প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পুজোর আগেই বাড়তি জমি কেনা শুরু করবে এনটিপিসি। সোমবার প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানালেন সংস্থার কর্তারা। কী হিসেবে দর দিয়ে এই জমি কেনা হবে, তা-ও জানিয়ে দিলেন তাঁরা। যত দ্রুত সম্ভব জমি কেনা শুরু করতে এনটিপিসি-র কাছে আর্জি জানান প্রশাসনের কর্তারাও।
সোমবার দুপুরে মহকুমাশাসকের (কাটোয়া) দফতরে জেলা প্রশাসনের আধিকারিক ও স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন এনটিপিসি-র আধিকারিকেরা। জমির দাম নির্ধারণের জন্য এই বৈঠক ডেকেছিলেন মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার।
এনটিপিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে কাটোয়ায় ৬৬০ মেগাওয়াটের দু’টি ইউনিট গড়ার জন্য প্রায় ৮৭০ একর জমি প্রয়োজন সংস্থার। যার মধ্যে বাম আমলে ৫৫৬ একর অধিগ্রহণ করা রয়েছে। প্রকল্প নিয়ে জট কাটাতে তাদের বিভিন্ন দফতরের হাতে থাকা প্রায় ১০০ একর জমি এনটিপিসি-কে দিতে রাজি হয়েছে বর্তমান রাজ্য সরকার। বাকি জমি চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি কিনতে হবে এনটিপিসি-কে।
এ দিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে মূলত দু’টি বিষয়কে ঘিরে— • জমির দাম কী হতে চলেছে? • চাষিদের কাছ থেকে কী ভাবে সরাসরি জমি কিনবে এনটিপিসি?
প্রশাসন সূত্রের খবর, বৈঠকের শুরুতেই এনটিপিসি-র এই প্রকল্পের অতিরিক্ত জেনারেল ম্যানেজার শিবাশিস বসু জানান, গত ১০ জুন সর্বদল বৈঠকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, যে পদ্ধতিতে এর আগে (বাম আমলে) প্রকল্পের ৫৫৬ একর জমি অধিগ্রহণ হয়েছিল, ঠিক সেই পদ্ধতিতে এনটিপিসি-কে চাষিদের কাছ থেকে জমি কিনতে হবে। এই প্রস্তাবে তাঁরা রাজি বলে জানিয়ে দেন শিবাশিসবাবু।
এনটিপিসি কর্তারা জানান, জমি অধিগ্রহণের সময়ে মূল যে দাম দেওয়া হয়েছিল, তার উপরে ভিত্তি করে প্রতি বছর ১২ শতাংশ হারে সুদ দেওয়া হবে। তাতে যা দাম দাঁড়াবে তার সঙ্গে ৩০ শতাংশ হারে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। সেই মতো চুড়পুনি মৌজায় একর প্রতি জমির দাম দাঁড়াচ্ছে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা। এনটিপিসি কর্তারা জানান, প্রতিটি জমির প্লট ধরে দাম নির্ধারণ করে সংস্থার পরিচালন পর্ষদে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। তা অনুমোদন হয়ে এলেই তাঁরা শিবির করে চাষিদের জমির দাম জানিয়ে দেবেন। সংস্থার পূর্বাঞ্চল সদর দফতরের অতিরিক্ত জেনারেল ম্যানেজার (প্রকল্প) শৌভিক শ্রীমানি বলেন, “আমাদের এই প্রকল্পের দিকে সারা দেশ তাকিয়ে রয়েছে। সবাই জানতে চাইছেন, চাষিদের কাছ থেকে কী ভাবে জমি কিনে একটা বৃহৎ প্রকল্প গড়ে উঠছে।”
বৈঠক শেষে বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি অধিগ্রহণ) উৎপল বিশ্বাস বলেন, “আমরা সবাই মিলে এনটিপিসি-কে পুজোর আগেই জমি কেনা শুরু করতে বলেছি।” এনটিপিসি-র এক কর্তাও বলেন, “আমরাও পুজোর আগেই জমি কেনা শুরু করতে চাইছি, যাতে জমি কেনার প্রক্রিয়া ৩১ অক্টোবরের মধ্যে শেষ করা যায়।” এই প্রকল্পের কাজের বরাতের দরপত্র খোলা হবে কাল, বুধবার। যে সংস্থাই কাজের বরাত পাক না কেন, সংস্থার পরিচালন পর্ষদ তাদের অক্টোবরের মধ্যে কাজ শুরুর নির্দেশ দেবে বলে এনটিপিসি সূত্রে জানা গিয়েছে।
এরই মধ্যে কিছু চাষি জমির বেশি দাম চেয়ে প্রশাসন ও এনটিপিসি-কে চিঠি পাঠিয়েছেন। তাঁদের দাবি, প্রকল্পের জন্য জমি দিতে অসুবিধে নেই। তবে, সে জন্য একর পিছু ২৫ লক্ষ টাকা দিতে হবে। জমি দিতে ইচ্ছুক চাষি সাগর বন্দ্যোপাধ্যায়, হিমাংশু ঘোষেরা অবশ্য আশা করছেন, “এনটিপিসি জমি কিনতে শুরু করলে দেখবেন, সবাই চেক নেওয়ার জন্য লাইন দিচ্ছেন।” অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি অধিগ্রহণ) বলেন, “এনটিপিসি-কে গ্রামে গিয়ে ওই চাষিদের বোঝাতে বলা হয়েছে।” এনটিপিসি-র কর্তারা জানান, তাঁরা গ্রামে গিয়ে চাষিদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছেন। জমির জন্য বর্ধিত দাম যাঁরা চাইছেন, তাঁদের সঙ্গেও কথা বলা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy