Advertisement
E-Paper

বাড়ছে দুষ্কর্ম, বালি মাফিয়াকে ধরতে জেরবার পুলিশ

গাড়ির কাঁচ ভেঙে শহরের এক চালকল মালিকের ভাইয়ের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা চুরির ঘটনার পিছনে বালি মাফিয়া রাজীব মল্লিকের দল জড়িত বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। এমনকী শনিবার সন্ধ্যায় খণ্ডঘোষ থানার পলেমপুরে কৃষক সেতুর উপরের ওই ঘটনায় দক্ষিণ দামোদর এলাকার ত্রাস রাজীব নিজে হাজির ছিল বলেও পুলিশের একাংশের অনুমান। তবে সন্দেহ আর অনুমানই সার। গত দু’বছরে একাধিকবার অভিযান চালিয়েও ওই বালি মাফিয়াকে ধরতে পারেনি পুলিশ। ফলে এলাকায় বেড়ে চলা ছিনতাই, ডাকাতি, তোলাবাজির উপর রাশ টানতেও কার্যত ব্যর্থ পুলিশ।

রানা সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৪ ০১:৫৮
পলেমপুরের এই সেতুতেই ছিনতাই হয় শনিবার। প্রশাসন বালি বোঝাই ট্রাক ও ছ’চাকার উর্দ্ধের মালবাহী গাড়ি যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা ঝোলালেও থোড়াই তোয়াক্কা। ছবি তুলেছেন উদিত সিংহ।

পলেমপুরের এই সেতুতেই ছিনতাই হয় শনিবার। প্রশাসন বালি বোঝাই ট্রাক ও ছ’চাকার উর্দ্ধের মালবাহী গাড়ি যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা ঝোলালেও থোড়াই তোয়াক্কা। ছবি তুলেছেন উদিত সিংহ।

গাড়ির কাঁচ ভেঙে শহরের এক চালকল মালিকের ভাইয়ের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা চুরির ঘটনার পিছনে বালি মাফিয়া রাজীব মল্লিকের দল জড়িত বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। এমনকী শনিবার সন্ধ্যায় খণ্ডঘোষ থানার পলেমপুরে কৃষক সেতুর উপরের ওই ঘটনায় দক্ষিণ দামোদর এলাকার ত্রাস রাজীব নিজে হাজির ছিল বলেও পুলিশের একাংশের অনুমান। তবে সন্দেহ আর অনুমানই সার। গত দু’বছরে একাধিকবার অভিযান চালিয়েও ওই বালি মাফিয়াকে ধরতে পারেনি পুলিশ। ফলে এলাকায় বেড়ে চলা ছিনতাই, ডাকাতি, তোলাবাজির উপর রাশ টানতেও কার্যত ব্যর্থ পুলিশ।

জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “আমরা রাজীবের পিছনে পড়ে রয়েছি। দিন সাতেক আগেও ওর বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। শনিবারের ছিনতাইয়ের পরেও রাজীবের গা ঢাকা দেওয়ার সম্ভাব্য জায়গাগুলিতে আমরা তল্লাশি চালাই। তবে খোঁজ মেলেনি রাজীবের।” পুলিশের দাবি, বড় মাপের অপরাধ করার পরে রাজীব ভিন জেলায় গিয়ে গা ঢাকা দেয়। উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি, দার্জিলিং ইত্যাদি এলাকায় রাজীবের ছদ্মনামে গা ঢাকা দিয়ে থাকার প্রমাণও পেয়েছে পুলিশ। ফলে এখন বারবার অভিযান চালিয়েও লাভ হবে না বলে মনে করছেন পুলিশেরই একাংশ।

বছর দু’য়েক আগে বর্ধমান-সিউড়ি রোডে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশ গ্রেফতার করেছিল রাজীবকে। জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর থেকেই দক্ষিণ দামোদর এলাকায় অবৈধ বালি খাদানের অধিকারের লড়াইয়ে জুটে গিয়েছিল সে। টাকা নিয়ে মাফিয়াদের হয়ে লড়াই করত, পরে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তোলা আদায় বা শহরের ব্যাঙ্ক থেকে বড় অঙ্কের টাকা তুলে দক্ষিণ দামোদরের দিকে যাওয়ার পথে চালব্যবসায়ীদের উপর চড়াও হয়ে টাকাকড়ি কেড়ে নেওয়ার ব্যাপারেও রাজীব সক্রিয় হয়ে উঠেছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। পুলিশের এক কর্তা জানান, দক্ষিণ দামোদর এলাকায় যত অপরাধ ঘটে, তার সিংহভাগেরই ‘মাথা’ রাজীব।

সপ্তাহখানেক আগে বর্ধমানের সাবজোলার পুলের কাছে এক চালকল কর্তার উপর হামলা চালিয়ে টাকা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল শেখ নজরুল নামে এক দুষ্কৃতী। এলাকাবাসীর প্রহারে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। পরে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। শেখ নজরুলকে জেরা করে ওই ছিনতাইয়ের পিছনে রাজীবের হাত আছে কি না তা জানার চেষ্টা করেছিল পুলিশ। তবে উল্লেখ্য কিছু মেলেনি বলে পুলিশ সূত্রে খবর। জেলা পুলিশের একাংশের অবশ্য দাবি, ছিনতাইয়ের ঘটনার পিছনে রাজীব নিশ্চয় কোনও ভাবে জড়িত। ফলে দক্ষিণ দামোদর এলাকা ছাড়িয়ে বর্ধমান শহরে রাজীবের ‘হাতযশ’ ছনিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন পুলিশ। কয়েকমাস আগে বর্ধমানের সদর ঘাটের অনতিদূরে এক বালিঘাটের দখল নিয়ে সংঘর্ষ বাধে। তাতে রাজীবের লোকেরাই খণ্ডঘোষ থেকে বর্ধমানে এসে হামলা চালিয়েছিল বলে পুলিশের অনুমান।

রাজীবের বাাড়ি অবশ্য খণ্ডঘোষের কামালপুরে। উঁচু পাঁচিল ঘেরা বাড়িতে থাকেন তার বাবা-মা, স্ত্রী, দুই সন্তান ও এক ভাগনি। বাড়ির ভৌগলিক অবস্থানের দরুণ হানা দিয়ে অনেকসময় রাজীবের নাগাল মেলে না বলে পুলিশের দাবি। পুলিশ সূত্রের খবর, বাড়িটি দামোদরের খুবই কাছে। ফলে নদীপথে পালানোর সুযোগ থাকে। তাছাড়া বাড়িতে এমন কয়েকটা জানালা আছে যেখান দিয়েও সহজে পালানো যায়। রাজীবের বাড়িতে একটি অ্যালসেশিয়ান কুকুর রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। ফলে পুলিশ যতই চুপিসাড়ে হানা দেওয়ার চেষ্টা করুক সেই প্রভুভক্ত সারমেয় চিৎকার করে বাড়ির লোকজনকে সাবধান করে দেয়। ফলে পুলিশ পড়েছে বিপাকে। বর্ধমান জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “আমরা পুলিশের গাড়ি না নিয়ে গিয়েও দেখেছি, ওই বাড়ির কাছাকাছি হতে না হতেই রাজীব বা তার লোকেরা সতকর্র্ হয়ে যায়। আর নদীর দিকের জানলা গলে রাজীব পালিয়ে যায়।”

এ দিকে রাজীবকে পুলিশ ধরতে না পারা ও তার জেরে বারবার খণ্ডঘোষ, রায়না ইত্যাদি এলাকার চালকল মালিকদের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় চালকল মালিক সমিতির ক্ষোভ বাড়ছে। জেলা চালকল মালিক সমিতি ইতিমধ্যেই প্রথমে দক্ষিণ দামোদরের সব চালকল ও পরে জেলার চালকলগুলি বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মেদ হোসেন মির্জা বলেন, “শনিবার রাতভর আমরা রাজীব ও তার দলবলকে ধরতে নানা জায়গায় রেড করেছি। মানছি, গত দু’বছরের মধ্যে রাজীবকে ধরতে না পারাটা আমাদের ব্যর্থতা। কিন্তু আমরা রোজ ব্যর্থ হব না। যেভাবে পুলিশ রাজীবের পিছনে লেগেছে, তাতে ও ধরা পড়বেই।”

sand mafia polempur rana sengupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy