Advertisement
E-Paper

প্রভাব পড়বে কি পুরভোটে, আশঙ্কা তৃণমূলের অন্দরেই

মর্যাদার লড়াইয়ে হারের ধাক্কা যে দলের জেলা নেতাদের উপরে নেমে আসতে চলেছে, সে ইঙ্গিত আগে মিলেছিল। দুই নেতার উপরে নেমে এল সেই খাঁড়া। মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিতে হল আসানসোল উত্তরের বিধায়ক মলয় ঘটক। দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) যুব সভাপতির পদ থেকে সরানো হয়েছে মলয়বাবুর ভাই অভিজিৎ ঘটককেও। এই পরিস্থিতিতে আসন্ন আসানসোল পুরভোটের লড়াই আরও কঠিন হয়ে গেল বলে মনে করছেন শহরের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশ। যদিও ভোটের আগে দলের এই দুই বড় নেতার ক্ষমতা খর্ব নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের রোষের মুখে পড়তে চাননি শিল্পাঞ্চলের কোনও তৃণমূল নেতাই।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৪ ০০:১৮

মর্যাদার লড়াইয়ে হারের ধাক্কা যে দলের জেলা নেতাদের উপরে নেমে আসতে চলেছে, সে ইঙ্গিত আগে মিলেছিল। দুই নেতার উপরে নেমে এল সেই খাঁড়া। মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিতে হল আসানসোল উত্তরের বিধায়ক মলয় ঘটক। দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) যুব সভাপতির পদ থেকে সরানো হয়েছে মলয়বাবুর ভাই অভিজিৎ ঘটককেও। এই পরিস্থিতিতে আসন্ন আসানসোল পুরভোটের লড়াই আরও কঠিন হয়ে গেল বলে মনে করছেন শহরের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশ। যদিও ভোটের আগে দলের এই দুই বড় নেতার ক্ষমতা খর্ব নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের রোষের মুখে পড়তে চাননি শিল্পাঞ্চলের কোনও তৃণমূল নেতাই।

লোকসভা ভোটের জন্য প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর থেকেই আসানসোলে তৃণমূলে চাপানউতোর তৈরি হয়েছিল। বহিরাগত প্রার্থী নিয়ে দলের একাংশ সন্তুষ্ট ছিল না। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মলয়বাবুকে নির্বাচনের ব্যাপারে দায়িত্ব দেয়। কিন্তু তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেন প্রায় সত্তর হাজার ভোটে হেরে যান বিজেপি-র বাবুল সুপ্রিয়ের কাছে। ভোটের ফল থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়, আসানসোল লোকসভা আসনের অন্তর্গত পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্রে (যার মধ্যে মলয়বাবুর নিজের কেন্দ্র আসানসোল উত্তরও রয়েছে) পিছিয়ে ছিলেন দোলা। শুধু তাই নয়, শীর্ষ নেতৃত্বের মাথাব্যথা আরও বাড়িয়ে দেখা যায়, আসানসোল পুরসভার ৫০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৫টিতেই এগিয়ে রয়েছে বিজেপি! এই তথ্য হজম করা সম্ভব হয়নি তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বে কাছে। বিশেষ করে যেখানে ২০০৯ সালে আসানসোলের মতো দক্ষিণবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অঞ্চল দীর্ঘ চার দশক পরে বামেদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে পেরেছিল তৃণমূল ও কংগ্রেসের জোট।

লোকসভার ফল বেরোনোর রাতেই মলয়বাবুকে শীর্ষ তৃণমূল নেতৃত্ব কলকাতায় ডেকে পাঠানোয় বোঝা গিয়েছিল, এই হার ভাল ভাবে নেননি তাঁরা। তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূল নেত্রী এখন তাঁকে ইস্তফার নির্দেশ দেন। অভিজিৎবাবুকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে দলনেত্রীর নির্দেশ মতো। আসানসোলের মেয়র তথা বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় ও কুলটির বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়কেও ইস্তফার নির্দেশ দেওয়া হতে পারে বলে দলের একটি সূত্রের দাবি। তাপসবাবু ও উজ্জ্বলবাবুর অবশ্য দাবি, এখনও তাঁরা এই ধরনের কোনও নির্দেশ পাননি। মলয়বাবুর ইস্তফা প্রসঙ্গে তাঁদের দু’জনেরই বক্তব্য, “দলীয় নেতৃত্ব যেমন ভাল বুঝেছেন, তেমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলা উচিত নয়।”

মলয়বাবুর ইস্তফা ও অভিজিৎবাবুকে পদ থেকে সরানোর প্রভাব কতটা পড়তে পারে আসন্ন দুই পুরসভার ভোটে? শিল্পাঞ্চলের তৃণমূল নেতারা এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিছু নেতা-কর্মী জানান, তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলে রয়েছেন মলয়বাবু। আসানসোল শিল্পাঞ্চলে সংগঠন দাঁড় করানোর পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে তাঁর। খনি ও নানা কল-কারখানায় দলের শ্রমিক সংগঠনও গড়ে তুলেছেন তিনি। শিল্পাঞ্চল যখন বামেদের দুর্গ, সেই সময়েও ২০০১ সালে মলয়বাবু তৎকালীন হিরাপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন।

প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও অনেক তৃণমূল নেতাই বলছেন, সিপিএমের সঙ্গে লড়াই করে দলকে এই অঞ্চলে একটি শক্ত জায়গায় এনে দেওয়ার পিছনে যিনি বড় ভূমিকা নিয়ে এসেছেন, পুরভোটের মুখে তাঁকে ‘শাস্তি’ দেওয়াটা কতটা যুক্তিযুক্ত হল? তাঁদের মতে, পুরভোটের লড়াই রীতিমতো কঠিন। এখন ইস্তফার পরে মলয়বাবু যদি পুরভোটে দলের হয়ে পূর্ণ উদ্যমে না নামেন, তাহলে দল আরও বিপাকে পড়বে বলে মনে করছেন তাঁদের অনেকেই। এ দিন অনেক চেষ্টা করেও মলয়বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

মলয়বাবুর ইস্তফা বা অভিজিৎবাবুর অপসারণ কি পুরভোটে কোনও প্রভাব ফেলবে? সিপিএম নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।” বিজেপি-র জেলা সভাপতি নির্মল কর্মকারের প্রতিক্রিয়া, “এ সব ওদের দলের নিজস্ব ব্যাপার। এ নিয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই। তবে পুরভোটের জন্য আমরা ঘর গোছাচ্ছি।”

sushanta banik moloy ghatak abhijit ghotok
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy