বেহাল এক প্রকল্প। নিজস্ব চিত্র।
মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকে যে এলাকা ‘ব্ল্যাক জোন’ হিসেবে চিহ্নিত, যেখানে নলকূপের জলও পুরোপুরি নিরাপদ নেই, সেই পূর্বস্থলী ২ ব্লকেই ভেঙে পড়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের দু’টি জলপ্রকল্প। এলাকাবাসীর দাবি, নিয়মিত পরিস্রুত জল তো পাওয়া যায়ই না, উপরন্তু দেখভালের অভাবে জলাধারে ফাটল ধরেছে পাটুলি ও পূর্বস্থলীর ওই দুটি প্রকল্পে।
১৯৮২ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক সাহায্যে বর্ধমানে ১৬টি জলপ্রকল্প তৈরি হয়। যার মধ্যে ছিল এই দু’টিও। পরে একটি সংস্থাকে প্রকল্পগুলি দেখভালের দায়িত্ব দেয় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। ১৯৯৫ সাল থেকে অবশ্য জেলা পরিষদের হাতে চলে যায় প্রকল্পগুলি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন আগে তৈরি দু’টি জলাধারের দশাই করুণ। ফাটল এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে কোনও মুহূর্তে তা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা লেগে থাকে। এ ছাড়া অযত্নে প্রকল্প চত্বর জুড়ে আগাছা, জঙ্গল গজিয়ে গিয়েছে বলেও বাসিন্দাদের দাবি। দু’টি জলপ্রকল্পে অপারেটর, রাতের নিরাপত্তারক্ষী-সহ ১০ জন কর্মীর থাকায় জায়গা রয়েছে। অথচ দিনের পর দিন দেখভালের অভাবে তা বেহাল পড়ে রয়েছে। সিমেন্টের চাঁই ভেঙে পড়ছে যন্ত্রাংশ রাখার ঘর থেকেও। পূর্বস্থলী এলাকার জলপ্রকল্পটিতে ঢোকার মুখের লোহার দরজা ভেঙে পড়েছে কয়েক বছর আগেই। দীর্ঘদিন ধরে জ্বলে না প্রকল্পের আলো। নষ্ট হয়ে গিয়েছে দরজা-জানালাও। বাসিন্দাদের দাবি, বছর চারেক আগেও মাস দুয়েক পরপর ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে পরিষ্কার করা হত জলাধার। কিন্তু বর্তমানে সে সব পাট উঠে গিয়েছে। সব থেকে খারাপ দশা পাইপ লাইনের। পুরনো পাইপের উপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করায় তা ফেটে যায়। ফলে এক দিকে দল বেরিয়ে এলাকা জলমগ্ন হয়। আবার ফাটা পাইপ দিয়ে বাইরের আবর্জনা ঢুকে জল দূষিত করে। বর্ষাকালে এই সমস্যা বাড়ে বলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি।
পাটুলি জলপ্রকল্পের আওতায় পিলা, সন্তোষপুর, লক্ষ্মীপুর, নারায়ণপুর, মামুদপুর, নতুনপাড়া, ঘোষপাড়া, হালদারপাড়া, দাসপাড়া, বাজারপাড়ার মতো বহু এলাকা পড়ে। সব মিলিয়ে ১৭০টি ট্যাপ রয়েছে ওই এলাকায়। তবে বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে লাফিয়ে লাফিয়ে জনসংখ্যা বাড়লেও জলের সরবরাহ সেভাবে বাড়েনি। ফলে অনেক এলাকাতেই জল কম মিলছে বলে অভিযোগ। সন্তোষপুর এলাকায় বহু কল থেকে তো সুতোর মতো সরু হয়ে জল পড়ছে বলেও বাসিন্দাদের দাবি। পাটুলির বাসিন্দা বিজন মণ্ডলের অভিযোগ, নিয়মিত সংস্কার না হওয়ায় এলাকার বিশুদ্ধ জল পরিষেবার এই পরিকাঠামো ক্রমশ ভেঙে পড়ছে। তাছাড়া পাইপলাইনে ফাটল বা আর কোনও সমস্যা দেখা দিলে তা মেরামত করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। অথচ, প্রশাসন এ দু’টি প্রকল্প নিয়েই উদাসীন বলে বাসিন্দাদের দাবি। পাটুলি প্রকল্পের কর্মী দ্বারকানাথ দাস, গোবিন্দ পাত্ররা বলেন, “অবিলম্বে প্রকল্প নিয়ে ভাবা উচিত প্রশাসনের। না হলে সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে।”
সম্প্রতি কার্তিক পুজো উপলক্ষে পূর্বস্থলীর একটি পুজো মণ্ডপে এসেছিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সেখানে পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় ওই দুই জলপ্রকল্পের বেহাল পরিকাঠামোর কথা মন্ত্রীকে জানান। সুব্রতবাবু জানান, আর্সেনিক কবলিত এলাকায় দূষণমুক্ত পানীয় জল অত্যন্ত জরুরি। তপনবাবুর অনুরোধ রাখার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি। পরে তপনবাবু বলেন, “এর আগে বিধানসভায় এলাকার জল প্রকল্পদুটি উন্নয়নে সরব হয়েছিলাম। এ বার পঞ্চায়েত মন্ত্রীকে কাছে পেয়ে তাঁকে প্রকল্প দুটির তলার পাইপ তুলে নতুন করে সাজানোর কথা বলেছি। মন্ত্রী আশ্বাসও দিয়েছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy