স্টেশন বাজার এলাকায় এ ছবি রোজকার। ছবি: উদিত সিংহ।
জিটি রোডের উপর একটি রেল গেট, শহরের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে আরও একটি। এই জোড়া রেলগেটে ক্রমেই শ্লথ হচ্ছে শহরে ঢোকা বেরোনোর গতি। তার উপর বহুদিন ধরে চর্চা চললেও জিটি রোডের উপর উড়ালপুল তৈরির দাবিটি এখনও তিমিরেই। ফলে চারপাশের দ্রুতগতির মানচিত্রে মেমারি যেন ধীর, স্থবির।
এক সময় বর্ধমানেরও এমনই অবরুদ্ধ দশা ছিল। পুরনো জিটি রোড ধরে কলকাতায় যেতে পরপর লেভেল ক্রসিংয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতেন মানুষ। বর্ধমানের শক্তিগড় থেকে মেমারি পযর্ন্তই পড়ত তিনটি লেভেল ক্রসিং। পরে বর্ধমান ছুঁয়ে চার লেনের এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হয়। তার দৌলতে গাড়ি বা বাসে কলকাতা, আসানসোল এসে দাঁড়িয়েছে দেড়-দু ঘণ্টার দূরত্বে। অথচ পাশের মেমারি পড়ে রয়েছে সেই তিমিরেই।
মেমারি থেকে ৮-৯ কিলোমিটার দূরে রয়েছে রসুলপুর রেলগেট। তবে দিনের বেশিরভাগই তা বন্ধ থাকে। এরপরে বর্ধমান-হাওড়া মেন লাইনের উপর পড়ে মেমারি রেলগেটটি। সারাদিনে মেল, এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেন মিলে শ’পাঁচেক ট্রেন যাতায়াত করে ওই লাইনে। ফলে রেলগেট এলাকায় যানজট নিত্য ঘটনা। এক শহরবাসীর টিপ্পনি, একবার রসুলপুর ও মেমারি রেলগেটে আটকালে আর কোনওদিন ওই রাস্তায় যাওয়ার সাহস হবে না। যে কোনও দিন মেমারি শহরে ঢুকলেই পুরনো জিটি রোডে অবস্থিত ওই রেলগেটের দু’পাশে প্রায় আধ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট চোখে পড়ে। আটকে থাকে সাইকেল, রিকশা, মোটরবাইক, গাড়ি সবই। গেট খুললেই আগে যাওয়ার তাড়ায় লেগে থাকে ছোটখাট দুর্ঘটনাও।
শহরের রেলবাজার ও কৃষ্ণবাজারের মাঝ দিয়েও গিয়েছে রেল লাইন। স্টেশন লাগোয়া ওই রেললাইনের দু’পাশে রয়েছে জনবহুল বাজার ও লেভেল ক্রসিং। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সকালের দিকে, বিশেষ করে স্কুল বা অফিস টাইমে এই গেট পার হওয়া মানেই মুশকিলে পড়া। তার উপর মূল রাস্তাটি সংকীর্ণ, সরু রাস্তার দু’পাশেও জবরদখল করে রয়েছে নানা স্থায়ী-অস্থায়ী দোকান। ফলে পদে পদে আটকে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। একসময় কাঠের একটি উড়ালপুল থাকলেও বর্তমানে তাও প্রায় নিশ্চিহ্ন। মেমারির বাসিন্দা গৌতম কর্মকারের অভিযোগ, “স্টেশন লাগোয়া এই এলাকায় যানজট দীর্ঘদিনের সমস্যা। তাড়াহুড়ো করে রেলেগেট পার হতে গিয়ে আহতও হন অনেকে। দুর্ঘটনায় মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে।” গৌতমবাবুর দাবি, ওভারব্রিজের ভীষণ দরকার। তবে উড়ালপুলের উপর দিয়ে শুধু হেঁটে নয়, সাইকেল বা মোটরবাইক নিয়েও যাতে যাতায়াত করা যায় সে দাবি করেছেন তিনি।
অথচ একটু দূরেই মেমারি স্টেশনের ওভারব্রিজটি বেশিরভাগ সময়েই পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকে। যাত্রীরা ওভারব্রিজ পার হওয়ার বদলে পায়ে হেঁটে রেললাইন পেরোতেই বেশি স্বচ্ছন্দ। মেমারি স্টেশনের হকার জয়দেব হাটির সখেদ উক্তি, “একটু হাঁটতে হবে বলে প্রাণের মায়া ছেড়ে লাইন টপকেই যাতায়াত করে সবাই।”
মেমারি পুরসভার প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান তথা সিপিএম নেতা অভিজিত কোঙারের দাবি, “দুই বাজারের মাঝে স্টেশন লাগোয়া এলাকার যানজট কমাতে দীর্ঘদিন ধরেই উড়ালপুলের দাবি করছেন মানুষ। বছর দশেক আগে এ নিয়ে তত্কালীন রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাবদের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়।” তিনি জানান, ২০১০ সালে পুরবোর্ডে সিপিএম ক্ষমতা হারানোর আগে জানা গিয়েছিল রেল ওই উড়ালপুলটি গড়তে আগ্রহী। তবে রাজ্য সরকারকেও খরচের একাংশ বহন করতে হবে। কিন্তু উড়ালপুল হলে বাজারদুটি আর থাকবে না জানার পরেই আপত্তি তোলেন বাসিন্দারা। ফলে উড়ালপুল গড়া যায় এমন আর একটি জায়গার খোঁজ শুরু করে পুরসভা। পুরভবনের পাশে জিটি রোড সংলগ্ন চেকপোস্ট এলাকায় একটি জায়গা চিহ্নিতও করা হয়। তবে তারপর আর কিছু হয়নি। নতুন বোর্ডও উড়ালপুল গড়ার আশ্বাস দিয়েই দায় সারছে বলেও তাঁর অভিযোগ।
পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ীর অবশ্য দাবি, “জিটি রোডের উপরে মেমারিতে যে লেভেলক্রসিং রয়েছে তার উপর উড়ালপুল হবে। কাজও অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। এই কাজের একটা বড় অংশ করবে রাজ্য সরকার।” ইতিমধ্যে মাটি পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে বলেও তাঁর দাবি।
শহরবাসীও দিন গুনছেন যানজটের নাগপাশ থেকে মুক্তির।
(শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy