Advertisement
০৬ মে ২০২৪

ফেরত নেই আমানত, বিক্ষোভ চলছেই

কেউ কেউ টাকা ফেরত না পেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। অনেক অফিস ‘সিল’ করে দিয়েছে পুলিশ। ধরা হয়েছে নানা সংস্থার আধিকারিককেও। কিন্তু টাকা ফেরতের আশায় রয়েছেন অনেকেই। তাই পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। মাঝে-মধ্যে লগ্নি সংস্থার সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন দল বেঁধে।

সুশান্ত বণিক ও সুব্রত সীট
আসানসোল ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৪ ০১:০৬
Share: Save:

কেউ কেউ টাকা ফেরত না পেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। অনেক অফিস ‘সিল’ করে দিয়েছে পুলিশ। ধরা হয়েছে নানা সংস্থার আধিকারিককেও। কিন্তু টাকা ফেরতের আশায় রয়েছেন অনেকেই। তাই পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। মাঝে-মধ্যে লগ্নি সংস্থার সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন দল বেঁধে। কিন্তু টাকা ফেরত না পেয়ে পড়ছেন অথৈ জলে।

গত বছর এপ্রিলে সারদা-কাণ্ডের পরে একের পর এক লগ্নি সংস্থায় আমানতকারীরা টাকা ফেরত চাইতে শুরু করেন। অনেক অফিসেই ঝাঁপ ফেলে দেয় নানা সংস্থা। আসানসোল ও দুর্গাপুর মহকুমায় এই সব সংস্থাগুলি যে রীতিমতো জাল বিস্তার করেছিল, তা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় বেশ কিছু সংস্থার কর্মী-আধিকারিককে। তাতে শেষ সংযোজন বুধবার কুলটির সীতারামপুর থেকে একটি সংস্থার ডিরেক্টরের গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা।

রাজ্যে সারদা-কেলেঙ্কারি সামনে আসার পরে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে আসানসোল উত্তর ও রানিগঞ্জ থানাতেও আমানতকারীরা অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। পুলিশ আসানসোল রেলপাড় এলাকা থেকে এক এজেন্টকে গ্রেফতারও করে। এর পরেই কুলটির নিয়ামতপুরে জাঁকিয়ে বসা একটি লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়। বেশ কয়েক জন আমানতাকারী বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেন। নিয়মতপুরে সংস্থাটির অফিসে ভাঙচুরও হয়। পুলিশ গিয়ে এক আধিকারিককে গ্রেফতার করে ও অফিসটি ‘সিল’ করে দেয়। আমানতকারীরা অবশ্য কোনও টাকা এখনও ফেরত পাননি। তাঁরা মাঝে মাঝেই পুলিশের কাছে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।

চিত্তরঞ্জন থানায় অভিযোগ হয়েছে আরও একটি সংস্থার বিরুদ্ধে। আসানসোলের সেনর্যালে রোডের উপরে এই রকমই এক লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে প্রায় দিনই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন আমানতকারীরা। রানিগঞ্জের রতিবাটি এলাকায় ওই সংস্থার প্রচুর আমানতকারী থাকেন। তাঁদের দাবি, মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরেও টাকা ফেরত মিলছে না। কিন্তু তাঁরা থানায় অভিযোগ জানাচ্ছেন না। কারণ, তাতে ভবিষ্যতে টাকা ফেরতের সম্ভাবনা আরও কমবে বলে তাঁদের ধারণা।

বুধবার কুলটি থেকে এক লগ্নি সংস্থার যে আধিকারিককে গ্রেফতার করা হয় সেই মধুমিতা অধিকারীকে বৃহস্পতিবার জামিনে মুক্তি দিয়েছে আদালত। ওই সংস্থার বিরুদ্ধে রানিগঞ্জের এক বাসিন্দা প্রতারণার অভিযোগ করেছিলেন। জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের সত্ত্বেও ওই আধিকারিক ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়া পেলেন কী করে, সে প্রশ্নে মামলার সরকারি আইনজীবী সুস্মিতা সেন চক্রবর্তী বলেন, “অভিযুক্ত সংস্থাটির আধিকারিকেরা অনেক আগেই হাইকোর্টে টাকা ফেরত দেওয়ার সময় বাড়াতে চেয়ে আবেদন করেছিলেন। আদালত ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে টাকা ফেরতের সময়সীমা ঠিক করে দিয়েছে। তার ভিত্তিতেই ধৃত আধিকারিক আসানসোল আদালতে জামিন পেয়েছেন।”

দুর্গাপুরেও নানা লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে পুলিশে জমা পড়া অভিযোগের সংখ্যা কম নয়। কুলটিতে যে সংস্থার আধিকারিক বুধবার গ্রেফতার হন, সেটির একটি অফিস দুর্গাপুর সিটি সেন্টারের সরোজিনী নাইডু রাস্তায় ছিল বলে আমানতকারীদের দাবি। বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে দেখা গিয়েছে, এখন অন্য একটি সংস্থার অফিস চলছে। সেটির কর্মীরা জানান, ওই লগ্নি সংস্থা কয়েক মাস আগেই পাততাড়ি গুটিয়েছে। এই সংস্থার বিরুদ্ধে অবশ্য দুর্গাপুরে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে দিন দুয়েক আগেই অন্য একটি লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন শান্তিবন পার্কের আমানতকারী সুনীল শর্মা। তিনি জানান, ২০১২ সালের ৩১ মার্চ থেকে ২০ অগস্টের মধ্যে তিনি মোট দেড় লক্ষ টাকা এমআইএস খাতে লগ্নি করেন। এ বছর জানুয়ারি থেকে কোনও সুদ পাচ্ছেন না। ফেরত পাননি আসলও। বৃহস্পতিবার দেখা গিয়েছে, শহরের বেঙ্গল অম্বুজা এলাকায় এই সংস্থার অফিসটিও গুটিয়ে গিয়েছে।

পুলিশ জানায়, মাসখানেক আগে আমানতকারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি লগ্নি সংস্থার অফিস ‘সিল’ করে দেওয়া হয়। প্রায় ৫০ জন আমানতকারী একযোগে পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই সংস্থায় নানা খাতে লগ্নি করেছিলেন তাঁরা। আগে মেয়াদ শেষে টাকা ফেরত পেতে কোনও সমস্যা হত না। কিন্তু শেষ পাঁচ-ছ’মাস তা অনিয়মিত। অনেকেই টাকা ফেরত পাননি। পুলিশ সংস্থার অফিসে গিয়ে দুই কর্মীকে গ্রেফতার করে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের এপ্রিলে দুর্গাপুরের মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায় শহরের সিটি সেন্টার এলাকার ব্যবসা করে এমন ৫২টি আর্থিক সংস্থার কাজকর্ম খতিয়ে দেখার আর্জি জানিয়ে জেলাশাসককে একটি চিঠি পাঠান। জেলাশাসক পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন। এই সব সংস্থার বিরুদ্ধে আমানতকারীদের অভিযোগও জমা পড়তে থাকে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০টি সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব জানিয়েছেন, আমানতকারীদের তরফে অভিযোগ পেলেই সংশ্লিষ্ট থানা তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE