Advertisement
০২ মে ২০২৪

বৃষ্টিকে পরোয়া না করে ঢল নামল বাজারে

‘আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে, আধাঁর করে আসে’, তার সঙ্গে জল ছপছপ রাস্তা। তবুও বাড়িতে বসে বৃষ্টি উপভোগ করার সময় নেই শহরের জনতার। কারণ পাড়ার মাঠে প্যাণ্ডেলের বাঁশ বাঁধার শব্দ যে অনেকদিন হল শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই বৃষ্টিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রবিবারের শহর পুজো-বাজারমুখী।

সৌমেন দত্ত
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৫৭
Share: Save:

‘আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে, আধাঁর করে আসে’, তার সঙ্গে জল ছপছপ রাস্তা। তবুও বাড়িতে বসে বৃষ্টি উপভোগ করার সময় নেই শহরের জনতার। কারণ পাড়ার মাঠে প্যাণ্ডেলের বাঁশ বাঁধার শব্দ যে অনেকদিন হল শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই বৃষ্টিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রবিবারের শহর পুজো-বাজারমুখী।

কাটোয়াতে ঈদের পর থেকেই মোটামুটিভাবে শুরু হয়ে যায় পুজোর বাজার। এখন তাই শেষ বেলার ভিড়ে জমে উঠেছে কাটোয়ার দোকানপাট। রবিবার শহরের কাপড়ের দোকানগুলিতে ঢুঁ মেরে দেখা গেল দুপুর থেকেই বিভিন্ন বয়সের মহিলারা ভিড় জমিয়েছেন। ক্রেতাদের সূত্রে জানা গেল, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বার শাড়ির বাজারে অনেক বেশি বৈচিত্র রয়েছে। ইক্কত, ব্যাঙ্গালোর, ভেলভেট, সিফন, মোগা, কোষা, পটলা, মটকা সিল্কের শাড়ি যেমন রয়েছে, তেমনই চাহিদা রয়েছে তাঁতের শাড়িরও। সিল্কের বৈচিত্রের সঙ্গে সমানে পাল্লা দিচ্ছে জামদানি, ধনেখালি বা টাঙ্গাইলের মতো তাঁতের শাড়িও।

তবে সিল্ক বা তাঁত যাইই হোক, নকশায় এ বছর এমব্রয়ডারি, পার্শি, নক্সিকাঁথার কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সার্কাস ময়দানের কাঁথা স্টিচ বস্ত্র ব্যবসায়ী গৌতম ঘোষ বলেন, “এখনও পর্যন্ত কয়েক লক্ষ টাকার কাপড় বিক্রি করেছি। দু-তিন হাজারের শাড়িও খুব ভাল বিক্রি হচ্ছে।” তবে শুধু মহিলারাই নয়, ছেলেদের মধ্যেও সুতোর কাজ করা জামা-পাঞ্জাবী কেনার প্রবণতা বেড়েছে বলে জানান গৌতমবাবু। মুর্শিদাবাদের খাগড়া থেকে কাটোয়াতে নিয়মিত কাপড় নিয়ে আসেন রবীন গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “কাটোয়াতে মুর্শিদাবাদ সিল্ক থেকে বুটিকের কাজ করা শাড়ি বেশ ভালই বিকোয়। ওই সব শাড়ির দাম ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা।” ক্রেতাদের সূত্রে জানা গেল, পুজোর আগে যে কোনও গতানুগতিক শাড়ির উপর হাল্কা সুতোর কাজ থাকলেই তা বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। শুধু শাড়িই নয়, হাল ফ্যাশনের জিন্স, টপও বাজারে দেদার বিক্রি হচ্ছে।

রবিবাসরীয় বাজারে ভিড় জমিয়েছে বাড়ির খুদে সদস্যরাও। ছোটদের মধ্যে অনেকেই ‘মোদী আঙ্কলের’ ছবি দেওয়া পোশাকের জন্য বায়না জুড়ছে বলে জানান কাছারি রোডের ব্যবসায়ী মহাদেব সাহা। ছ’শ থেকে দু’হাজার টাকা খরচ করলেই মিলছে ‘মোদী-ড্রেস’। শহরে ছোটদের জন্য কাউন্টার বাবা-মা’য়ের হাত ছেড়ে নিজেরাই ঘুরছে। সেখানে তারা নিজেরাই বেছে নিচ্ছে পুজোর পোশাক।

কিন্তু এর উল্টো ছবিও আছে। যেমন কিছুই পছন্দ না হওয়ায় কান্না জুড়ে দিয়েছে আট বছরের রুচিরা। আর তাকে সামলাতে সামলাতেই নাজেহাল মা, রিঙ্কি দত্ত বলেন, “কাছারি রোড, স্টেশন বাজার, সার্কাস ময়দানের প্রায় সমস্ত দোকান ঘুরেও মেয়ের মনের মতো জামা পেলাম না।”

আকাশে নিম্নচাপের ঘনঘটা দেখে কাটোয়ার ব্যবসায়ীরা চিন্তায় ছিলেন, বাজার জমবে কি না। তাঁদের সেই দুশ্চিন্তায় জল ঢেলে কাটোয়ার ক্রেতারা ছাতা মাথাতেই চলে এসেছেন বাজারে। ভিড় জমেছে ফুটপাথের ধারেও। কিন্তু বাজার থেকে ফেরার পথে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী অঙ্কিতা সাহার মুখ ভার। কারণ জিজ্ঞেস করায় বললেন, “পোশাক তো কেনা হল, কিন্তু পুজোর দিনে বৃষ্টি হলে তো পরতে পারব না। তাই দুর্গা মা’কে বলছি পুজোর দিনে যেন বৃষ্টি না পড়ে।” অঙ্কিতার সঙ্গে বাজার ফেরত শহর হয়ত এই প্রার্থনাই করছে। এখন দেখার তাঁদের এই প্রার্থনা পুজোর দিনে আদৌ ফলে কী না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

pujo puja shopping soumen dutta katwa rain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE