Advertisement
০৭ মে ২০২৪

দেদার মাটি কাটায় বিপন্ন ভাগীরথীর চর

রাতের আঁধারে একের পর এক কাঠের ট্রলার ভিড়ছে ভাগীরথীর পাড়ে। তারপরেই ঝুপঝাপ কোদালের কোপ। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই উধাও মাটিবোঝাই ওই ট্রলারগুলি। কালনা ২ ব্লকের পূর্বসাতগাছিয়া এলাকায় ভাগীরথীর চরে এভাবেই রাতের পর রাত চলে মাটি কাটা। শব্দে, ঘর হারানোর আতঙ্কে ঘুম হারান স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় চাষিদের দাবি, এ ধরণের মাটি মাফিয়াদের তাণ্ডবে হারাচ্ছে চাষের জমি, ভাঙছে ভাগীরথীর পাড়।

পূর্বসাতগাছিয়ায় এভাবেই ভাঙছে পাড়। ছবি তুলেছেন মধুমিতা মজুমদার।

পূর্বসাতগাছিয়ায় এভাবেই ভাঙছে পাড়। ছবি তুলেছেন মধুমিতা মজুমদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৪ ০১:৩৮
Share: Save:

রাতের আঁধারে একের পর এক কাঠের ট্রলার ভিড়ছে ভাগীরথীর পাড়ে। তারপরেই ঝুপঝাপ কোদালের কোপ। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই উধাও মাটিবোঝাই ওই ট্রলারগুলি।

কালনা ২ ব্লকের পূর্বসাতগাছিয়া এলাকায় ভাগীরথীর চরে এভাবেই রাতের পর রাত চলে মাটি কাটা। শব্দে, ঘর হারানোর আতঙ্কে ঘুম হারান স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় চাষিদের দাবি, এ ধরণের মাটি মাফিয়াদের তাণ্ডবে হারাচ্ছে চাষের জমি, ভাঙছে ভাগীরথীর পাড়।

বেশ কিছু বছর আগে ওই পঞ্চায়েত এলাকার কুলেদা, শতপটী, মালপাড়া, সাতগাছিয়ার মতো বেশ কয়েকটা গ্রামের কাছেই ছিল ভাগীরথী। পরে গতিপথ বদলে নদী সরে যাওয়ায় ভাঙনের হাত থেকে বেঁচে যায় গ্রামগুলি। সঙ্গে হাজার বিঘেরও বেশি এলাকা জুড়ে জেগে ওঠে চর। পলি মিশে থাকা উর্বর চরের জমিতে সারা বছরই সর্ষে, গম, আলু, ধান-সহ নানা ফসলের চাষ শুরু করেন চাষিরা। সেই ফসল বিক্রি করে লাভের মুখও দেখেন অনেক চাষি।

প্রায় দু’দশক আগে ভূমিহীন চাষিদের সরকারি উদ্যোগে ওই জমি বিলি করা হয়, পাট্টাও দেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বছর পাঁচ-ছয়েক আগে থেকেই চরের জমির উপর মাটি মাফিয়াদের নজর পড়ে। ২০১৩ সাল পর্যন্ত মাটি কাটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সম্প্রতি ব্যপক হারে মাটি কাটা শুরু হয় বলে অভিযোগ। রাতের আঁধারে বিঘের পর বিঘে থেকে মাটি কেটে নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। স্থানীয় কুলেদা, শতপটি, মালপাড়ার ২৯ জন চাষি সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে কালনা থানায় অভিযোগও জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, পাট্টা থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই ভাগীরথীর পাড়ে চাষাবাদ করেন তাঁরা। কিন্তু রাতে ট্রলারে করে দুষ্কৃতীরা মাটি কেটে নেওয়ায় ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। অভিযোগে দুই চাষি জানিয়েছেন, দিনের বেলায় বাধা পাওয়ার ভয়ে এদের দেখা যায় না। রাত বাড়লেই একাধিক ট্রলার জড়ো হয়। একএকটি ট্রলারে সাত থেকে আট জন লোক থাকে, যাঁরা দ্রুত মাটি কেটে ট্রলার বোঝাই করে। অনেকসময় ওই দুষ্কৃতীদের কাছে বেআইনি অস্ত্রও থাকে বলে চাষিদের দাবি। প্রশাসনের কাছে দোষিদের কড়া শাস্তিরও দাবি করেছেন তাঁরা।

কিন্তু ট্রলারগুলি আসে কোন এলাকা থেকে? স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপুকুর, গুপ্তিপাড়া, কাঠিগড়া-সহ আশপাশের কয়েকটি এলাকা থেকেই বেশিরভাগ ট্রলারগুলি আসে। এক একটি ট্রলারে পাঁচ থেকে আট ট্রাক্টর ভর্তি মাটি ধরে। জলপথে চলাচলের জন্য ট্রাক্টরগুলিতে মোটর লাগোনো থাকে। এক-একটা ট্রাক্টরের মাটি মোটামুটি গড়ে শ’পাঁচেক টাকায় বিক্রি হয়।

এলাকায় মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যের কথা স্বীকার করেছেন ওই পঞ্চায়েতের তৃণমূল সভাপতি বলাই উপাধ্যায়। তিনি জানান, রাতের আঁধারে একদল দুষ্কৃতী পালা করে চরের মাটি কেটে নেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। অবিলম্বে ওই কারবার বন্ধ করার জন্য পুলিশকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় ইটভাটা মালিকদেরও চুরির মাটি না কেনার জন্য বলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীকে সচেতন করার জন্য পঞ্চায়েতকে মাইকে প্রচার চালাতেও বলা হবে বলে তিনি জানান। পূর্বসাতগাছিয়া পঞ্চায়েতের প্রধান কৃষ্ণা কর্মকার বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমার উদ্বিগ্ন। বেআইনি মাটি কাটার বিষয়টি পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষের গোচরে আনা হয়েছে। স্থানীয়দের সচেতন করতে হলে অবিলম্বে মাইকে প্রচার শুরু করতে হবে।”

কালনা থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে ওই এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। একটি ট্রলার আটকও করা হয়েছে। মাটি চুরি রুখতে কড়া নজরদারি চলছে বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bhagirathi river digging
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE