গণ্ডগোলের পরে কলেজের সামনে পুলিশের পাহারা। নিজস্ব চিত্র।
কলেজ ভোট আরও মাসখানেক, তার আগেই ভোটে টিএমসিপির কোন গোষ্ঠী কত জন প্রার্থী দেবে, তা নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ গোলমাল চলল গুসকরা কলেজে। কলেজের গেটের বাইরে বোমাবাজিও হয়। তবে পড়ুয়া বা শিক্ষকেরা কেউই আহত হননি।
কোনও বহিরাগত নয়, ছাত্রদের মধ্যে গোলমালের জেরেই যে সোমবার গণ্ডগোল বেধেছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন গুসকরা কলেজের অধ্যক্ষ স্বপনকুমার পান। তিনি বলেন, “ছাত্রদের মধ্যে গোলমালের জেরেই এই বোমাবাজি। কলেজের বাইরের রাস্তায় তিনটি বোমা পড়েছে। তবে ক্লাস বন্ধ হয়নি।” তাঁর দাবি, “বোমা পড়তেই আমরা কলেজের মূল প্রবেশদ্বার বন্ধ করিয়ে দিয়েছিলাম। বোমার শব্দ পেয়ে কর্মীরা ছুটেও যান। পরে পুলিশ এসে অবস্থা আয়ত্বে আনে।”
তবে এ দিনের গোলমালের পিছনে গুসকরার বর্তমান তৃণমূল পুরপ্রধান ও প্রাক্তন পুরপ্রধানের কলেজে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই রয়েছে বলেও টিএমসিপি-র একাংশের মত। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এ দিন গুসকরা পুরসভার চেয়ারম্যান বুর্ধেন্দু রায় ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান চঞ্চল গড়াইয়ের অনুগামী দু’দল টিএমসিপি ছাত্রদের মধ্যে ঝামেলা বেধেছিল। ঘটনার সূত্রপাত দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সময় বহিরাগত কয়েকজন কলেজের ভেতরে ঢোকে। মিনিট দশেক পরে বেরও হয়ে যায়। কলেজের বাইরেও কয়েকজন জটলা করছিল সে সময়। এরমধ্যেই দু’দল ছাত্রের মধ্যে বচসা বাধে। পরে বোমাবাজিও শুরু হয়। বোমাবাজির জেরে কলেজের বোটানি বিভাগের এক শিক্ষক সামান্য আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। অল্পবিস্তর আহত হয়েছেন তিন যুবকও। তবে কাউকেও হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়নি। অভিযোগ, বুর্ধেন্দুবাবুর অনুগামী কয়েকজন ছাত্র পিচকুড়ি, ভেদিয়া ইত্যাদি এলাকা থেকে কলেজে আসা কয়েকজন ছাত্রের পরিচয়পত্র কেড়ে নিয়েছিল। সে খবর পেয়ে চঞ্চালবাবুর অনুগামী ছাত্রেরা কলেজে জড়ো হতে উত্তেজনা দেখা দেয়। বোমাবাজিও শুরু হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাত্রদের সরিয়ে দেয়।
সম্প্রতি কলেজ ভোটকে কেন্দ্র করে কলেজে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে নোটিস টাঙানো হয়েছে গুসকরা মহাবিদ্যালয়ে। কলেজ ক্যাম্পাসে ঢোকা বের হওয়াকে কেন্দ্র করেই এ দিনের গোলমাল বলে ছাত্রদের একাংশের দাবি। যদিও টিএমসিপির একটি সূত্র জানাচ্ছে, চঞ্চলবাবু ও বুর্ধেন্দুবাবুর অনুগামী ছাত্রেরা কলেজ ভোটে একে অন্যের থেকে বেশি আসনে প্রার্থী দেওয়ার দাবি জানাচ্ছিল কয়েকদিন ধরেই। তারই পরিণতিতেই এ দিনের গোলমাল। এ দিন দু’পক্ষের জমায়েতে একপক্ষ টিএমসিপির রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রের নামে ধ্বনি দিতে থাকে। আর অপরপক্ষ চঞ্চাল গড়াইয়ের নামে ধ্বনি দিতে শুরু করে। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের দাবি, পুরসভার কর্তৃত্ব চলে গেলেও চঞ্চালবাবুর প্রভাব ওই কলেজে এখনও অটুট। অন্যদিকে বুর্ধেন্দুবাবুর অনুগামীরা চাইছেন গুসকরা কলেজে তাঁদের প্রভাব বিস্তার করতে। এই টানাপড়েনেই এ দিনের গোলমাল, বোমাবাজি।
তবে তাঁর সঙ্গে চঞ্চলবাবুর কলেজ দখল নিয়ে যে গোলমাল চলছে বা তারই জেরে বোমাবাজি ঘটেছে, খোদ বুর্ধেন্দুবাবু তা স্বীকার করেননি। তিনি বলেন, “একটা ভুল বোঝাবুঝি থেকে গোলমাল ঘটেছে। আর চঞ্চলবাবু আমার রাজনৈতিক গুরু। আমার সঙ্গে ওঁর গোলমাল হওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।” তবে কাদের মধ্যে গোলমাল হয়েছে তা নিয়ে কিছু বলতে চাননি বুর্ধেন্দুবাবু। তিনি বলেন, “খবরটা পুরোপুরি জানি না। কলেজের অধ্যক্ষকে ফোন করেছিলাম। উনিও তো ব্যাপারটা জানা নেই বলেছেন। বিষয়টি খোঁজ নিতে হবে।”
আর ভোটের আগে কলেজে উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন চঞ্চলবাবু। তাঁর দাবি, “এ দিন আচমকা কিছু বহিরাগত এসে কলেজের সামনে লাঠিসোঁটা নিয়ে জড়ো হয়। বোমা ছুঁড়তেও শুরু করে। আমাদের ছেলেদের কাছেও কলেজে গোলমাল বাধার কোনও খবর ছিল না। তাই আমরা কিছুই করতে পারিনি।” তাঁর অভিযোগ, “বুর্ধেন্দু নয়, এই ঘটনার পিছনে শহরের অন্য এক তৃণমূল নেতার হাত রয়েছে। আমরা পুলিশকে বলেছি ঘটনার দিকে নজর রাখতে।”
বোমাবাজির জেরে ক্লাস বন্ধ না হলেও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কলেজ খোলা থাকলেও বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীরাই এ দিন বাড়ি চলে যান। তবে অধ্যক্ষ বলেন,“ কলেজ বন্ধ করা হয়নি। তা যথারীতি চলবে।” কলেজ সূত্রের খবর, ওই ঘটনার পরে কলেজের অধ্যক্ষ ছাত্র ও শিক্ষকদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, কলেজে কোনও বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না। বহিরাগতদের কলেজে ঢুকতে দেওয়া হবে না। কোনও সমস্যা থাকলে ছাত্রদের তা কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।
পুলিশ জানিয়েছে, কলেজে বোমাবাজির ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কেউ কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে ঘটনার দিকে নজর রাখা হচ্ছে। এক ব্যক্তিকে ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy