জলের রঙের তারতম্যে বোঝা যায় গভীরতা। রবিবারের দুর্ঘটনার পরে সোমবার সুনসান ব্যারাজ। —নিজস্ব চিত্র।
আগের দিনই দামোদরের ব্যারাজে তলিয়ে প্রাণ হারিয়েছে চার কলেজ পড়ুয়া। সোমবার প্রশাসনের নজরদারি না বাড়লেও সদ্য দুর্ঘটনার জেরেই বোধহয় আর কাউকে নিষেধ না মেনে জলে নামতে দেখা যায়নি।
দুপুরে ব্যারাজে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ ও ডিভিসির তরফে যে সতকর্তামূলক বোর্ড লাগানো রয়েছে তা বেশ পুরনো। একটি বোর্ডের লেখা শক্ত কিছু দিয়ে ঘষে মুছে দেওয়া হয়েছে। অন্যটির লেখাও অষ্পষ্ট। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রতি বছর গরম পড়লেই বেসরকারি কলেজের পড়ুয়াদের দল বেঁধে ব্যারাজে স্নান করতে যাওয়া রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। যার ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনাও ঘটে।
রবিবার দুপুর ১টা নাগাদ দুর্গাপুরের এক বেসরকারি কলেজের ১১ পড়ুয়া স্নান করতে যায় ব্যারাজের ৪ নম্বর গেটে। ঝাড়খণ্ডের পাকুড়ের শুভম পঙ্কজ আচমকা তলিয়ে যায়। বন্ধুকে বাঁচাতে জলে ঝাঁপায় আরও তিন জন। শুভমকে টেনে তুলতে পারলেও নিজেদের সামলাতে পারেন নি তাঁরা। ঘণ্টা চারেকের মধ্যেই স্থানীয় যুবকদের সাহায্যে নীতিশ, আদিত্য ও চন্দ্রজিৎ নামে ওই তিন যুবকের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ও দিকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে মারা যান শুভম। ওই বেসরকারি কলেজের চেয়ারম্যান দুলাল মিত্র জানান, সোমবার দুপুর ১২টা নাগাদ কলেজ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ওই চার পড়ুয়ার বাড়ির লোকজন দেহ আনতে হাসপাতালে যান। সঙ্গে যান কলেজের প্রশাসক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সমীর গঙ্গোপাধ্যায়। বিকাল ৪টের মধ্যেই দেহ নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দেন তাঁরা।
দুলালবাবু বলেন, “পড়ুয়ারা বাইরের বিভিন্ন মেসে থাকে। তাঁদের উপরে সেভাবে কলেজের নিয়ন্ত্রন থাকে না। ফলে কে কোথায় যাচ্ছে তা কেউ জানতেও পারেন না।” পড়ুয়াদের অভিভাবকদের আরও কড়া হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, কলেজের পক্ষ থেকে এই ধরণের দুর্ঘটনা রুখতে বিশেষ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা তা দেখা হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যারাজে স্নান করতে গিয়ে বছরে গড়ে প্রায় তিন জন ডুবে মারা যান। গত ৫ বছরে মৃত্যু হয়েছে মোট ১৪ জনের। তার মধ্যে ন’জন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়ুয়া। দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক কস্তুরি সেনগুপ্ত সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরীও জানিয়েছেন, ব্যারাজে বিপজ্জনক জায়গায় নামা রুখতে ডিভিসি’র কাছে স্থায়ী প্রহরীর ব্যবস্থা করার লিখিত আর্জি জানাবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy