Advertisement
০৮ মে ২০২৪

ভাঙনে ধসছে জমি, আতঙ্কে দেবনগর

ভাগীরথীর ভাঙনে নিশ্চিহ্ণ হতে বসেছে পূর্বস্থলী-২ ব্লকের দেবনগর গ্রাম। বাসিন্দাদের দাবি, প্রতিদিনই জলোচ্ছাসে ভেঙে পড়ছে নদীপাড়। একে একে নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে ঘর, মাঠ-বাগান। আতঙ্কে ভিটে ছাড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের। মেড়তলা পঞ্চায়েতের দেবনগরের বাসিন্দা বলতে এখন ৫০টি পরিবারের মাটির ঘরের বসতি।

যে কোনও দিন ধসে পড়তে পারে পাড়। তবু এভাবেই নিত্য যাতায়াত। —নিজস্ব চিত্র।

যে কোনও দিন ধসে পড়তে পারে পাড়। তবু এভাবেই নিত্য যাতায়াত। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৪ ০০:১৪
Share: Save:

ভাগীরথীর ভাঙনে নিশ্চিহ্ণ হতে বসেছে পূর্বস্থলী-২ ব্লকের দেবনগর গ্রাম। বাসিন্দাদের দাবি, প্রতিদিনই জলোচ্ছাসে ভেঙে পড়ছে নদীপাড়। একে একে নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে ঘর, মাঠ-বাগান। আতঙ্কে ভিটে ছাড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের।

মেড়তলা পঞ্চায়েতের দেবনগরের বাসিন্দা বলতে এখন ৫০টি পরিবারের মাটির ঘরের বসতি। অথচ এক দশক আগেও দেবনগরের বাসিন্দা ছিল দু’শ ঘর। গ্রামে ঢোকা-বেরোনো থেকে নিত্য প্রয়োজনের যে কোনও কাজ, সবেই ভাগীরথী পেরোতে হয় গ্রামবাসীদের। গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া সংখ্যা গোটা কুড়ি। উচ্চ বিদ্যালয়ে যেতে হলে নদীর ওপারে। ফলে প্রাথমিকের গণ্ডী পেরোলেও বেশিরভাগই যাতায়াতের অসুবিধেয় উচ্চশিক্ষায় আগ্রহ দেখায় না। জীবিকার দিক দিয়েও ভাগীরথীর চরে ফসল ফলানোই ভরসা গ্রামের। কিন্তু লাগাতার ভাঙনে চাষজমি ডুবে যাওয়ায় গ্রামের পাঁজরটাই যেন ভাঙতে বসেছে।

বাসিন্দাদের কথায়, বসতবাড়ির সঙ্গে নদীর কবলে চলে গেছে স্কুল, রাস্তা, চাষের জমি। গ্রামে স্কুল না থাকায়, শিক্ষার মান ভাল নয়। গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠ শেষ করলেও বেশিরভাগই নদী পেরিয়ে উচ্চ বিদ্যালয় যেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। বাসিন্দাদের দাবি, গত কয়েক বছরে ভাঙন বেড়েছে। প্রায় এক কিলোমিটার গতি পথ বদলে নদী সরে এসেছে গ্রামের দিকে। এতে চাষের জমিতে যেমন বালি জমেছে, তেমনি বাড়ছে অবৈধ্য বালি তোলা। বাসিন্দাদের আশঙ্কা, কোন দিন না পুরো গ্রামটাই তলিয়ে যায়। এলাকার মদন রাজবংশী, আলো রাজবংশীরা বলেন, “ভাঙন বাড়ে বর্ষার সময়। চোখের সামনেই গ্রামের কত স্মৃতি তলিয়ে গেল। নিজেদেরও প্রতি রাতে আতঙ্কে থাকি। মনে হয়, এই বুঝি গ্রাম ছাড়ার ডাক এল। ঘুম হয় না রাতে।”

দেবনগর গ্রামের ভয়াবহ পরিস্থির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন মেড়তলা পঞ্চায়েত প্রধান ধর্মেন্দ্র ঘরামি। তিনি বলেন, “ছ’ মাসের মধ্যে পাঁচটি পরিবার ভাঙনের কারণে দেবনগর ছেড়েছে। গ্রামের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। ইতিমধ্যেই গ্রামের বহু বাড়ির সঙ্গে স্কুল বাড়িটিও তলিয়ে গেছে। যে স্কুল বাড়িটি রয়েছে তার ভবিষ্যৎ খুব একটা ভাল নয়। গ্রামের কথা ব্লক প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।” পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, এলাকার কুঠুরিয়া ও সিমলা গ্রামেও কয়েকমাস আগে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

তবে প্রশাসনের উদাসীনতায় ক্ষুব্ধ দেবনগর। বাসিন্দাদের অভিযোগ, আট বছর আগে, তৎকালীন মহকুমাশাসক শ্রীকুমার চক্রবর্তী ঘুরে যাওয়ার পরে, প্রশাসনের কর্তারা এই গ্রামের আর কোনও খবরই রাখেন না। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ঘুরে গিয়েছিলেন এলাকার বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। তপনবাবু বলেন, “গ্রামের লোক সংখ্যা কম। ভাঙন রোধে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। সেই জন্য গ্রামবাসীদের পুনর্বাসনের কথা ভাবা হচ্ছে।”

বিধায়কের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, সম্প্রতি পূর্বস্থলী-২ ব্লকের তামাঘাটা, ছাতনি, দামপাল এবং সিঙের বাগ এলাকায় ভাঙন রোধে খাঁচা ও বোল্ডার লাগানো হয়েছে। নির্বাচন পর্ব শেষ হলে, ঝাউডাঙা এলাকায় ২ কোটি ৪২ লক্ষ ও যজ্ঞেশ্বরপুরের ন’পাড়ায় ৭ কোটি টাকার কাজ হওয়ার কথা। এছাড়া পাটুলি এলাকার কিছু জায়গায় ভাঙন রোধে প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষও দেবনগরের পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

সামনে বর্ষাও কী প্রতিবারের মতো প্রশাসনের আশ্বাস শুনেই কাটবে? এখন থেকেই আতঙ্কে রাত জাগছে দেবনগর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

debnagar erosion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE