কাঁটাতারে ঘেরা এনটিপিসি প্রকল্প চত্বর।—নিজস্ব চিত্র।
সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বৃহস্পতিবার কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জমি কেনার অনুমতি দিতে পারে এনটিপিসি-র পরিচালন পর্ষদ। সেই দিন কেন্দ্রীয় সংস্থাটির পরিচালন পর্ষদের বৈঠক হবে। কাটোয়া প্রকল্পের জমি কেনার জন্য চাষি এবং এনটিপিসি-র মধ্যে চুক্তিপত্র সংক্রান্ত রিপোর্ট পরিচালন পর্ষদের বৈঠকের আগে জমা পড়ে যাবে বলে সংস্থার কর্তাদের আশা।
সংস্থার মানবসম্পদ দফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক বলেন, “কলকাতা থেকে বুধবার বিকেলে চুক্তিপত্র সংক্রান্ত রিপোর্ট দিল্লিতে সংস্থার দফতরে জমা পড়ে যাবে। সংস্থার চেয়ারম্যান তা দেখবেন। তার পরে পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে চুক্তিপত্রের রিপোর্ট পাঠানো হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে কাটোয়া প্রকল্পের জমি কেনার জন্য পরিচালন পর্ষদ ওই দিনই অনুমতি দিয়ে দেবে।”
এনটিপিসি সূত্রে জানা যায়, কাটোয়া প্রকল্পের জন্য তাদের আনুমানিক ৮৯২ জন চাষির কাছ থেকে প্রায় ২০০ একর জমি কিনতে হবে। এই প্রকল্পের জন্য বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ৫৫৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সেই জমি এনটিপিসি-র হাতে তুলে দেয়। সেই সঙ্গে তারা জানিয়ে দেয়, রাজ্যে শিল্প করতে হলে সংস্থাকেই জমি জোগাড় করতে হবে, রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণ করবে না। এই কেন্দ্রীয় সংস্থাটি এখনও পর্যন্ত দেশের কোথাও জমি কিনে প্রকল্প করেনি। এই অবস্থায় চাষিদের সঙ্গে এক বছরের চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নেয় এনটিপিসি। সেই মতো গত বুধবার কাটোয়ার চুড়পুনি গ্রামে এক বাড়িতে ৫০ জন চাষির সামনে চুক্তিপত্র পেশ করেন এনটিপিসি-র কর্তারা। চাষিরা ইংরেজির বদলে বাংলায় চুক্তিপত্র দেওয়ার অনুরোধ জানান। সেই অনুরোধ মেনে এনটিপিসি সোমবার চাষিদের বাংলায় লেখা চুক্তিপত্রের খসড়া দেখায়। সেই চুক্তিপত্র পড়ে সোম ও মঙ্গলবার ২৪ জন চাষি তাতে সই করে এনটিপিসি-র কাটোয়ার ফিল্ড অফিসে জমা দিয়েছেন।
এত কম চাষি চুক্তিপত্রে সই করলেন কেন? বাকি চাষিরা কি জমি দিতে আগ্রহী নন? এই প্রশ্নে সংস্থার ওই কর্তা বলেন, “আমাদের হাতে মাত্র দেড় দিন সময় ছিল। আমরা চাষিদের দফতরে ডেকে পাঠিয়েছিলাম। তাঁরা এসে সই করে জমা দিয়েছেন। মঙ্গলবার বেলা ১২টার মধ্যে ওই চুক্তিপত্র কাটোয়া থেকে কলকাতায় পাঠাতে হয়েছে। আমরা চেয়েছি, পরিচালন পর্ষদের এই মাসের বৈঠকেই চুক্তিপত্রের রিপোর্ট জমা পড়ুক। তা না হলে জমি কেনার অনুমতি পেতে আরও এক মাস পিছিয়ে যাবে। এত কম সময়ের মধ্যে চাষিদের উৎসাহ দেখে আমরা অবাক হয়েছি। এক বার জমি কেনা শুরু হয়ে গেলে আমাদের আর ভাবতে হবে না।”
চুড়পুনির চাষি সাগর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এনটিপিসি প্রাথমিক ভাবে ৩০ জনের কাছ থেকে চুক্তিপত্র চেয়েছিল। তাতে চাষিরা সাড়া দিয়েছেন। চুক্তিপত্রে জমিমালিকের নাম, প্রকল্প এলাকায় তাঁর কতটা জমি এনটিপিসি-কে বিক্রি করবেন, সেই জমির বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। এ ছাড়াও মূল দর, তার সঙ্গে ১২ শতাংশ হারে সুদ ও ৩০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ নিয়ে জমির মোট দাম লেখা রয়েছে। ওই চুক্তিপত্রে যিনি সই করবেন, তাঁর কাছ থেকেই জমি কিনবে এনটিপিসি।”
রাজ্য সরকার এই প্রকল্পের জন্য ১০০ একর জমি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল। তবে বর্ধমানের জেলাশাসকের দেওয়া রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ১৭.৭৬ একর খাস এবং কৃষি দফতরের হাতে থাকা ২৭.৭৩ একর, মোট ৪৫.৪৯ একর জমি দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে এনটিপিসি-কে দেওয়া হয়েছে। জমির চরিত্র বদল না করে বাকি ৫৫.১৮ একর জমির তলা দিয়ে জল আসা-যাওয়ার পাইপ লাইন বসাতে পারবে এনটিপিসি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy