Advertisement
০৮ মে ২০২৪

প্রতিমার দাম বাড়ায় ক্রেতার ঢল কম, বলছে কুমোরপাড়া

রাস্তার মোড়ে মণ্ডপের বাঁশ, জামাকাপড়ের দোকানে উপচে পড়া ভিড়, শহরে ঘোরা প্রচার ভ্যানপ্রতি মুহূর্তে মনে করিয়ে দিচ্ছে পুজো আসতে আর দেরি নেই। কিন্তু যে পাড়ায় ব্যস্ততা তুঙ্গে হওয়ার কথা সেই কুমোরপাড়ায় যেন দুশ্চিন্তার ছায়া। মৃৎশিল্পীরা জানাচ্ছেন, প্রতিমা গড়ার উপকরণের দাম বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। অথচ মূর্তির দাম সেভাবে বাড়ানো যাচ্ছে না। কারণ তাতে ক্রেতা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয় রয়েছে।

বরাত মেলেনি, তাই রং পড়েনি প্রতিমায়। বর্ধমানের কুমোরপাড়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

বরাত মেলেনি, তাই রং পড়েনি প্রতিমায়। বর্ধমানের কুমোরপাড়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

রানা সেনগুপ্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১১
Share: Save:

রাস্তার মোড়ে মণ্ডপের বাঁশ, জামাকাপড়ের দোকানে উপচে পড়া ভিড়, শহরে ঘোরা প্রচার ভ্যানপ্রতি মুহূর্তে মনে করিয়ে দিচ্ছে পুজো আসতে আর দেরি নেই। কিন্তু যে পাড়ায় ব্যস্ততা তুঙ্গে হওয়ার কথা সেই কুমোরপাড়ায় যেন দুশ্চিন্তার ছায়া।

মৃৎশিল্পীরা জানাচ্ছেন, প্রতিমা গড়ার উপকরণের দাম বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। অথচ মূর্তির দাম সেভাবে বাড়ানো যাচ্ছে না। কারণ তাতে ক্রেতা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয় রয়েছে। তার উপর নাগাড়ে বৃষ্টি, স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় মূর্তি শুকোনো মুশকিল হয়ে পড়েছে। সবমিলিয়ে সমস্যায় পড়েছেন জেলার মৃৎশিল্পীরা। বহু প্রতিমা এখনও অর্ডারহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে বলেও তাঁদের দাবি।

বর্ধমানের খালের বিল মাঠের মৃৎশিল্পী সমীর পাল জানান, প্রতিমা তৈরির সব জিনিসের দামই শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ বেড়েছে। কিছু জিনিস, যেমন মাটির দাম প্রায় আড়াইগুন বেড়েছে। তিনি বলেন, “আগে এঁটেল মাটি কিনতে হতো ২০ টাকা বস্তা। এখন তার দাম ৫০ টাকা বস্তা। প্রতিমার রং কিনতাম ৪০ টাকা কেজি। তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকায়। এ ছাড়া শোলার মুকুট , জরি, সুতো সব কিছুরই ২০-২৫ শতাংশ বেড়েছে। ফলে যে মণ্ডপে আগে পাঁচ থেকে কুড়ি হাজার টাকা দরে প্রতিমা বিক্রি করতাম, তার দাম বাধ্য হয়েই বাড়াতে হচ্ছে। তাতে আবার অনেক ক্রেতা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।” তাঁর আফশোষ, “গত বার আমার ১৬টি মূর্তির অর্ডার এ বারও তাই রয়েছে। কিন্তু এ বার যে পাঁচটা অতিরিক্ত মূর্তি বানিয়েছিলাম, তার বরাত এখনও মেলেনি। মনে হচ্ছে সেগুলো পড়েই থাকবে।” একই সুর বড় নীলপুরের মৃৎশিল্পীদের। শিল্পী কার্তিক পালের কথায়, “যে হারে উপকরণের দাম বেড়েছে সে হারে মূর্তির দাম বাড়ানো সম্ভব হয় না।” তাঁর দাবি, “পুজোর উদ্যোক্তারা আলোকসজ্জা, প্যান্ডেলে লাখ টাকা খরচ করলেও মূর্তির দাম হাজার টাকা বাড়াতে চান না।”

প্রতিমা গড়ার উপকরণের দাম বাড়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন শহরের রং ব্যবসায়ীরাও। বর্ধমানের বিসি রোডের মোবারক বিল্ডিংয়ের এক রং ব্যবসায়ী, কাশীনাথ দে বলেন, “৬০ বছরের দোকান আমাদের। প্রতি বছর কলকাতা হোলসেল বাজারে রংয়ের দাম বাড়ছে, আর আমাদের লাভ কমছে। এ বারেও শোলা, রাংতা, কিরণ, বকরী, রঙিন দড়ি, ফিতে ইত্যাদির দাম শতকরা ১৫ ভাগ বেড়েছে। কেজি প্রতি রংয়ের দামই প্রায় ১০ টাকা বেড়েছে। ফলে বিক্রি কিছুটা হলেও কমেছে।”

প্রতিমার দাম বাড়ায় তাদের বাজেট বেড়ে গিয়েছে বলে দাবি শহরের পুজো কমিটিগুলির। শহরের অন্যতম ক্লাব লাল্টু স্মৃতি সঙ্ঘ এ বার বিপদতারিণী সহস্র হাতের দুর্গা সাজাবে মণ্ডপে। ফলে বাজেট বেড়ে হয়েছে ১৫ লক্ষ টাকা। গত বার তা ছিল ১২ লক্ষ। ক্লাবের সম্পাদক তন্ময় সামন্ত বলেন, “বাড়তি তিন লক্ষ টাকা কোথা থেকে আসবে তা নিয়ে আমাদের রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে। সেভাবে বিজ্ঞাপনও মিলছে না। ক্লাবের কর্তাদের নিজেদের থেকেই ওই টাকা তুলতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rana sengupta pujo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE