Advertisement
০৭ মে ২০২৪

নানা উপায়ে বাড়ছে বিদ্যুৎ চুরি, মন্তেশ্বরে চিন্তায় কর্তারা

হুকিং, মিটারে কারচুপি, বিদ্যুৎ তারের সংযোগ বিছিন্ন করে দেওয়ানানা উপায়ে বিদ্যুৎ চুরি চলছে কালনা মহকুমার মন্তেশ্বর ব্লকে। দেদার বিদ্যুৎ চুরির ফলে বিদুতের খরচ বেশি হলেও বিদ্যুৎ বন্টন দফতরের হাতে আসছে সামান্য অর্থ। পরিস্থিতি দেখে কপালে ভাঁজ দফতরের কর্তাদের।

ইচ্ছে মতো হুকিং। মন্তেশ্বরে মধুমিতা মজুমদারের তোলা ছবি।

ইচ্ছে মতো হুকিং। মন্তেশ্বরে মধুমিতা মজুমদারের তোলা ছবি।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
মন্তেশ্বর শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৪ ০০:৩৯
Share: Save:

হুকিং, মিটারে কারচুপি, বিদ্যুৎ তারের সংযোগ বিছিন্ন করে দেওয়ানানা উপায়ে বিদ্যুৎ চুরি চলছে কালনা মহকুমার মন্তেশ্বর ব্লকে। দেদার বিদ্যুৎ চুরির ফলে বিদুতের খরচ বেশি হলেও বিদ্যুৎ বন্টন দফতরের হাতে আসছে সামান্য অর্থ। পরিস্থিতি দেখে কপালে ভাঁজ দফতরের কর্তাদের।

বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কালনা ডিভিশনের আওতায় মোট ছ’টি সাব স্টেশন (বিদ্যুৎ পরিষেবা কেন্দ্র) রয়েছে। মোট গ্রাহক হলেন ১ লক্ষ ৮০ হাজার ৩৬৯ জন। ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে কালনায় ৫৩.৪২ মিলিয়ন, বৈদ্যপুরে ৩১.৯৭ মিলিয়ন, ধাত্রীগ্রামে ৫১.৬২ মিলিয়ন, সমুদ্রগড়ে ৫১.৫১ মিলিয়ন, পূর্বস্থলীতে ৬৩.৪৩ মিলিয়ন ও মন্তেশ্বরে ৭৯.৭৫ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ দফতর সব মিলিয়ে মাত্র ১৬.২৭ ইউনিট বিদ্যুতের টাকা পেয়েছে। অর্থাৎ গত আর্থিক বছরে মোট বিদ্যুৎ খরচের ৮০ শতাংশ টাকাই পাওয়া যায়নি। কালনা বিদু্যুৎ দফতরের হিসেবে, আদায় না হওয়া এই মোট বিলের পরিমাণ হল প্রায় ১৩২ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে মন্তেশ্বর ব্লকেই পাওনার পরিমাণ হল প্রায় ৪১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা। বিদ্যুৎ দফতর থেকে পাওয়া হিসেব অনুযায়ী কালনা এলাকায় বেসরকারি নলকূপ মালিকদের থেকে পাওনা বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ হল প্রায় ৪ কোটি ৬ লক্ষ টাকা। এরমধ্যে মন্তেশ্বর ব্লকেই বাকি রয়েছে প্রায় ২ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা। মহকুমা বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তার আশঙ্কা, “বিভিন্ন সরকারি দফতরেও কয়েক কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। তবে, সেই টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে নিশ্চয়তা রয়েছে। কিন্তু বেসরকারি ক্ষেত্রে যে বকেয়া রয়েছে সেটা পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই।

কেন এমন হাল মন্তেশ্বরে? বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা জানালেন, মন্তেশ্বর এলাকা প্রধানত কৃষি নির্ভর। এলাকায় বছরে তিন বার ধান চাষ করা হয়। ফলে চাষের জন্য প্রয়োজন হয় প্রচুর জল। বহু চাষিই মাঠে সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে জল বিক্রি করে। জেলার এক বিদ্যুৎ কর্তা জানান, মন্তেশ্বর কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের অর্ন্তগত এলাকায় সাবমার্সিবল পাম্পের গ্রাহকের সংখ্যা ১৯৬১ জন। কিন্তু এদের মধ্যে অনেকেই বিদ্যুতের বিল জমা না দিয়ে নানা কৌশলে বিদ্যুৎ চুরি করছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় ও বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কেউ কেউ বিদ্যুতের তার মিটার পর্যন্ত নিয়ে না গিয়ে অগভীর নলকূপের মোটরের সঙ্গে সরাসরি জুড়ছে। আবার কেউ বিদ্যুৎ সরবরাহের মূল তার (এসটি সংযোগ) থেকে বিদ্যুৎ চুরি করছে। বাড়ির বিদ্যুৎ মিটারেও হচ্ছে কারচুপি। ফলে, অনেক বাড়িতে গরমে ফ্রিজ, পাখা চললেও বিদ্যুৎ বিলের অঙ্কে খুব একটা হেরফের হচ্ছে না।

বিদ্যুৎ চুরিতে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মিটার রিডারদের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি কালনা-২ ব্লকের একটি সাবমার্সিবল পাম্পে এক বছরে ২৮ হাজার ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়েছিল। অথচ ওই সাবমার্সিবল পাম্পের মালিক মাত্র ৩৬০০ ইউনিট বিদ্যুতের বিল মেটায়। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়,খরচ হওয়া বিদ্যুৎ ও হাতে পাওয়া বিদ্যুৎ বিলের এই তফাতের কারণ কারচুপি। সেখানে সরাসরি জড়িত রয়েছেন মিটার রিডার। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে বিদ্যুৎ দফতরের তরফে ওই মিটার রিডারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

মন্তেশ্বরে বিদ্যুৎ চুরি বাড়ার সঙ্গেই কমে যাচ্ছে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের সংখ্যা। মহকুমা বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তা বলেন, ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে এই এলাকায় মাত্র ২৩১১ জন গ্রাহক নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছেন। এলাকার অনেক স্কুল এখনও বিদ্যুৎ সংযোগের বাইরে রয়েছে। এর পিছনে দফতরের গাফিলতির কথা মানছেন বিদ্যুৎ কর্তারা। এক কর্তা জানান, ভোটের আগে মন্তেশ্বরের ৫৫টি জায়গায় অস্থায়ী সংযোগ চেয়ে আবেদন জমা পড়েছিল। তার বেশির ভাগই ছিল প্রাথমিক স্কুল। বিডিও-র আবেদনের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য কোটেশন করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পর্যাপ্ত তহবিল না থাকায় ওই বিদ্যুৎ সংযোগগুলি দেওয়া যায়নি। কিন্তু বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকা সত্ত্বেও ভোটের সময়ে ওই স্কুলগুলিতে দিব্যি আলো জ্বলেছে, পাখা ঘুরেছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি জায়গায় প্রকাশ্যেই চলছে হুকিং। এ বিষয়ে কালনার মহকুমা শাসক সব্যসাচী ঘোষ বলেন, “ভোটের সময় আমি কয়েকটি জায়গায় বিদ্যুৎ দফতরে টাকা জমা দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করেছিলাম। মন্তেশ্বরে কী হয়েছে খোঁজ নিয়ে দেখব।

বিদ্যুৎ দফতরের কালনা শাখার ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার চঞ্চল বিশ্বাস বলেন, “মন্তেশ্বরের বিষয়টি আমাদের আলাদা করে ভাবাচ্ছে। ওই এলাকায় সমস্যা মেটানোর জন্য জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলা, গ্রাহক সচেতনতা বৃদ্ধির মত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।” তাঁর দাবি, “যারা বেশি পরিমাণে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তারাই রাতের দিকে বিভিন্ন উপায়ে বিদ্যুৎ চুরি করছে। এ ক্ষেত্রে আচমকা অভিযানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE