Advertisement
০৪ মে ২০২৪

টেরাকোটার জায়গা নিয়েছে আগাছা, অবহেলায় মন্দির

‘মন্দির শহর’ কালনার ১০৮শিব, প্রতাপেশ্বর, লালজির মত মন্দিরগুলি পুরাতত্ত্ব বিভাগ অধিগ্রহণ করেছে। কিন্তু পুরাতত্ত্ব বিভাগের দীঘর্সূত্রিতা এবং মহকুমা প্রশাসনের উদাসীনতার ফলে অবহেলায় পড়ে রয়েছে শহরের জগন্নাথ তলার জোড়া শিবমন্দির।

বেহাল পড়ে কালনার জোড়া শিব মন্দির। ছবি: মধুমিতা মজুমদার।

বেহাল পড়ে কালনার জোড়া শিব মন্দির। ছবি: মধুমিতা মজুমদার।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৪ ০১:২১
Share: Save:

‘মন্দির শহর’ কালনার ১০৮শিব, প্রতাপেশ্বর, লালজির মত মন্দিরগুলি পুরাতত্ত্ব বিভাগ অধিগ্রহণ করেছে। কিন্তু পুরাতত্ত্ব বিভাগের দীঘর্সূত্রিতা এবং মহকুমা প্রশাসনের উদাসীনতার ফলে অবহেলায় পড়ে রয়েছে শহরের জগন্নাথ তলার জোড়া শিবমন্দির।

মহকুমাশাসকের দফতর এবং আদালতমুখী রাস্তা ধরে এগোলেই মিলবে জগন্নাথতলা। সেখানেই রয়েছে জোড়া শিব মন্দির। পশ্চিম দিকের মন্দিরটি রাজেশ্বর মন্দির নামে পরিচিত। ১৬৭৫ শকাব্দে (১৭৫৩ খ্রিস্টাব্দ) এটি তৈরি করেন বর্ধমানের মহারাজা চিত্রসেনের মহিষী রানি ছঙ্গ কুমারী। পূর্বদিকের মন্দিরটির নাম ভূবনেশ্বর মন্দির। চিত্রসেনেরই কনিষ্ঠা মহিষী রানি ইন্দ্র কুমারীর তৈরি এটি। কিন্তু এটির নির্মাণকাল নিয়ে সংশয় রয়েছে ঐতিহাসিক মহলে। কারণ উপযুক্ত সংস্কারের অভাবে ১৯৮৯ সালে মন্দিরের নাম-ফলকটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে জানান বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ডক্টর সৈয়দ তনভীর নাসরিন।

মৌখিক ইতিহাসের সূত্রে জানা যায়, চিত্রসেনের মৃত্যুর পর তাঁর দুই মহিষী এই মন্দির দু’টি তৈরি করেন। মোগল আমলের শেষদিকে বাংলার মন্দির স্থাপত্যের দিকটি বুঝতে হলে এই মন্দির দু’টির দিকে তাকাতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একসময় এই মন্দির দু’টির পাশ দিয়ে বয়ে যেত ভাগীরথী। এখনও মন্দিরের সামনের মাঠে প্রতি বছর রথের মেলা বসে।

বর্ধমান জেলার টেরাকোটা শিল্পের ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত মন্দির দু’টি। কিন্তু সংস্কারের অভাবে খসে পড়েছে মন্দির-চুড়ার পলেস্তরা। মন্দিরের গায়ে থাকা টেরাকোটার জাহাজ, অশ্বারোহী সৈনিক এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্যের ভাস্কর্যগুলি রোদে পুড়ে বা বর্ষার জলে নষ্ট হতে বসেছে। এমনকি দু’টি মন্দিরের মাঝেও গজিয়ে উঠেছে জঙ্গল। স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ছয়েক আগেই মন্দিরের ছাদের একাংশ খসে গিয়ে মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির। এলাকার বাসিন্দা হিরু শেখ বলেন, “জোড়া শিবমন্দির দু’টি কালনার গর্ব। অথচ চোখের সামনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”

সম্প্রতি হেরিটেজ কমিশনের দুই সদস্য প্রদীপ কুমার সিনহা এবং বাসুদেব মালিক কালনা শহরের আরও এক পুরাকীর্তি সমাজবাড়ি পরিদর্শনে আসেন। কালনার কয়েকজন বিশিষ্ট মানুষ হেরিটেজ কমিশনের ওই দুই সদস্যের কাছে জোড়া শিবমন্দির দু’টি উপযুক্ত সংস্কার হয়না বলে অভিযোগ করেন। এরপর মন্দির পরিদর্শনে এসে কমিশনের ওই দুই সদস্য মন্দিরের গঠন শৈলী দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। মন্দির সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করেন তাঁরা। সংস্কারের ব্যপারেও প্রাথমিকভাবে উত্‌সাহ দেখায় হেরিটেজ কমিশন। মহকুমাশাসকের কাছ থেকে মন্দির দু’টির ইতিহাস, এলাকার বাসিন্দাদের সংস্কারের ব্যাপারে সদিচ্ছা, উত্তরাধিকারের অনুমতি সংক্রান্ত বিষয়গুলি বিশদে জানতে চাওয়া হয়।

মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ জানান, মন্দির দু’টির বিষয়ে খুব শীঘ্র একটি চিঠি পাঠানো হবে হেরিটেজ কমিশনে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE