Advertisement
০২ মে ২০২৪

পানের বস্তা নিয়ে উত্তেজনা, বোমাতঙ্ক শহরে

খাগড়াগড়-কাণ্ডের পরে যেন বোমাতঙ্কে ভুগছে শহর। দোসর জঙ্গি আতঙ্কও। রবিবার সকালে বর্ধমানের বীরহাটা বাজারের কাছে একটি পরিত্যক্ত ঝুড়ি পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। একজন, দু’জন করে ভিড় জমতে থাকে ঝুড়ি ঘিরে। সন্দেহ হয়, ঝুড়িতে বোমা রয়েছে। তড়িঘড়ি পুলিশ খবর দেন এলাকার ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা। পুলিশ আসতে আসতে আতঙ্ক ছড়ায় বাজার এলাকায়।

থানা থেকে পানের বস্তা নিয়ে বেরিয়ে আসছেন ব্যবসায়ী। —নিজস্ব চিত্র।

থানা থেকে পানের বস্তা নিয়ে বেরিয়ে আসছেন ব্যবসায়ী। —নিজস্ব চিত্র।

রানা সেনগুপ্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৪ ০০:১৮
Share: Save:

খাগড়াগড়-কাণ্ডের পরে যেন বোমাতঙ্কে ভুগছে শহর। দোসর জঙ্গি আতঙ্কও।

রবিবার সকালে বর্ধমানের বীরহাটা বাজারের কাছে একটি পরিত্যক্ত ঝুড়ি পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। একজন, দু’জন করে ভিড় জমতে থাকে ঝুড়ি ঘিরে। সন্দেহ হয়, ঝুড়িতে বোমা রয়েছে। তড়িঘড়ি পুলিশ খবর দেন এলাকার ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা। পুলিশ আসতে আসতে আতঙ্ক ছড়ায় বাজার এলাকায়। ঝুড়িটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে জানা যায়, এক পাইকারি পান বিক্রেতা ঝুড়িটিকে রাস্তার একপাশে রেখে আরও ঝুড়ি আনতে গিয়েছিলেন।

তবে এই ঘটনাকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছে পুলিশ। ওই পাঁচ পান বিক্রেতাকে সকাল ১১টা পর্যন্ত থানায় আটক করে রাখা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, তাঁরা বর্ধমানের দক্ষিণ দামোদর, হুগলির বারুইপুর ও আরামবাগের বিভিন্ন গ্রাম থেকে পান সংগ্রহ করে কলকাতায় নিয়ে যায়। জবাব খতিয়ে দেখে তাঁদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।

দুর্গাপুজোর মধ্যে শহরের খাগড়াগড়ের এক বাড়িতে বিস্ফোরণ ও তার সঙ্গে জঙ্গি যোগের কথা জানাজানির পর থেকেই শহরবাসী যেন একটু তৎপর। বিস্ফোরণের পরের দিনই বাবুরবাগের একটি বাড়িতে কয়েকদিন ধরে টানা আলো জ্বলে থাকা খেয়াল করেন প্রতিবেশিরা। থানায় খবর দিতেই পুলিশও ছুটে যায়। দেখা যায়, ঘরটি তালাবন্ধ। নীচের তলার মেসটিও তালাবন্ধ। ওই রাতেই বাড়িটিকে সিল করে দেয় পুলিশ। পরে তদন্তে ওই বাড়ি থেকেই ভাড়াটে হবিবুরের নাম উঠে আসে। খাগড়াগড়ের দোতলা বাড়ি থেকে বিস্ফোরক নিয়ে আসাযাওয়া ছিল বলেও গোয়েন্দারা জানতে পারেন। বিস্ফোরণ-কাণ্ডের পরে হাটুদেওয়ান পীরতলা এলাকার একটি বাড়ির ভাড়াটেরাও গা ঢাকা দেয়। বাড়ির মালিক মানোয়ার হোসেন বৃহস্পতিবার নিজে থানায় এসে তথ্য দেওয়ার পরে পুলিশ বাড়িটিতে তল্লাশি চালায়। তদন্তে জানা যায়, বীরভূমের কীর্ণাহারের বাসিন্দা কাপড়ের ব্যবসায়ী শেখ তালেব নামে এক ব্যক্তি ওই বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন। ঈদে দেশে যাওয়ার নাম করে গিয়ে আর ফেরেননি তাঁরা। এই ভাড়াটেদের সঙ্গেও খাগড়াগড়-কাণ্ডের জঙ্গিদের যোগাযোগ রয়েছে বলে জেলা পুলিশের দাবি। রবিবার মানোয়ার-সহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের জেরাও করে সিআইডি।

শহরবাসীর এই তৎপরতা দেখে খুশি পুলিশ, প্রশাসনও। সিআইডির কর্তা সব্যসাচী রমন মিশ্রও বলেন, “মানুষের তৎপরতায় শহরে পরপর দুটি জঙ্গি ডেরার সন্ধান মিলেছে। মানুষ যে সচেতন হয়েছেন তাঁদের দু’বার থানায় খবর দেওয়ার ঘটনাতেই তা স্পষ্ট।”

তবে খাগড়াগড়-কাণ্ডের পর থেকেই বাড়ি বাড়া দেওয়ার আগে ভাড়াটে সংক্রান্ত খোঁজখবর করা, পুলিশ জানানোর মতো বিষয়গুলি নিয়ে নানা মহল থেকে দাবি উঠছে। শনিবার জেলা যুব কংগ্রেস নেতা অভিজিৎ ভট্টাচার্যেরা পুলিশ সুপারের কাছে পেশ করা স্মারকলিপিতে অভিযোগ করেন, বর্ধমানের বেশ কিছু হোটেল বা লজে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়নি। ওই লজ বা হোটেলগুলিতে অবিলম্বে তা বসানোর দাবিও করেন তাঁরা। এছাড়া, বাড়ি ভাড়া নেওয়া ব্যক্তির ছবি ও সরকারি পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি থানায় জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করার কথাও বলা হয়। অভিজিৎবাবু ও জেলা কংগ্রেস নেতা কাশীনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, খাগড়াগড়ে বাড়ি ভাড়া নেওয়া লোকেদের ব্যাপারে ওই প্রথা অনুসৃত হলে, এভাবে জঙ্গিরা নির্বিবাদে ওখানে বোমা-বিষ্ফোরক তৈরি করতে পারত না।”

তবে অনেক বাড়িওয়ালাই এই ক’দিনে ‘শিক্ষা’ নিয়েছেন। খোঁজখবর না করে, সহজে কাউকে বাড়ি ভাড়া দিতে চাইছেন না তাঁরা। শহরের খাগড়াগড় এলাকারই শেখ জাহাঙ্গির নামে এক বাড়ি মালিক বলেন, “বিস্ফোরণের পরে আতঙ্কে ভুগছেন সমস্ত বাড়ি মালিকই। অনেকেই বাড়ি ভাড়ার টাকায় সংসার চালাতেন। এখন বুঝে শুনে পা ফেলছেন তাঁরাও। পুলিশের তরফেও ভাড়াটেদের ব্যাপারে ভাল করে খোঁজ নিয়ে থানায় জানানোর কথা বলা হচ্ছে।” যদিও জেলা পুলিশ সুপারের দাবি, “এই সতর্কতা নতুন নয়। প্রতি বছরই ২১ জুলাই সন্ত্রাসবিরোধী দিবস হিসেবে পালন করি আমরা। সে দিন নানা জায়গায় সন্ত্রাসবাদীদের হামলা নিয়ে প্রকাশিত খবর ও ছবি রাখা হয়। শহরবাসীদের বাড়ি ভাড়া দেওয়া নিয়েও সচেতন করা হয়। ভাড়াটেদের সঙ্গে সম্পর্কে তথ্য থানায় জানিয়ে রাখার কথাও বলা হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rana sengupta birhata market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE