বাঁ দিকে, মাঝ দামোদরে চলছে বালি তোলা। ডান দিকে, পাড় ভেঙে জমি হারাচ্ছে গ্রাম। ছবি: উদিত সিংহ।
অবৈধ ভাবে বালি তোলার বিরুদ্ধে সেচমন্ত্রী বারবার সোচ্চার হলেও আবারও ভাঙনসঙ্কুল দামোদরে নতুন করে বালি খাদান খোলার অনুমতি দিয়েছে সেচ দফতর।
খণ্ডঘোষের আমরুল গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, ওই এলাকার ন’পাড়া মৌজায় প্রায় ৭০০ মিটার জুড়ে পাড় ভাঙছে দামোদরের। রোজই একটু একটু করে কৃষিজমি ও বসত বাটি হারাচ্ছেন তাঁরা। স্থানীয় একটি আশ্রমও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে ওই বালি খাদান যাতে না খোলা হয়, তার জন্য সেচ দফতরের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন তাঁরা।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গিয়েছে, ওই আশ্রমটির কাছে ও স্থানীয় খানা জংশন বোঁয়াইচণ্ডী নির্মিয়মান রেলপথের সেতুর কাছে দুটি বালি খাদান তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। সেচ দফতরের সূত্রের খবর, এদের মধ্যে একটি বালি খাদানের অনুমতি নেই। অন্যটির অনুমতি মিলেছে সেচ দফতরের দুর্গাপুরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র অফিস থেকে। কিন্তু দামোদরের যে এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে, সেখানে কি করে নতুন করে বালি খাদানের তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সে প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি।
খণ্ডঘোষের সেচ দফতরের এসডিও সফিকুল আলম বলেন, “আমরুল গ্রামের ওই আশ্রমের কাছে প্রায় ৭০০ মিটার এলাকা জুড়ে দামোদরে ভাঙন দেখে দিয়েছে। ফলে ওই এলাকায় পাড় ভেঙে পড়েছে। আমরা ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে রাজ্য সেচ দফতরের কাছে রিপোর্ট পেশ করেছি। যদি সব ঠিকঠাক চলে তাহলে শীঘ্রই ওই এলাকায় ভাঙন রুখতে বোল্ডার ফেলার কাজ শুরু হবে।” তবে ওই এলাকায় যে বালিখাদ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সে কথা অজানা নেই রাজ্য সেচ দফতরের। দফতরের যুগ্ম সচিব দেবাশিস সেনগুপ্ত বলেন, “ওই এলাকায় যে ভাঙন দেখা দিয়েছে এবং সেই ভাঙনসঙ্কুল দামোদরের বুকে যে বালি খাদ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে তা আমরা জানি। জেলা সেচ দফতরকে বলা হয়েছে যারা ওখানে বালি খাদ তৈরি করছে তাদের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করতে বা আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে।” যদিও এই ধরনের কোনও ব্যবস্থা এখনও নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন সফিকুল সাহেব।
এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, আশ্রমের কাছে দামোদরে বালিখাদের রাস্তা তৈরি হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর ফলে ভাঙন আরও বাড়ছে। আশ্রমের এক বাসিন্দা ভানি মেনকা বলেন, “ইতিমধ্যে আমাদের তিন ফসলি জমির প্রায় তিনবিঘে গিলেছে দামোদর। দীর্ঘদিন ধরেই গৈতানপুর, আতকুরে, নায়ের পাড়া, ন’পাড়া, পঞ্চবটী গ্রামের বিঘের পর বিঘে কৃষিজমি তলিয়ে যাচ্ছে দামোদরের গ্রাসে। বহু আবেদনের পরেও সেচ দফতরের তরফে ভাঙন রোখার কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” আমরুল গ্রামের বাসিন্দা গঙ্গাধর সাঁতরারও দাবি, “বালি খাদানের জন্য ভাঙন দ্রুত পাড়ের দিকে এগিয়ে আসছে। কয়েক মাসের মধ্যে ৪০-৫০ ফুট চওড়া ও কয়েক কিলোমিটার লম্বা কৃষিজমি তলিয়ে গিয়েছে দামোদরে।” তাঁর অভিযোগ, “এলাকায় পরপর নতুন বালি খাদ তৈরি হচ্ছে। কে অনুমতি দিচ্ছে, কী করে দিচ্ছে কে জানে! এই ব্যাপারে বিডিও অফিস, জেলা পরিষদকে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি।” এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে দামোদরের পাড়ের গ্রামগুলির অস্তিত্ব থাকবে না বলেও গ্রামবাসীদের আশঙ্কা। বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “খণ্ডঘোষ পঞ্চায়েত সমিতিকে ওই এলাকার বালিখাদগুলির নথিপত্র খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। অবৈধ বালি খাদান বন্ধ হয়ে গেলেই এলাকায় ভাঙনের দাপট কমে যাবে বলে আমাদের আশা।”
কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আমরুলে কি করে নতুন বালি খাদানের অনুমতি দিল সেচ দফতর? দুর্গাপুরের এগজিকিউটিভ অফিস সূত্রে বলা হয়েছে, ওই এলাকার নদীভাঙন নিয়ে রিপোর্ট সময়ে না মেলায় বালি খাদানের অনুুমতি দেওয়া হয়েছিল। এ বার পরিস্থিতি নতুন করে পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। যদি দেখা যায় বালি খাদান তৈরি হলে ভাঙন বাড়বে, তাহলে ওই অনুমতি প্রত্যাহার করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy