Advertisement
০৪ মে ২০২৪

জেলা পরিষদের কমিউনিটি রেডিও চালুর আর্জি খারিজ

কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের আপত্তিতে বর্ধমান জেলা পরিষদের কমিউনিটি রেডিও গড়ার উদ্যোগ আপাতত থমকে গেল। মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জেলা পরিষদকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দেশের কোনও জেলা পরিষদকেই কমিউনিটি রেডিও চালু করার অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। বিকল্প পন্থা হিসাবে কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে কমিউনিটি রেডিও চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৪ ০১:১১
Share: Save:

কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের আপত্তিতে বর্ধমান জেলা পরিষদের কমিউনিটি রেডিও গড়ার উদ্যোগ আপাতত থমকে গেল। মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জেলা পরিষদকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দেশের কোনও জেলা পরিষদকেই কমিউনিটি রেডিও চালু করার অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। বিকল্প পন্থা হিসাবে কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে কমিউনিটি রেডিও চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু।

কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক ২০০২ সালের ডিসেম্বর মাসে শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানগুলিকে কমিউনিটি রেডিও চালুর অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পরে বিভিন্ন অলাভজনক সামাজিক সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিকেও এর আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বর্তমানে এই কমিউনিটি রেডিও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এখানে সাধারণত যাঁরা শ্রোতা তাঁরাই অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠান হিসেবে পরিবেশিত হয় সামাজিক ও শিক্ষামূলক বিষয়। ফলে অনুষ্ঠানগুলি সহজেই এলাকাবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। এফএম ব্যান্ডে অনুষ্ঠান প্রচারিত হওয়ায় শ্রবণমানও উন্নত মানের হয়।

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বর্ধমান শহরে একটি কমিউনিটি স্টেশন চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জেলা পরিষদ। ঠিক হয়েছিল, বর্ধমানের শহরের আশপাশে দশ কিমি ব্যাসার্ধের পরিসীমা এলাকা জুড়ে শহর ও আশপাশের সাতটি ব্লক এলাকার বাসিন্দাদের জন্য নানা শিক্ষামূলক এবং সামাজিক অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে। এর মাধ্যমেই বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প সম্পর্কেও বাসিন্দাদের জানানো হবে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল, দিনে দশ ঘণ্টা অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত করা হবে। এই রেডিও তৈরির অনুমোদন চেয়ে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকে আবেদনপত্র পাঠানো হয়। কিন্তুু সম্প্রতি সেই আবেদনপত্র বাতিল হয়ে গিয়েছে। মন্ত্রকের তরফে চিঠি দিয়ে সেই বিষয়টি জেলা পরিষদে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, কোনও জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির মতো প্রতিষ্ঠানকে কমিউনিটি রেডিও চালুর অনুমোদন দেওয়ার উপায় বর্তমান আইনে নেই।

কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক সূত্রে খবর, বর্তমানে দেশে প্রায় ১৭০টি কমিউনিটি রেডিও স্টেশন চালু রয়েছে। এ ছাড়া আরও ২০০টি দ্রুত চালু হওয়ার পথে। এখনও পর্যন্ত সারা দেশ থেকে কমিউনিটি রেডিও স্টেশন চালু করার জন্য ১৩০০টিরও বেশি আবেদনপত্র জমা পড়েছে। তার মধ্যে অবশ্য ৬৫০টিরও নানা কারণে বাতিল হয়ে গিয়েছে। বাংলার মধ্যে প্রথম কমিউনিটি রেডিও স্টেশন চালু হয় ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই রেডিওতে সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। মূলত ‘কভারেজ এরিয়া’র শ্রোতা ও পড়ুয়ারাই অনুষ্ঠান প্রযোজনা করে থাকেন। এ ছাড়াও আন্তর্জাতিক রেডিও স্টেশন ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) ও ডয়েচেভেলে’র অনুষ্ঠান পুনঃসম্প্রচার করে থাকে এই স্টেশনটি। যাদবপুরের পরে সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টিভি ইনস্টিটিউট এবং একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও চালু রয়েছে কমিউনিটি রেডিও।

জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “বিকল্প পথ হিসাবে কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে মিলে কমিউনিটি রেডিও চালুর চেষ্টা করার কথা ভাবা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” কিন্তু জেলা পরিষদ যে কমিউনিটি রেডিও চালুর অনুমোদন পায় না, এই নিয়ম কি তাঁরা জানতেন না? সভাধিপতি জানান, রাজ্যের মধ্যে বর্ধমানেই প্রথম সামাজিক উন্নয়নের জন্য কমিউনিটি রেডিও চালু করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। সভাধিপতির কথায়, “আমরা সামাজিক উন্নয়নে রেডিও-র ভূমিকা নিয়েই ভাবনাচিন্তা করেছি। আইন-কানুনের দিকটি অত গুরুত্ব পায়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

zilla parishad community radio subrata sheet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE