হকারদের দেওয়া টাকা ফেরত পেয়ে খুশি বৃদ্ধা। নিজস্ব চিত্র।
বছরভর ট্রেনে ভিক্ষা করে যেটুকু আয় করেছিলেন, ট্রেন ধরার তাড়ায় সেই ব্যাগটিই স্টেশনে ফেলে চলে যান বৃদ্ধা। কাটোয়া স্টেশনের দুই হকাররা ব্যাগটি পেয়ে দেখেন, তাতে কয়েক হাজার খুচরো টাকা রয়েছে। সযত্নে ব্যাগটি নিজেদের কাছে রেখে দেন তাঁরা। মঙ্গলবার সকালে নবদ্বীপ থেকে ওই বৃদ্ধা কাটোয়ায় এলে তাঁর হাতে টাকার ব্যাগটি তুলে দেন। এমনকী দিনভর ওই বৃদ্ধাকে কাছে রেখে রাতে বাড়ি শিলিগুড়ির উদ্দেশে কামরূপ এক্সপ্রেসেও তুলে দেন।
কাটোয়া আরপিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ির গেটবাজার এলাকার বাসিন্দা সুরবালা মণ্ডল ট্রেনে ভিক্ষা করেই জীবন কাটান। সোমবার ভোর রাতে শিলিগুড়ি থেকে ভিক্ষা করতে করতে কাটোয়াতে নামেন তিনি। দিনভর কাটোয়ায় কাটিয়ে রাতের ট্রেনে নবদ্বীপ যান। নবদ্বীপে যাওয়ার পথেই ট্রেন ধরার তাড়াহুড়োয় কাটোয়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে একটি ব্যাগ ফেলে যান তিনি। পরে ব্যাগটি দেখতে পান বাপি মজুমদার ও তপন হাজরা নামে কাটোয়ার দুই হকার। ব্যাগে বেশ কয়েক হাজার টাকার খুচরো ছিল। কেউ ফেলে গিয়েছে বুঝে নিজেদের কাছেই ব্যাগটি রেখে দেন তাঁরা। পরে মঙ্গলবার সকালে কাটোয়া স্টেশনে সুরবালাদেবীকে ব্যাগের খোঁজ করতে দেখে ফিরিয়ে দেন ব্যাগটি। বাপি ও তপন বলেন, ‘‘এক নম্বর প্লাটফর্মে সন্ধ্যা সাতটা থেকে ওই বৃদ্ধা বসেছিলেন। ট্রেন চলে যাওয়ার পরে বুঝতে পারি উনিই ব্যাগ ফেলে গিয়েছেন। আমরা এরপিএফকে বলে ব্যাগটি নিজেদের কাছে রাখি। সকালে ব্যাগ ফেরত দিয়ে নিশ্চিন্ত লাগছে।’’ শুধু ব্যাগ ফিরিয়েই নয়, এ দিন হকারেরা ওই বৃদ্ধাকে সারাদিন খাইয়েছেন, আবার রাতে কামরূপ ট্রেনেও তুলে দিয়েছেন। তৃণমূলের হকার ইউনিয়নের সভাপতি ছোটন মোদক বলেন, “কাটোয়া স্টেশনে সব হকাররাই নিজেদের সামর্থ্য মতো সাহায্য করেছেন।”
আর বছর সত্তরের সুরবালাদেবী বলেন, “নিমাইয়ের দেশ দেখার জন্য কাটোয়া-নবদ্বীপ এসেছিলাম। ক’দিন বাঁচব ঠিক নেই, তাই ভিক্ষার টাকায় ভিক্ষা করতে করতেই আসা। ব্যাগ হারিয়ে ভেবেছিলাম সব গেল। কিন্তু এখন বুঝলাম হকারেরা কত ভাল। তাঁদের জন্যই আমার ভিক্ষা-সম্বলটুকু হারিয়েও ফিরে পেলাম।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy