দেহ আঁকড়ে কান্না পরিজনের। —নিজস্ব চিত্র।
রাতে বাড়িতে ঢুকে সিপিএমের এক প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যাকে খুনের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের দিকে। বুধবার রাতে বর্ধমানের কেতুগ্রামের আনখোনায় এই হামলায় জখম হন সিপিএমের আরও ছয় সমর্থক। সিপিএমের তরফে বৃহস্পতিবার দুপুরে কেতুগ্রাম থানায় দশ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযুক্তেরা এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত।
বুধবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে আনখোনা পঞ্চায়েতের মহুলা গ্রামের মিরপাড়ায়। পুলিশ জানায়, নিহতের নাম আসমিরা বেগম (৩৫)। ছুরির কোপে জখম হন তিনি। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। রাতেই ওই এলাকায় যান বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) প্রশান্ত চৌধুরী ও এসডিপিও (কাটোয়া) ধ্রুব দাস। প্রশান্তবাবু বলেন, “পরিস্থিতি স্বাভাবিক। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তৃণমূল অবশ্য এই ঘটনাটিকে ‘পারিবারিক বিবাদ’ বলে দাবি করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত ৯টা নাগাদ চার দুষ্কৃতীর একটি দল আসমিরা বেগমের বাড়িতে হামলা চালায়। কিন্তু তখন সুবিধা করতে না পেরে তারা পিছু হঠে। তার পরে সাড়ে ৯টা নাগাদ ১০-১২ জনের একটি দল ফের হামলা চালায়। মৃতার স্বামী এনায়ে করিমের অভিযোগ, “আমরা সিপিএম সমর্থক। কিন্তু গত চার বছর ধরে আমরা রাজনীতি থেকে দূরে রয়েছি। তার পরেও আমাদের বুথে সিপিএম বেশি ভোট পাওয়ায় তৃণমূল কয়েক দিন ধরে নানা রকম ভাবে গোলমাল পাকাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার আমাকে না পেয়ে আমার স্ত্রীকে খুন করল দুষ্কৃতীরা।” কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন নুরুল ইসলাম, মহম্মদ সৈয়দ, সিরাজুল ইসলাম, মহম্মদ কুতুবদ্দিন, সফিকুল ইসলাম ও আজিজুল রহমান। তাঁদের অভিযোগ, “আমরা সবে ভাত খেয়ে উঠে একটু রাস্তায় বেরিয়েছিলাম। সেই সময়ে গ্রামেরই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা লাঠি, রড, ভোজালি ও বোমা নিয়ে আমাদের উপরে হামলা চালায়। বাড়িতে ঢুকে লুঠপাটও করে। তিনটি বাড়ি ভাঙচুর করেছে ওরা।” পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগটি করেছেন সিরাজুল ইসলাম।
সিপিএমের তরফে জানানো হয়েছে, কেতুগ্রাম ১ ব্লকের ১৪৬টি বুথের মধ্যে সিপিএম গোটা কুড়িতে তৃণমূলের থেকে বেশি ভোট পেয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম মহুলা গ্রামের ১৩ নম্বর বুথটি। এখানে ৬১৩টি ভোটের মধ্যে সিপিএম পেয়েছে ৩২৪টি। আর তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ২১৯। অর্থাৎ, সিপিএম এই বুথে ১০৫ ভোটে এগিয়ে। আসমিরা স্থানীয় আনখোনা পঞ্চায়েতে ২০০৩ সাল থেকে ১০ বছর ধরে সদস্য ছিলেন। সিপিএম নেতাদের অভিযোগ, ভোটের আগে থেকেই আনখোনার প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যা আসমিরার পরিবারের উপরে আক্রোশ ছিল তৃণমূলের। দু’বার বাড়িতে আগুন লাগানো হয় বলেও সিপিএমের অভিযোগ। গণনার পরে এলাকায় সিপিএমের এক জনের হাত ভেঙে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের দিকে। নিহতের স্বামী এনায়ে করিমের দাবি, “এত কিছুর পরেও তৃণমূল নেতাদের হাতে পায়ে ধরে বলেছিলাম, আমরা রাজনীতি করা ছেড়ে দিয়েছি। আপনাদের লোকেদের হাত থেকে আমাদের বাঁচান।” আসমিরার মা আদুরি বিবির অভিযোগ, “ওই দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে আমার নাতি-নাতনিরা স্কুল যেতে পারত না। নাতি স্কুল গেলে দু’জন লোককে পাহারা দিয়ে পাঠাতে হয়।” তাঁদের অভিযোগ, বুধবার রাতে এনায়ে করিম ও আসমিরা বেগমরা যখন ভাত খেতে বসেছেন, সেই সময়ে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা হামলা চালায়। এনায়ে করিমের কথায়, “আমি ওই অবস্থায় চিৎকার করি। কারও সাড়াশব্দ না পেয়ে পাঁচিল টপকে ওরা পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে শুনি, দুষ্কৃতীরা আমার স্ত্রীর বুকে ছুরি মেরেছে।”
তৃণমূল অবশ্য এই ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার কথা মানেনি। দলের কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ বলেন, “ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। তবে এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। পারিবারিক বিবাদের জেরে এই ঘটনা। শুক্রবার আমি নিহতের বাড়ি যাব। পুলিশকে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” অভিযুক্তদের মধ্যে নাম থাকা মিঠুন শেখ নামে এক ব্যক্তি অবশ্য বৃহস্পতিবার সকালে দাবি করেন, “আমরা বসেছিলাম। সেই সময়ে আমাদের লক্ষ করে ওরা ইট ছোড়ে। আমার মাথা ফেটে যায়। তার পরে আমাদের লোকেরা হামলা চালায়।” তৃণমূলের অন্য একটি সূত্রের আবার দাবি, ওই ঘটনার পর থেকে দু’জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy