Advertisement
০৪ মে ২০২৪

নেশার জন্য সিরাপ বিক্রি বাড়ছে, দাবি নজরদারির

শুধু আঁধার নামার অপেক্ষা। হস্টেল বা কলেজ লাগোয়া মাঠে কালো কালো মাথার ছোট ছোট জটলা। দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই। কিন্তু দুর্গাপুর ও কাঁকসার নানা মাঠে পড়ে থাকা বিভিন্ন রকম কাশির সিরাপের ফাঁকা শিশি-বোতল বলে দেয়, জটলায় কী হয়।

অর্পিতা মজুমদার
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৪ ০০:৫৯
Share: Save:

শুধু আঁধার নামার অপেক্ষা। হস্টেল বা কলেজ লাগোয়া মাঠে কালো কালো মাথার ছোট ছোট জটলা। দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই। কিন্তু দুর্গাপুর ও কাঁকসার নানা মাঠে পড়ে থাকা বিভিন্ন রকম কাশির সিরাপের ফাঁকা শিশি-বোতল বলে দেয়, জটলায় কী হয়।

সিরাপ কেনা সহজ। কেউ কোনও সন্দেহ করে না। তাই কমবয়সীদের মধ্যে এই কাশির সিরাপ খেয়ে নেশা করার প্রবণতা বাড়ছে বলে পুলিশ ও নানা কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন নানা কলেজ কর্তৃপক্ষ। সিরাপের কমবয়সী ক্রেতা বেড়েছে গত কয়েক বছরে, জানিয়েছে বিভিন্ন ওষুধ দোকান। এই নেশা ক্যানসার-সহ নানা রোগের জন্ম দিতে পারে বলে জানান চিকিৎসকেরা। মূলত সচেতনতা ও নজরদারির অভাবেই এই প্রবণতা বাড়ছে বলে দাবি তাঁদের।

বিভিন্ন ওষুধের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাশির সিরাপ হিসেবে কোরেক্স ও ফেন্সিডিলএই দু’য়ের বিক্রি সব থেকে বেশি। মূলত কমবয়সীরাই কাশির সিরাপ কিনে সেটা নেশার সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করে। বেশ কয়েকটি কলেজের পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের অনেক সহপাঠী এই নেশার পাল্লায় পড়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিয়মিত সিরাপ নিয়ে নেশা করা কয়েক জন পড়ুয়া জানান, সিরাপ সেবনের পরে মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে। বাইরের জগৎ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন বলে মনে হয়। কিন্তু কাশির সিরাপ খেয়ে নেশা করার কারণ কী? ওই পড়ুয়ারা জানান, মদ্যপানের খরচ বেশি। ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। তুলনায় ওষুধের দোকান থেকে সস্তা সিরাপ কিনে নেশা করা সহজ। প্রকাশ্যে রাস্তাঘাটে এই সিরাপ খেলেও কেউ সন্দেহ করে না। তাই এই নেশার রমরমা বাড়ছে বলে মনে করছে পুলিশ ও নানা কলেজ কর্তৃপক্ষ।

দরকার ছাড়া এই সিরাপ শরীরের যথেষ্ট ক্ষতি করে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানান, নিয়মিত অতিরিক্ত মাত্রায় কাশির সিরাপ সেবনে খাদ্যনালী আক্রান্ত হয়। তা থেকে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। এ ছাড়া মুখের ভিতরে ক্ষত, চর্মরোগ ও স্নায়ুর সমস্যাও হতে পারে। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের প্রাক্তন সুপার মিহির নন্দী বলেন, “যে কোনও নেশাই খারাপ। নেশায় স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয়। এ বিষয়ে আরও সচেনতনা বাড়ানো প্রয়োজন। তার সঙ্গে চাই কঠোর নজরদারি।”

দুর্গাপুরের সরকারি ও বেসরকারি কলেজগুলিতে খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, ক্যাম্পাসে নেশার বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক প্রচার বাড়ানো হলেও নজরদারির তেমন ব্যবস্থা নেই। এক বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের চেয়ারম্যান দুলাল মিত্র জানান, পড়ুয়াদের মধ্যে নেশার কুপ্রভাব নিয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য লাগাতার চেষ্টা চালানো হয়। কলেজের ভিতরে কেউ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ধরা পড়লে কলেজ থেকে বহিষ্কারের মতো কড়া শাস্তি দেওয়া হয়। কিন্তু সমস্যা হল, কলেজের বাইরে কেউ নেশা করলে তা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কর্তৃপক্ষের নেই। দুলালবাবু বলেন, “কাশির সিরাপ দিয়ে নেশা করার প্রবণতা যে ভাবে বাড়ছে সেটা খুবই খুবই দুশ্চিন্তার বিষয়। এ বিষয়ে পড়ুয়া, অভিভাবক এবং মেসের মালিকসবাইকে সতর্ক হতে হবে।”

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে বেআইনি ভাবে কাশির সিরাপ আসে। প্রতি বছর গড়ে এক লরি কাশির সিরাপ আটক করা হয়। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এক পুলিশকর্তা বলেন, “অবৈধ ভাবে কাশির সিরাপের আমদানি আটকাতে রাস্তাঘাটে নজর রাখা হয়। তবে সচেতনতা গড়ে তুলতে না পারলে শুধু আইন দিয়ে এই সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arpita majumder durgapur cough syrup
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE