সিবিআইয়ে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণার অভিযোগ উঠল একটি সংস্থার বিরুদ্ধে। সোমবার দুর্গাপুর সিটিসেন্টার এলাকার এই ঘটনায় পুলিশ তিন জনকে আটক করেছে। চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য এই তিন জন যে সংস্থা খুলেছিল, সেই কার্যালয় থেকে কম্পিউটার ও বহু কাগজপত্রও বাজেয়াপ্ত হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
পুলিশ জানায়, সরোজকুমার শর্মা নামে এক ব্যক্তি লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, সিবিআইয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর পদে চাকরি করে দেওয়ার নাম করে ২০১২ সালে তার কাছ থেকে দেড় লক্ষ টাকা নেয় ওই সংস্থা। ভাস্কর চৌধুরী নামে এক আইপিএস অফিসারের নামে একটি নিয়োগপত্রও দেওয়া হয় তাঁকে। সরোজবাবুর অভিযোগ, এরপরে মেডিক্যাল টেস্টের জন্য তাঁকে পটনা যেতে বলা হয়। সেখানে এখটি লজ ভাড়া নিয়ে থাকার কথাও জানানো হয়। সেই মতো দু’দিন সেখানে ছিলেন সরোজবাবু। কিন্তু তারপরে তাঁকে ফোন করে ওই দুই ব্যক্তি ফিরে যেতে বলেন এবং পরে ডাকা হবে বলে জানান। এতে সন্দেহ হয় সরোজবাবুর। ওই সংস্থার কাছে টাকা ফেরত চান তিনি। কিন্তু ওই সংস্থা তাকে ক্রমাগত ঘোরাতে থাকে বলে তাঁর অভিযোগ। সরোজকুমার শর্মা বলেন, “চাকরির আশা ছেড়ে দিয়েছি। শুধু টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু ওরা কোনও পাত্তা দেয়নি।” তিনি আরও জানান, টাকা চাইলে প্রথমে দুর্গাপুজোর পরে দেওয়া হবে বলা হয়। তারপর কালিপুজো, ছটপুজো পেরিয়ে যাওয়ার পরেও কিছুই হয়নি।
সোমবার ফের ওই সংস্থার কাছে টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি করতে থাকেন সরোজবাবু। কিন্তু তারা পাত্তা না দেওয়ায় স্থানীয় কয়েকজনকে নিয়ে সংস্থার কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন তিনি। তাঁর দাবি, তখন ওই সংস্থার পক্ষ থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয় তাঁকে। ইতিমধ্যেই এ ধরণের প্রতারণার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসে পুলিশ। এসেই ওই সংস্থার ম্যানেজার-সহ আরও দুই কর্মীকে আটক করে। একটি কম্পিউটার ও বেশ কিছু কাগজপত্রও বাজেয়াপ্ত করা হয়। ম্যানেজার হরেন্দ্রকুমার মিশ্র অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, সরোজকুমারের কাছে থেকে তিনি দেড় লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন তিনি। আর জাল নিয়োগপত্র প্রসঙ্গে হরেন্দ্রকুমার মিশ্র বলেন, “এ বিষয়ে কিছু জানি না। জামেশদপুরের একটি সংস্থার মাধ্যমে এটি দেওয়া হয়েছে।”
তবে তল্লাশি চালিয়ে ওই কার্যালয় থেকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় চাকরির বিবরণ এবং বেতন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য লেখা একটি কাগজ পেয়েছে পুলিশ। এমনকী কোন পদে চাকরির জন্য কত টাকা লাগবে সেটাও ওই কাগজে লেখা রয়েছে। বিএসএনএল, রেল, ডাক বিভাগ থেকে বিভিন্ন বেসরকারি আইটি সংস্থা, ব্যঙ্কেও চাকরির নানা বিবরণ লেখা আছে ওই কাগজে। ঘরের পাশেই এ ধরনের চক্র চলায় বার এলাকাবাসীরাও। ২২ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সম্পাদক পরিমল অগস্ত্যি জানান, খবর পেয়েই তাঁরা ওই ব্যক্তির সঙ্গে ঘটনাস্থলে যান। সন্দেহ হওয়ায় পুলিশে খবর দেন। তিনি বলেন, “সিটি সেন্টারের বুকে এ ধরনের প্রতারণা চক্র চলছে জেনে আশ্চর্য লাগছে। পুলিশের কাছে বিভিন্ন চাকরি পাইয়ে দেওয়ার এ ধরনের সংস্থার উপর কড়া নজর রাখতে অনুরোধ করব।” পুলিশ জানিয়েছে, ওই তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।