাড়াহুড়োর মধ্যেই ২০১১ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেট চালু করে তৃণমূলের সরকার। শুরু থেকেই এই কমিশনারেটে লোকবলের অভাব রয়েছে। শুরুর দিকে তবু কিছু পদে নতুন নিয়োগ হয়েছিল। কিন্তু পরে অনেকে বদলি হয়ে গিয়েছেন। অনেকে পদোন্নতি পেয়েছেন। কিন্তু, সেই সব পদে আর নতুন নিয়োগ হয়নি। ফলে, দিন-দিন শূন্যপদের সংখ্যা বেড়েছে। সম্প্রতি কর্মী সংখ্যার এই বড়সড় ঘাটতির কথা জানিয়ে বিশদ রিপোর্ট নবান্নে পাঠানো হয়েছে বলে জানান কমিশনারেটের এক আধিকারিক। তাতে কাজ কিছু হয় কি না, সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন খনি-শিল্পাঞ্চলের পুলিশকর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy