Advertisement
E-Paper

ট্রাফিকের হাল ফেরাতে গেলে আসছে চাপ, দাবি পুলিশের

হাল ফেরাতে করা হয়েছে নানা পদক্ষেপ। কিন্তু প্রভাবশালী কিছু মহলের চাপে ট্রাফিক ব্যবস্থা পুরোপুরি বিশৃঙ্খলা মুক্ত করা যাচ্ছে না, দাবি আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের একাংশের। সেই চাপের মুখে তাদের নতি স্বীকার করতে হচ্ছে বলে ক্ষোভ পুলিশের এই অংশের।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০১:১৩
বাসের ছাদে তোলা হচ্ছে পণ্য। ছবি: শৈলেন সরকার।

বাসের ছাদে তোলা হচ্ছে পণ্য। ছবি: শৈলেন সরকার।

হাল ফেরাতে করা হয়েছে নানা পদক্ষেপ। কিন্তু প্রভাবশালী কিছু মহলের চাপে ট্রাফিক ব্যবস্থা পুরোপুরি বিশৃঙ্খলা মুক্ত করা যাচ্ছে না, দাবি আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের একাংশের। সেই চাপের মুখে তাদের নতি স্বীকার করতে হচ্ছে বলে ক্ষোভ পুলিশের এই অংশের।

আসানসোল মহকুমায় ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতির দাবি উঠেছে বারবার। কমিশনারেটের ট্রাফিক বিভাগে নানা সংগঠনের তরফে স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হয়েছে। ক্ষোভের মুখে পড়ে কিছু পদক্ষেপ করার ব্যাপারে উদ্যোগী হয় পুলিশ। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের পিছিয়ে আসতে হয়েছে বলে কয়েক জন পুলিশকর্তার দাবি। আর এই চাপ সৃষ্টির পিছনে শাসকদলের কিছু নেতা-কর্মীর হাত রয়েছে বলে অভিযোগ।

আসানসোলে যাত্রিবাহী বাসের মাথায় পণ্য পরিবহণের রীতি অনেক দিনের। কমিশনারেট গঠনের পরে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছিল, আসানসোল ও দুর্গাপুর শহরের কোথাও বাসের মাথায় পণ্য পরিবহণ করা যাবে না। কিন্তু পুলিশের এই নির্দেশকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছে পণ্য আনা-নেওয়া। দুই শহরেই বাসের ছাদে ডাঁই করে জিনিসপত্র নিয়ে যেতে দেখা যায়। ফলে, প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।

সকালে আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ডে গেলে দেখা যায়, দূরপাল্লার বাসগুলিতে পণ্য চাপানো হচ্ছে। দেখা গেল, বাসস্ট্যান্ড জুড়ে ১০-১২ জনের একটি দল এই পণ্য তোলানামার কাজটি দেখভাল করছে। ঝাড়খণ্ড, পুরুলিয়া, শিলিগুড়ি, মালদহ, বহরমপুরগামী বাসে সে সব তোলা হচ্ছে। কী ধরনের জিনিস বাসের ছাদে নিয়ে যাওয়া হয়, তা জানতে চাওয়া হলে পণ্য তোলানামার দেখভাল করা দলের এক সদস্য মুন্না জানান, কাপড়, কাঁসা-পিতলের বাসন, কাঠের আসবাব, ইলেকট্রনিক্সের জিনিস-সহ অনেক কিছুই এ ভাবে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি আরও জানান, মোট পিছু ১২০ টাকা করে নেওয়া হয়। বাসের ভাড়া আলাদা। প্রতি দিন কয়েক হাজার মোট এই ভাবে যাতায়াত করে। বেআইনি জানা সত্ত্বেও এ ভাবে পণ্য পরিবহণ করেন কেন? পুলিশ কিছু বলে না? মুন্নার জবাব, “ও সব দাদারা সামলে নেন।” এই দাদা কারা, তা জিজ্ঞেস করতেই মুখে কুলুপ মুন্নার।

শুধু বাসের মাথায় বেআইনি ভাবে পণ্য আনা-নেওয়া নয়। নিয়ম ভাঙা হচ্ছে আরও নানা ভাবে। আসানসোল শহরে যে সব অটো চলাচল করছে, সেগুলির এখানে চলার অনুমতি নেই। এই দাবিতে বাস মালিকেরা বারবার সরব হয়েছেন। সোমবারও তাঁরা একটি স্মারকলিপি দেন মহকুমাশাসকের কাছে। এক পুলিশ আধিকারিক জানান, দিন কয়েক আগে শহরের রাস্তায় ভিন্ রাজ্যের নম্বর লাগানো সাতটি অটো ধরে পুলিশ। কিন্তু এক তৃণমূল নেতার চাপে সেগুলিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, আসানসোল শহরে ইদানীং প্রচুর ভিন্ রাজ্যের নম্বর লাগানো অটো চলছে। এই ধরনের কোনও অটোর বিরুদ্ধে কোনও যাত্রী-হয়রানির অভিযোগ উঠলে সেটির হদিস করা মুশকিল হয়, কারণ এই অটো এখানকার পরিবহণ দফতরে নথিবদ্ধ নয়। বেআইনি অটো বন্ধের প্রশ্নে এডিসিপি (ট্রাফিক) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “আমরা বিষয়টি নজরে রেখেছি। ব্যবস্থা নেব।”

এই ধরনের বেআইনি কাজকর্ম রোখা যাচ্ছে না কেন? এসিপি (ট্রাফিক) অভিষেক রায় বলেন, “আমরা সবই দেখতে পাচ্ছি। আপ্রাণ চেষ্টাও করেছি এ সব বন্ধ করতে। কিন্তু এমন চাপ আসছে যে কিছু করে উঠতে পারছি না।” ওই পুলিশকর্তা জানান, বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছেন। কিন্তু কোথা থেকে এই চাপ আসছে, অভিষেকবাবু তা জানাতে চাননি। যদিও কমিশনারেটেরই এক আধিকারিকের দাবি, শহরে শাসকদলের দুই নেতার মদতেই এই বেআইনি কাজকর্ম চলছে।

তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি ভি শিবদাসন অবশ্য বলেন, “দলনেত্রী এ সব পছন্দ করেন না। আমাদের কেউ জড়িত আছে বলে আমার কাছে খবর নেই। নির্দিষ্ট ভাবে কারও নামে অভিযোগ জানানো হলে দল ব্যবস্থা নেবে।”

asansol traffic control sushanta banik police pressure
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy