ভাতছালায় এই নির্মাণ নিয়ে উঠেছে অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।
তিন বছর আগে বর্ধমান শহরে অবৈধ ভাবে তৈরি ১৫-২০টি বাড়ি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। দু’বছরে সিপিএমের প্রাক্তন পুরবোর্ড তা পারেনি। এখনও পারেনি তৃণমূলের বোর্ডও।
২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য জুড়ে বামফ্রন্টের পরাজয়ের পরেই বর্ধমান শহরে বল্গাহীন অবৈধ নির্মাণ শুরু হয়ে গিয়েছিল, বলে অভিযোগ বরাবর করে এসেছেন প্রাক্তন পুরপ্রধান, সিপিএমের আইনূল হক। পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১১ সালের গোড়ার দিকে হাইকোর্ট বেশ কিছু বাড়ি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। কিন্তু মে মাসে বিধানসভা ভোটে বিপুল বিপর্যয়ের পরে বাম নিয়ন্ত্রিত বোর্ড কার্যত হাত গুটিয়ে বসে পড়ে।
রাজ্যে সরকার উল্টে দেওয়া ওই নির্বাচনে বর্ধমান পুরসভার ৩৫ ওয়ার্ডের সব ক’টিতেই পিছিয়ে পড়েছিল সিপিএম। যার জেরে বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে বড় ব্যবধানে হেরে যান প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন। প্রাক্তন পুরপ্রধান আইনূল হকের দাবি, “আদালতের নির্দেশ হাতে পেলেও পরিস্থিতির কারণেই আমরা কিছু করতে পারিনি। বহু ওয়ার্ডের নিয়ন্ত্রণই আমাদের হাত থেকে কার্যত বেরিয়ে গিয়েছিল। তার ফলে আমরা ওই নির্দেশ কার্যকর করতে পারিনি। পুলিশের সাহায্য চেয়েও পাইনি।” বর্ধমান থানা অবশ্য আগেই জানিয়েছিল, পুরসভা চাইলে তারা পুলিশ পাঠাতে প্রস্তুত। কিন্তু পুরসভা কখনওই বাড়ি ভাঙতে পুলিশ চায়নি।
গত বছর, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে পুরভোটে বর্ধমানের ৩৫টি ওয়ার্ডেই জেতে তৃণমূল। কিন্তু নতুন পুরবোর্ডও বাড়ি ভাঙতে পারেনি। বাড়িগুলি আদৌ ভাঙা হবে, না জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হবে তা নিয়ে বস্তুত পুরভোটের আগে থেকেই তৃণমূলের অন্দরে বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। শহরের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা স্বরূপ দত্ত চেয়েছিলেন, জরিমানা করে বাড়িগুলিকে বৈধ করে দেওয়া হক। তাতে পুরসভার রোজগার বাড়বে, পরে পুরকরও মিলবে। কিন্তু আর এক নেতা সমীর রায় প্রশ্ন তোলেন, আইন ভেঙে নকশা অনুমোদন না করিয়ে যে নির্মাণ হয়েছে, তাকে জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হলে অবৈধ নির্মাণের হিড়িক পড়ে যাবে। চারদিকে অশান্তি শুরু হয়ে যাবে। বাড়িগুলি ভেঙে দেওয়াই উচিত।
ভোটে জেতার পরে স্বরূপবাবুই নতুন পুরপ্রধান হন। পুরসভা সূত্রের খবর, তিনি এই অবৈধ নির্মাণকারীদের জরিমানা করে বাড়িগুলি থেকে পুরকর আদায়ের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দলেরই একাংশের বাধায় সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। অবৈধ নির্মাণও বন্ধ হয়নি। চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল (পরিকল্পনা) অরূপ দাস বলেন, “প্রায় প্রতিদিনই লোকে পুরসভায় অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ জানাতে আসছেন। গোলমাল কম থাকলে আমরা অভিযুক্ত ও অভিযোগকারীকে মুখোমুখি বসিয়ে শুনানি করিয়ে সমস্যা মেটাচ্ছি।”
কিন্তু সব কিছু সে ভাবে মেটানো সম্ভব নয়। যেমন, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভাতছালায় ঘোষালমাঠ এলাকায় সরকারি জায়গায় অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ জমা পড়েছিল গত ২৩ জুন। স্থানীয় বাসিন্দা আকাশ বাগ জানান, ওই জায়গায় এলাকার ছেলেরা খেলাধুলো করে। ২০১১ সালেও সেখানে এক বার অবৈধ নির্মাণের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু এলাকাবাসী তা রুখে দেন। এলাকার আর এক বাসিন্দা সমর নিয়োগীর আক্ষেপ, “এ বার পুরসভায় জানানোর পরে বেশ কয়েক দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে পুরসভা কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।” ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার প্রদীপ রহমান বলেন, “কাজ বন্ধ করতে বলেছি। আমার ওয়ার্ডে কোনও অবৈধ নির্মাণ হতে দেব না।”
হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও পুরসভা এখনও চিহ্নিত বাড়িগুলিকে ভাঙল না কেন? পুরপ্রধান স্বরূপ দত্তের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন ধরেননি। অরূপবাবুর বক্তব্য, “একটা বড় বাড়ি ভাঙতে লোকলস্কর লাগে, বুলডোজার লাগে, পুলিশ লাগে, মহকুমাশাসকের অনুমতি লাগে। সবার আগে পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সবটা এখনও এক সঙ্গে হাতে আসেনি।”
কেন আসেনি? স্পষ্ট উত্তর নেই।
বাড়ি ভাঙার ক্ষেত্রে নেতারাই যেখানে দ্বিমত, পুরসভার সদিচ্ছা নিয়ে সন্দেহ এড়ানো যায় কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy