Advertisement
E-Paper

বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে যন্ত্রে বোনা মাদুর

তাঁতের যন্ত্রের আদলে মাদুর বোনার যন্ত্র তৈরি করেছিলেন তাঁর শ্বশুর। আর গ্রামে বসে তৈরি করা সেই সব মাদুর দেশের নানা প্রান্ত, এমনকী বিদেশেও পৌঁছে দিচ্ছেন পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের বিশ্বজিৎ দত্ত। শুধু তাই নয়, তাঁর সঙ্গে এই কাজে সামিল হয়ে রোজগারের উপায় খুঁজে নিয়েছে গ্রামের আরও ৫৪টি পরিবার।

অর্পিতা মজুমদার

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:০৪
চলছে মাদুর বোনা। —নিজস্ব চিত্র।

চলছে মাদুর বোনা। —নিজস্ব চিত্র।

তাঁতের যন্ত্রের আদলে মাদুর বোনার যন্ত্র তৈরি করেছিলেন তাঁর শ্বশুর। আর গ্রামে বসে তৈরি করা সেই সব মাদুর দেশের নানা প্রান্ত, এমনকী বিদেশেও পৌঁছে দিচ্ছেন পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের বিশ্বজিৎ দত্ত। শুধু তাই নয়, তাঁর সঙ্গে এই কাজে সামিল হয়ে রোজগারের উপায় খুঁজে নিয়েছে গ্রামের আরও ৫৪টি পরিবার।

পানাগড়ের বিরুডিহায় মাটি উৎসবে মাদুর বোনার যন্ত্র নিয়ে হাজির হয়েছিলেন ৩৬ বছরের বিশ্বজিৎবাবু। হাতেকলমে মাদুর বোনা দেখাচ্ছেন আগ্রহীদের। তিনি জানান, আগে গাড়ি চালিয়ে রোজগার করতেন। কিন্তু তাতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলে বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়ি আপত্তি করে। শ্বশুরমশাই কালীপদ দাস তখন তাঁকে মাদুর বোনার কাজ শিখিয়ে দেন। প্রথমে হাতেই মাদুর বুনতেন তাঁরা। কিন্তু কাঠের কাজ জানা কালীপদবাবু তাঁতের যন্ত্র নকল করে মাদুর বোনার যন্ত্র তৈরি করেন। সেটা প্রায় বছর পনেরো আগের কথা। তখন থেকেই সেই যন্ত্রে কাজ করছেন তাঁরা। উৎপাদনের মাত্রাও বেড়েছে অনেক।

বিশ্বজিৎবাবু জানান, তাঁর সঙ্গে কাজ করেন ৫০ জন মহিলা ও চার জন পুরুষ। গোড়ার দিকে তাঁরা নিজেদের জেলারই পর্যটন কেন্দ্র দিঘায় মাদুর পাঠাতেন তাঁরা। পরিস্থিতি ভাল হতে শুরু করে বছর দেড়েক আগে থেকে। বিশ্বজিৎবাবু জানান, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতর, ইউনেসকো-সহ কয়েকটি সংস্থার উদ্যোগে আড়াইশো জন মাদুর শিল্পীকে সল্টলেকে নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কী ভাবে বাজারের চাহিদা মাথায় রেখে মাদুরের গুণমান বদলানো যায়, বিশ্ব বাজারে কী ভাবে উৎপাদিত সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে বিশদ ধারণা দেওয়া হয় সেখানে। যা খুব কাজে লেগেছে বলে তাঁরা জানান।

তার পর থেকেই তাঁরা তৈরি করা মাদুর পাঠাতে শুরু করেন দিল্লি, মুম্বই, গোয়া, বেঙ্গালুরু-সহ দেশের নানা বড় শহরে। কয়েক মাস আগে খুলে যায় বিদেশের বাজারের পথও। সম্প্রতি তাঁরা নিয়মিত সিঙ্গাপুরে মাদুর পাঠাচ্ছেন বলে বিশ্বজিৎবাবু জানান।

মাদুর বুনে মাসে ৫-১০ হাজার টাকা রোজগার হয় বলে জানালেন বিশ্বজিৎবাবু। তিনি জানান, চাষিরা মাদুরের কাঠি চাষ করেন। তা পেকে গেলে চেরাই করে বাজারে বিক্রি করেন চাষিরা। শিল্পীরা সেই চেরাই কাঠি স্থানীয় রাধামনি বাজার থেকে কিনে আনেন। সুতো কিনে এনে চরকায় নলি পাকানো হয়। এর পরে চার ঝাঁপে হিসেব মতো কাঠামো বানিয়ে যন্ত্রের মাধ্যমে মাদুর বোনা হয়। তার পর চারপাশ কাপড় দিয়ে মুড়ে সেলাই করা হয়।

মাটি উৎসবের ময়দানে এসেছিলেন কাঁকসার আড়রা এলাকার তুলিকা পালিত। তিনি বলেন, “শপিংমলে এমন মাদুর বহু টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু এখানে বেশ কম দামে পছন্দসই মাদুর পেয়েছি।” বিশ্বজিৎবাবুও বলছেন, “উৎসবে স্টল দিয়ে ভাল রোজগার হল।”

madur machine woven mat panagarh arpita majumdar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy