ভেন্টাভার চাষ।—নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যে হুগলির পর, এবার কালনার কালীনগরে শুরু হল ভাঙন রোধে ভেন্টিভার ঘাসের চাষ। ভাঙনের হাত থেকে কালীনগরকে বাঁচাতে কালনা ১ ব্লকের উদ্যোগে প্রাথমিক ভাবে, ভাগীরথীর পাড় ধরে বিশেষ প্রজাতির এই ঘাসের চাষ হচ্ছে। গ্রামবাসীদের উৎসাহ দেখে ব্লক প্রশাসনের দাবি, “পাইলট প্রকল্পের চাষে সফলতা এলে ভাঙন কবলিত বহু এলাকাতেই ভেন্টিভারের প্রয়োগ করা হবে।”
রাজ্যে ভাঙন রোধে প্রথম ভেন্টিভার ব্যবহার করা হয় হুগলির খানাকুল ব্লকে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকায় ভেন্টিভার লাগিয়ে তারা সফল। তাদের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে কালনা ১ ব্লক পরিকল্পনাটি হাতে নেয়। ঠিক হয়, ধাত্রী গ্রাম পঞ্চায়েতের কালিনগর গ্রামের ভাঙন ঠেকাতে ব্যবহার করা হবে ভেন্টিভার ঘাস। পরিকল্পনাটি এন আর জি এস প্রকল্পের অধীনে রূপায়ণের জন্য মাস ছয়েক আগেই নেমে পড়ে পঞ্চায়েত। অসম থেকে আনা এই ঘাসের চারায়, ভাগীরথীর গা ঘেঁষে তৈরি করা হয় বীজতলা। একটু বড় হওয়ার পর গ্রামের ছ’টি জায়গায় পোঁতা হয় ঘাসের চারাগুলি। প্রকল্পটি রূপায়ণের জন্য খরচ হয় ৩ লক্ষ ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা।
কিন্তু কালিনগরই কেন? কালনার প্রত্যন্ত এ গ্রামের কাছে ভাগীরথী বরাবরই দুঃখের। নদীর উপচে পড়া জলে গ্রামকে বন্যার কবলে পড়তে হয়েছে বার বার। এ ছাড়াও নদীর ভাঙনের মুখে পড়ে গ্রামের বহু মানুষকে হারাতে হয়েছে তাদের বাড়ি, ঘর-চাষের জমিও। অথচ, ১৯৭০ সাল থেকে টানা দু’দশক ধরে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই গ্রাম থেকেই উঠে এসেছে অজস্র কবাডি তারকা। যাঁরা রাজ্য, জাতীয় এমনকী আন্তর্জাতিক স্তরেও সফল হয়েছে। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সৌমিত্র গুপ্ত বলেন, “কালীনগর গ্রামের ভাঙন বেড়েছে এক দশক ধরে। বর্তমানে গ্রামের বিশাল এলাকাজুড়ে দেখা দিয়েছে এই ভাঙন। প্রথমে ছোট এলাকা দিয়ে আমরা ভেন্টিভারের ক্ষমতা পরীক্ষা করছি। সফল হলে আরও বড় এলাকা জুড়ে এর ব্যবহার করা হবে।”
ভেন্টিভার আদতে অসমের লম্বা জাতের ঘাস। উচ্চতা দেড়-দু’ফুট হলেও শিকড় মাটির নীচে ১২ থেকে ১৪ ফুট বিস্তার করে। শিকড় গভীরে বিস্তার করায় মাটিকে ধরে রাখে। ঘাস যেখানে বেশি মাত্রায় হয়, সেখানে মাটিতে ফাটল দেখা যায় না। ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, অসমে ভাঙন ঠেকাতে এই ঘাস অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছে। কালনা ১ ব্লকের বিডিও সব্যসাচী রায়চৌধুরী বলেন, “খানাকুলের সাফল্যের পর আমরা কালিনগরে ঘাসের ব্যবহার করেছি।” ভাল ফল পেলে অসম থেকে নয়, এখানেই ভেন্টিভারের চারা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে। গ্রামবাসীদের এমন আশার কথা শুনিয়েছেন বিডিও। কালনার মহকুমা শাসক সব্যসাচী ঘোষ জানান, “এখানে ভাঙন বড় সমস্যা। ভাঙন রোধে ভেন্টিভার ঘাস পাইলট প্রকল্প হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। সফলতা মিললে মহকুমার সর্বত্র চাষ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy