সভায় স্বপন দেবনাথ। —নিজস্ব চিত্র।
প্রচারের তোড়জোড় আছে। আর পর্দার পিছনেই আছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
পূর্ব বর্ধমান কেন্দ্রে তৃণমূলের এক মাত্র কাঁটা কাটোয়ায় কর্মিসভায় এসে তাই রাজ্যের মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথের হুঁশিয়ারি দলের নির্দেশ ছাড়া বিচ্ছিন্ন ভাবে কেউ কোনও প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার করলে তার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করা হবে।
কী অভিযোগ? কোন আইনের কত নম্বর ধারায়? স্বপনবাবু তা স্পষ্ট করে বলেননি।
সংবিধান বলছে, দেশের যে কোনও নাগরিক যে কোনও প্রার্থীকে সমর্থন করতে পারেন, দলের ঝান্ডা কাঁধে রাস্তায় নামতে পারেন। এটা তাঁর নাগরিক অধিকার। তিনি কোনও নির্দিষ্ট দলের কর্মী হলে এবং তাঁর কাজ নেতাদের পছন্দ না হলে দলীয় ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ না হলে পুলিশ হস্তক্ষেপ করবে কোন আইনবলে? পুলিশের কী সেই এক্তিয়ার আছে?
বর্ধমান জেলা প্রশাসন স্পষ্ট বলছে, আগাম অনুমতি নিয়ে কেউ যদি সভা-সমিতি বা মিছিল করেন, তা আদৌ বেআইনি নয়। সে ক্ষেত্রে পুলিশের কিছুই করার নেই। পুলিশের কর্তারাও বলছেন, বেআইনি জমায়েত না হলে তাতে হস্তক্ষেপের প্রশ্ন নেই, উপায় তো নেই-ই। অন্যথায় কোনও রাজনৈতিক দলের পছন্দ-অপছন্দ-নির্দেশ পুরোপুরি তাদের নিজস্ব বিষয়, আইনশৃঙ্খলার বিষয় নয়।
বস্তুত, বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনের মধ্যে এক মাত্র কাটোয়া নিয়েই তৃণমূল একটু বেশি স্পর্শকাতর হয়ে আছে বলে কংগ্রেস নেতাদের ধারণা। গত দু’বছরে গ্রামীণ বর্ধমানের বেশির ভাগ জায়গা তৃণমূলের কব্জায় চলে গেলেও কাটোয়ায় এখনও কংগ্রেসের অনেকখানি প্রভাব রয়েছে। সৌজন্যে কাটোয়ার বিধায়ক রবি চট্টোপাধ্যায়। বুধবার কাটোয়া রবীন্দ্র ভবনে উপস্থিত কর্মীদের এলাকা ভাগ করে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভাব জমানোর নির্দেশও দিয়েছেন স্বপনবাবু।
মন্ত্রী বলেন, “কাটোয়ায় আমাদের সাংগঠনিক শক্তি কম, এ কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই। যত জন তৃণমূলের একনিষ্ঠ কর্মী আছেন, তাঁদের প্রতি ওয়ার্ডে কয়েকটি করে বাড়ির দায়িত্ব নিতে হবে। সেই সব বাড়িতে ভাব জমানোটাই হবে কাজ।” শহরের নেতাদের প্রতি তাঁর নির্দেশ, “নিজেদের ওয়ার্ড ছেড়ে অন্য ওয়ার্ডে গিয়ে মাতব্বরি করবেন না। ৩১ মার্চ পর্যন্ত নিজের ওয়ার্ডেই পড়ে থাকুন।” সভায় কাটোয়া শহরের ১৯টি ওয়ার্ড থেকেই কর্মীরা এসেছিলেন। তবে পৌনে দু’ঘণ্টা ধরে তাঁদের বিশৃঙ্খলা দেখে বিরক্ত স্বপনবাবু বলেই ফেলেন, “রবি চট্টোপাধ্যায়ের ভয়ে বোধ হয় কর্মীরা হলের বাইরে যাচ্ছেন আর আসছেন।” কাটোয়া শহর কংগ্রেস সভাপতি অমর রামও ক্ষুব্ধ হন।
কাটোয়া শহর ছাড়াও দাঁইহাট ও কাটোয়া ২ ব্লকের জগদানন্দপুরে প্রার্থী সুনীল মণ্ডলকে নিয়ে কর্মিসভা করেন স্বপনবাবু। তিনটি জায়গাই কাটোয়া বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। বর্ধমান পূর্বের সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে যে কাটোয়ার কংগ্রেস কর্মী তথা কান্দি বিমলচন্দ্র আইন কলেজের শিক্ষক তুহিন সামন্ত খুনের ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগ আছে, তা মনে করিয়ে দিতে সিআইডি-র দেওয়া চার্জশিটের ‘সার্টিফায়েড কপি’ তুলে ধরেন স্বপনবাবু। জানান, আট নম্বরে আছে ঈশ্বরবাবুর নাম। মন্ত্রীর দাবি, “এতে সিপিএম নিজের চরিত্রই তুলে ধরল। এ নিয়ে আমরা প্রচার শুরু করে দিয়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy