গ্রামে থাকার জন্য জরিমানা চেয়েছে তৃণমূল সমর্থকেরা, কাটোয়া মহকুমাশাসকের কাছে এমনই অভিযোগ জানালেন ঔরাঙ্গবাদ গ্রামের সিপিএম কর্মী আসমত শেখ। তাঁর অভিযোগ, গ্রামে থাকার জন্য তাঁর কাছ থেকে জরিমানা হিসেবে এক লক্ষ টাকা চেয়েছে তৃণমূল সমর্থকেরা। আরও কয়েকটি পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে বলেও তাঁর দাবি।
মঙ্গলবার সকালে কাটোয়া ১ ব্লকের সুদপুর অঞ্চলের সিপিএম নেতৃত্ব মহকুমাশাসকের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করার জন্য অনুরোধ করেছেন। বিকালে মহকুমাশাসক (কাটোয়া) মৃদুল হালদার বলেন, “আমার কাছে অভিযোগ করেছেন ওই ব্যক্তি। কয়েকজন আমার সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানিয়েছেন। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।”
আসমত শেখের অভিযোগ, “বিধানসভা ভোটের পর থেকেই আমাদের পরিবারের উপর আক্রমণ করছে তৃণমূল। এখন গ্রামছাড়া করার পরিকল্পনা করছে। সে জন্যই প্রথমে ‘একঘরে’ করে রাখে। তাতেও বিশেষ সুবিধা করতে না পেরে এখন একলক্ষ টাকা জরিমানা করেছে।” তাঁর দাবি, “ওই টাকা দিতে না পারলে গ্রামছাড়া করার হুমকিও দিয়েছে তৃণমূল।” ওই অভিযোগে তিনি আরও জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে থাকা পরিবারগুলিকেও পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হবে।
এ দিন বিষয়টি জানাতে সিপিএমের কাটোয়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি মলয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মহকুমাশাসকের কাছে যায়। সেখানে মলয়বাবু অভিযোগ করেন, “তৃণমূলের দশ মাতব্বর স্থানীয় একটি ক্লাবে বসে আসমতদের উপস্থিতিতেই জরিমানা করে। আসমতরা ছ’দিন সময় নিয়েছিলেন। হাতে আর মাত্র দু’দিন রয়েছে। এর মধ্যে প্রশাসন এগিয়ে না এলে আসমতদের ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয়ে যাবে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জমি সংক্রান্ত বিবাদকে ঘিরেই তৃণমূলের সুদপুর অঞ্চল সভাপতির পরিবারের সঙ্গে আসমতদের গোলমাল বাধে। ওই জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করে কাটোয়া আদালত। কয়েক মাস আগে ওই বিষয়টি নিয়েই কাটোয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশের কাছে মুখ খোলার ‘অপরাধে’ গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা তথা অবসরপ্রাপ্ত কলকাতা পুলিশের কর্মী আনসার শেখকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে সিপিএমের ওই কর্মীদের বিরুদ্ধে। তবে ঘটনাটিকে থানা পর্যন্ত না নিয়ে গিয়ে গ্রামেই মীমাংসা করা হবে বলে জানান গ্রামের ‘মাতব্বর’রা। সেই সভায় আনসার শেখের চিকিৎসার খরচ বাবদ দেড় হাজার টাকা আসমতদের দেওয়ার নির্দেশ দেয় গ্রামের ‘মাতব্বর’রা। তবে আসমত সেই জরিমানার টাকা দিতে অস্বীকার করেন। গত ১০ জুন কাটোয়া থানার ওসিকে দেওয়া এক চিঠিতে আসমত অভিযোগ করেন, ওই দেড় হাজার টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাঁদের পরিবারকে ‘একঘরে’ করে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাঁদের সঙ্গে কেউ কথা বললেও ৫০০ টাকা করে জরিমানা করা হবে বলে হুমকি দিচ্ছে তৃণমূল। সুদপুর অঞ্চলের তৃণমূলের সভাপতি হাসান শেখ অবশ্য ‘একঘরে’ করে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, “চিকিৎসা বাবদ খরচ দেব না বলে জানায় ওরা। তারপর নিজেরাই গ্রামের মানুষের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যায়। পারিবারিক ও গ্রাম্য বিষয়টিতে রাজনীতির রং লাগাচ্ছে ওরা।”
তবে ১১ জুন সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ তৃণমূল নেতা রব্বানি শেখ ও তার দলবল এক লক্ষ টাকা না দিলে গ্রামে থাকা যাবে না বলে হুমকি দেয় বলে আসমত শেখের অভিযোগ। সিপিএমের কাটোয়া জোনাল কমিটির সম্পাদক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “তৃণমূলের মদতে এ একপ্রকার তালিবানি শাসন চলছে।”
তৃণমূল সূত্রে অবশ্য দাবি, কয়েকমাস আগে আসমতরা গ্রামের ভিতর অশান্তি করার জন্য স্থানীয় এক দু্ষ্কৃতীকে ‘সুপারি’ দিয়েছিল। সে কয়েকদিনের মধ্যে খুন হয়ে যাওয়ার পর কাটোয়া শহরের কেশিয়া থেকে একদল দুষ্কৃতীকে ভাড়া করে নিয়ে গিয়ে গ্রামের ভিতর হামলা চালায় আসমতরা। অভিযুক্ত রব্বানি শেখ এবং হাসান শেখ অবশ্য আসমতদের পরিবারকে ওই পরিমাণ টাকা জরিমানা করার কথা স্বীকার করেছেন। রব্বানি বলেন, “এ ঘটনা সম্পূর্ণ গ্রামের বিষয়। দু্ষ্কৃতীদের দিয়ে গ্রামে হামলা চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামের মানুষ একজোট হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আসমতরা সিপিএম আমলেও গ্রামে দাদাগিরি করেছে, এখনও দাদাগিরি করতে চাইছে। তবে গ্রামের মানুষ তা মেনে নিতে পারছে না।” তবে দুষ্কৃতীদের গ্রামে নিয়ে যাওয়ার কথা অস্বীকার করেছে আসমত।
এ দিকে বিষয়টিতে তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে বর্ধমান জেলা নেতৃত্ব। দলের জেলা কমিটির অন্যতম সহ-সভাপতি কাঞ্চন মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “এই ঘটনায় তৃণমূল কোনও ভাবেই যুক্ত নয়। ওই ঘটনা একেবারেই গ্রামের বিষয়। যেখানে সমস্ত রাজনৈতিক দলের লোকেরাই রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy