Advertisement
০৬ মে ২০২৪

তিন বছর পরে দুর্গাপুরের ডেয়ারি চালুর প্রক্রিয়া শুরু

মাদার ডেয়ারির হাতে তুলে দিয়ে দুর্গাপুরের সরকারি ডেয়ারিটি খুলতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য। রাজ্যের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের মন্ত্রী এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, ধাপে-ধাপে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। পুনরুজ্জীবনের জন্য বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা।

সগড়ভাঙার সেই ডেয়ারি। ছবি: বিকাশ মশান।

সগড়ভাঙার সেই ডেয়ারি। ছবি: বিকাশ মশান।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৪ ০১:২৮
Share: Save:

মাদার ডেয়ারির হাতে তুলে দিয়ে দুর্গাপুরের সরকারি ডেয়ারিটি খুলতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য। রাজ্যের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের মন্ত্রী এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, ধাপে-ধাপে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। পুনরুজ্জীবনের জন্য বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা। দ্রুত এই ডেয়ারি চালু হয়ে যাবে বলে আশ্বাস মন্ত্রীর।

দুর্গাপুর, রানিগঞ্জ, আসানসোল শিল্পাঞ্চলে দুধের জোগান নিশ্চিত করতে ১৯৭২ সালের অক্টোবরে দুর্গাপুরের সগড়ভাঙায় গড়ে ওঠে দুর্গাপুর স্টেট ডেয়ারি। প্রতি দিন ৫০ হাজার লিটার দুধ প্রক্রিয়াকরণ এবং বারোশো লিটার দুধের আইসক্রিম ও ঘি তৈরির ব্যবস্থা ছিল। আইসক্রিম ও ঘি প্রশংসা কুড়োলেও দুধ সরবরাহের পরিমাণ কোনও দিনই সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছয়নি। ডেয়ারিতে দুধের জোগানের জন্য বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর এবং সোনামুখীতে দু’টি দুগ্ধ সংগ্রহ কেন্দ্র তথা দুগ্ধ সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। তবে এখান থেকে সরাসরি দুধ বিক্রির কোনও পরিকাঠামো ছিল না। এজেন্টদের দেওয়া হত। তাঁরা বাড়ি বাড়ি দুধ পৌঁছে দিতেন। কর্মীদের অভিযোগ, পরিচালনাগত ত্রুটির কারণে ধীরে ধীরে দুর্গাপুরের ডেয়ারিটি রুগ্‌ণ হতে শুরু করে। শেষ দিকে শুধু স্থানীয় সরকারি হাসপাতালগুলিতে দৈনিক হাজার লিটার দুধ সরবরাহ করা হত। ২০১১ সালের মে মাসে যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে এই ডেয়ারিতে দুধ উত্‌পাদন বন্ধ হয়ে যায়। তখন হরিণঘাটা থেকে দুধ এনে তা হাসপাতালগুলিতে সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। তার পর থেকে দুর্গাপুরের ডেয়ারিটি মূলত দুধ সরবরাহকারীর কাজ করতে শুরু করে।

রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এখানকার কর্মীরা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরে যোগাযোগ করে ডেয়ারির পুনরুজ্জীবনের আর্জি জানান। দফতরের তত্‌কালীন মন্ত্রী নুরে আলম চৌধুরী ডেয়ারি পরিদর্শনে এসে আশ্বাস দেন, ডেয়ারি যাতে ঘুরে দাঁড়ায়, সরকার সে চেষ্টা করবে। বাম আমলে দফতরের তত্‌কালীন মন্ত্রী আনিসুর রহমানও একই আশ্বাস দেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। অথচ, হঠাত্‌ ২০১২ সালের এপ্রিলে সরকারি নির্দেশিকা দেওয়া হয়, এই ডেয়ারি থেকে প্রশাসনিক ও অনিবার্য কারণে দুধ সরবরাহও বন্ধ করে দেওয়া হল। মাথায় হাত পড়ে কর্মীদের। তার পর থেকে কার্যত কোনও কাজ ছাড়াই বেতন পেয়ে এসেছেন এখানকার ৮৭ জন কর্মী। ২০১১ সালের মে থেকে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে কোনও উত্‌পাদন নেই এই ডেয়ারিতে। তাই হতাশা বাড়ছিল কর্মীদের মধ্যে। তবে ফেব্রুয়ারিতে দীর্ঘদিন বন্ধ পড়ে থাকা বর্ধমানের ডেয়ারিটি মাদার ডেয়ারির হাতে তুলে দিয়ে চালু করার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেন দুর্গাপুরের ডেয়ারির কর্মীরাও।

মাদার ডেয়ারি সূত্রে জানা গিয়েছে, সংস্থার আধিকারিকেরা বেশ কয়েক বার দুর্গাপুরের ডেয়ারি পরিদর্শন করেন। সেটি চালু করার জন্য কী কী করতে হবে, তার বিশদ রিপোর্ট জমা দেওয়া হয় রাজ্য সরকারের কাছে। মন্ত্রী স্বপনবাবু জানান, দুর্গাপুরের ডেয়ারি পুনরুজ্জীবনের জন্য ইতিমধ্যে রাজ্য প্রথম পর্যায়ের এক কোটি টাকা তুলে দিয়েছে মাদার ডেয়ারির হাতে। ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু হবে। মাদার ডেয়ারি সূত্রে জানা গিয়েছে, যন্ত্রপাতি বসানোর জন্য দরপত্রের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। নির্মাণকাজের জন্য দরপত্র ডাকা হয়েছে। স্বপনবাবু জানান, প্রথমে এখানে পনির উত্‌পাদন করা হবে। পরে ধাপে-ধাপে আইসক্রিম ও ঘি উত্‌পাদনের প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

durgapur mother diary sagardanga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE