Advertisement
E-Paper

ভাঙা পড়ে প্রেক্ষাগৃহ, গল্ফ কোর্স ঝোপে ঢাকা

এক দিকে প্রেক্ষাগৃহে জমজমাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তো অন্য দিকে গল্ফ কোর্সে খেলা দেখতে উপচে পড়া ভিড়। এক দিকে সাহিত্য-আড্ডা মাতাচ্ছেন রাজ্যের নামী সাহিত্যিকেরা, তো অন্য দিকে মাঠ দাপাচ্ছেন কলকাতা থেকে আসা বিখ্যাত ফুটবলারেরা। স্বাচ্ছন্দ্যের সময়ে এমন সব উজ্জ্বল দিন নিয়মিত দেখতেন কুলটির মানুষ। ইস্পাত কারখানাকে ঘিরে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উত্‌কর্ষতা ছুঁয়েছিল শহরের ক্রীড়া-সংস্কৃতি। শুধু তার টানেই শিল্পাঞ্চলের বহু মানুষের আনাগোনা ছিল এই শহরে।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৪ ০১:২৩
গল্ফ খেলার মাঠে এখন চরে গরু।

গল্ফ খেলার মাঠে এখন চরে গরু।

এক দিকে প্রেক্ষাগৃহে জমজমাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তো অন্য দিকে গল্ফ কোর্সে খেলা দেখতে উপচে পড়া ভিড়। এক দিকে সাহিত্য-আড্ডা মাতাচ্ছেন রাজ্যের নামী সাহিত্যিকেরা, তো অন্য দিকে মাঠ দাপাচ্ছেন কলকাতা থেকে আসা বিখ্যাত ফুটবলারেরা।

স্বাচ্ছন্দ্যের সময়ে এমন সব উজ্জ্বল দিন নিয়মিত দেখতেন কুলটির মানুষ। ইস্পাত কারখানাকে ঘিরে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উত্‌কর্ষতা ছুঁয়েছিল শহরের ক্রীড়া-সংস্কৃতি। শুধু তার টানেই শিল্পাঞ্চলের বহু মানুষের আনাগোনা ছিল এই শহরে। কাজের পাশাপাশি বছরভর নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে মেতে থাকতেন বাসিন্দারা।

শহরের প্রবীণ বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা যায়, কুলটি বিধানসভা এলাকায় প্রথম প্রেক্ষাগৃহ তৈরি হয় ১৯২৯ সালে। কুলটি শহর এলাকাতেই গড়া হয় সেটি। গোটা শিল্পাঞ্চলে সংস্কৃতিমনস্ক মানুষকে এক সুতোয় বাঁধতে তৈরি এই প্রেক্ষাগৃহের নাম রাখা হয় ‘কুলটি সম্মিলনী’। সেটি উদ্বোধন করেছিলেন ইস্কোর প্রতিষ্ঠাতা বীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়।

এই প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন সম্পাদক তথা রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সমীপেন্দ্রনাথ লাহিড়ি বলেন, “অতীতে শুধু এই রাজ্য নয়, সারা দেশের বহু কিংবদন্তী শিল্পী এই মঞ্চে এসে অনুষ্ঠান করে গিয়েছেন।” তিনি জানান, কুলটিকে এক সময়ে শিল্পাঞ্চলের সাহিত্য-সংস্কৃতির পীঠস্থান বলা হত। পরবর্তী সময়ে তার প্রভাব পড়তে শুরু করে শিল্পাঞ্চলের অন্যত্রও। প্রথম সারির বহু কবি-সাহিত্যিকের নিয়মিত এই শহরে যাতায়াত ছিল। সাহিত্য আড্ডা, কবিতা পাঠের আসর বসত অহরহ। বড় কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গে সেখানে যোগ দেওয়ার, মত বিনিময়ের সুযোগ পেতেন স্থানীয় সাহিত্যপ্রেমীরা। নাটক, গান থেকে আবৃত্তিসব রকমের অনুষ্ঠানে যেন চাঁদের হাট বসে যেত। ইসিএলের সাংস্কৃতিক দফতরের উদ্যোগে ডিসেরগড়ের ঝালবাগানে সাহিত্য বাসরের আয়োজন হত। কিন্তু ইস্পাত কারখানা অন্ধকারে ডুবতে শুরু করায় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যত খারাপ হয়েছে, টান পড়েছে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও। অতীতের সেই জৌলুসের স্মৃতি নিয়ে কার্যত ভুতুড়ে বাড়ির মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই ‘কুলটি সম্মিলনী’।

কুলটির গল্ফ কোর্স নিয়ে এক সময়ে রীতিমতো গর্ব করতেন এলাকার বাসিন্দারা। স্মৃতিচারণ করতে বসে শহরের অনেকেই বলেন, এই রাজ্যে কলকাতার পরে তখন কুলটিতেই একমাত্র গল্ফ কোর্স ছিল। এক সময়ে কুলটির নানা খেলাধুলোর উদ্যোক্তা তথা প্রাক্তন ইস্কো কর্মী অরুণকান্তি ঘোষ জানান, দিগন্ত বিস্তৃত এই গল্ফ কোর্সের ঘাস সুন্দর করে ছাঁটা থাকত। দেখে মনে হত, বিশাল এক সবুজ গালিচা পাতা রয়েছে। সপ্তাহে দু’দিন, শনি ও রবিবার সকাল থেকেই রাজ্যের নানা জায়গা থেকে খেলোয়াড়েরা এখানে গল্ফ খেলতে আসতেন। তা দেখার জন্য ভিড় জমাতেন শহরবাসী। এখন সেই গল্ফ কোর্স ঝোপজঙ্গলে ঢাকা পড়েছে। সেখানে গরু-ছাগল চরে বেড়ায়। দেখভালের কেউ নেই।


সম্মিলনী প্রেক্ষাগৃহ।

শুধু গল্ফ নয়, বন্ধ হয়ে গিয়েছে কুলটিতে ইস্কো পরিচালিত মহকুমার সবচেয়ে পুরনো ফুটবল টুর্নামেন্টও। কলকাতার অনেক নামী ফুটবল দল এই প্রতিযোগিতায় নিয়মিত খেলতে আসত। ইস্কোর প্রাক্তন ফুটবলার দীপু চন্দের আক্ষেপ, “এখন মাঠগুলো ফাঁকাই পড়ে থাকে। শুধু কুলটি শহর নয়, আশপাশের কোনও মাঠেই তো বল পায়ে নবীন প্রজন্মকে দৌড়তে দেখি না।” ইসিএলের তত্ত্বাবধানে ডিসেরগড় এলাকায় খেলাধুলোর চর্চা এখনও দেখা গেলেও সামগ্রিক ভাবে কুলটিতে এই পরিস্থিতি হল কেন? প্রবীণদের কথায়, ভাল খেলতে পারলে কারখানায় তখন চাকরি পাকা ছিল। সে সব দিন এখন গিয়েছে। এই আর্থ-সামাজির পরিস্থিতিতে রোজগারের উপায়ের কথা ভাবতে হচ্ছে অল্প বয়স থেকেই। সে কারণেই হয়তো এখন অনেকে মাঠমুখো হচ্ছে না।

তবে বাসিন্দারা মনে করেন, চেষ্টা করলে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে অতীতের সেই সাংস্কৃতিক পরিবেশ। প্রতিভার অভাব নেই, শুধু প্রয়োজন খানিকটা উদ্যোগের। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আগের সেই দিন কুলটি আবার ফিরে পাবে, বিশ্বাস করেন শহরবাসী।

ছবি: শৈলেন সরকার।
(চলবে)

amar shohor kulti sushanta banik
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy