চলছে দেবীর সাজ। নিজস্ব চিত্র।
রাজার ঘোড়ার মৃত্যুদিন আগাম জানিয়ে রাজজ্যোতিষী হয়েছিলেন হাটগোবিন্দপুরের হরিদেব বিদ্যানিধি। জ্যোতিষবিদ্যার নানা প্রমাণ দিয়ে রাজ অনুগ্রহে হাজার বিঘে জমিও পেয়েছিলেন তিনি। তখনই শুরু করেছিলেন দুর্গোৎসব। ২৬২ বছর ধরে হাটগোবিন্দপুরে চলছে সেই পুজো।
বিদ্যানিধি পরিবারের প্রবীন সদস্য শিবকুমার চক্রবর্তীর কাছ থেকে জানা গেল দুর্গাপুজো শুরুর গল্প-- এক বার বর্ধমানরাজ, সম্ভবত কীর্তিচন্দ কালনা যাচ্ছিলেন রাজকাজে। পথে হাটগোবিন্দপুরে আচমকা রাজার রথের একটি ঘোড়া শুয়ে পড়ল রাস্তায়। সান্ত্রীদের ভিড় দেখে এগিয়ে এলেন ওই গ্রামের বাসিন্দা হরিদেব বিদ্যানিধি। রাজাকে বললেন, মহারাজ, আপনার রথের ওই ঘোড়াটি গুরুতর অসুস্থ। কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হবে তার। ওই ঘোড়াকে দিয়ে রথ না টানানোই মঙ্গল। রাজা তো অবাক। উপযুক্ত দানাপানি, দলাইমালাইয়ে তাঁর ঘোড়ারা বরাবর তোয়াজে থাকে। সে দিন সকালেও দিব্যি ছিল। রাজা হরিদেববাবুরে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এ কথা বলছেন কী ভাবে? হরিদেব বিনীত ভাবে জানালেন, তিনি গুনেগেঁথে, নক্ষত্র বিচার করে জানতে পেরেছেন, ঘোড়াটি বাঁচবে না। ঘোড়াটিও কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢলে পড়ল কালঘুমে। সেই রাতটি বাধ্য হয়ে হাটগোবিন্দপুরেই কাটালেন রাজা। সকালে কালনার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে হরিদেবকে বর্ধমানে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে গেলেন। এরপর হরিদেববাবু বর্ধমানে গেলে তাঁকে রাজজ্যোতিষীর পদে অলঙ্কৃত করেন রাজা। রাজার অনুগ্রহে এক হাজার বিঘে জমি দানে পেয়ে দুর্গোৎসবের সূচনা করেন তিনি। সেই থেকে শাক্ত মতে পুজোর তিনটি দিন, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীতে বলি দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে ওই পরিবারে।
ওই পরিবারের আর এক সদস্য দেবদুলাল চক্রবর্তীর কথায়, “আমাদের দেবী চামুণ্ডারূপিনী, নরসিংহবাহিনী। তাঁর দুটি হাত বড়। অন্যগুলি ছোট। বড় হাত দুটির একটিতে ঢাল,অন্যটিতে ত্রিশূল। পদতলে অসুর। দেবী মূর্তিতে অবশ্য অন্যান্য দেবদেবীরাও রয়েছেন। নবমীতে কুমারিপুজোরও চল রয়েছে।”
প্রাচীন ওই পুজোকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন সন্ধ্যায় একটি পারিবারিক চক্র বসে। সেখানে পরিবারের সমস্ত পুরুষের কারণবারি পান করা নাকি অবশ্যকর্তব্য। তবে দিনদিন এই কারণপানের মাত্রা কমছে। তা শুধু একটি প্রথাতে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবারের অপর সদস্য শান্তনু চক্রবর্তী। আগে পুজো উপলক্ষে গ্রামে যাত্রাপালার আসরও বসত। অর্থনৈতিক কারণেই তাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে বর্তমানে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy