Advertisement
E-Paper

ভুল বুঝে ক্ষতিপূরণ ফেরালেন চাষিরা

নথি ঠিক না থাকায় কাটোয়া তাপবিদ্যুত্‌ কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণের সময়ে অনেকেই প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ পাননি। আবার পাওয়ার কথা নয়, এমন অনেকেই ক্ষতিপূরণের টাকা তুলে নিয়েছিলেন। পরে কাটোয়া মহকুমা প্রশাসন চাষিদের সমস্যা মেটাতে এগিয়ে আসে।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৪ ০১:০০

নথি ঠিক না থাকায় কাটোয়া তাপবিদ্যুত্‌ কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণের সময়ে অনেকেই প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ পাননি। আবার পাওয়ার কথা নয়, এমন অনেকেই ক্ষতিপূরণের টাকা তুলে নিয়েছিলেন। পরে কাটোয়া মহকুমা প্রশাসন চাষিদের সমস্যা মেটাতে এগিয়ে আসে। জমির সঠিক মালিক নির্ধারণ করে ক্ষতিপূরণ দিয়েও দেয়। আটকে থাকা জমি ঘেরার কাজও শেষ হয়েছে।

বাম আমলে অধিগৃহীত ৫৫৬ একর জমির কিছুটা ঘিরেছিল রাজ্য বিদ্যুত্‌ উন্নয়ন নিগম বা পিডিসিএল। পরবর্তীতে বাকিটা ঘেরার সময়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন চাষিরা। সমস্যা মেটাতে প্রায় দেড় মাস ধরে চাষিদের বক্তব্য শুনে সঠিক মালিক নির্ধারণ করে মহকুমা প্রশাসন। সেই মতো ক্ষতিপূরণও মিটিয়ে দেওয়া হয়। কাটোয়ার মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার বলেন, “এককথায় বলতে গেলে সবার সহযোগিতায় আমরা চাষিদের সমস্যা মিটিয়ে দিতে পেরেছি। এনটিপিসিও নির্বিঘ্নে জমি ঘেরার কাজ শেষ করে ফেলেছে।”

ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর এবং এনটিপিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণত দু’ধরণের সমস্যায় আটকে জমির সঠিক মালিকরা সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ পাননি। এক, ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে জমির রেকর্ডে সঠিক মালিকের নাম ছিল না। দুই, জমির মালিকদের মধ্যে প্লট ভাগ না থাকায়, একই রেকর্ডভুক্ত অনেক মালিক জমির ক্ষতিপূরণ নিয়েছেন। এনটিপিসির এক কর্তা বলেন, “ওই সব মালিকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে সঠিক মালিকদের হাতে ক্ষতিপূরণের টাকা তুলে দেওয়া সহজ ছিল না। তবে সরকার এগিয়ে আসায় কাজটা সহজে মিটে গেল। আমরাও জমির দখল নিতে পারলাম।” ৫৫৬ একর জমির জন্য ১০ কিলোমিটার ঘিরতে হত, যার মধ্যে ৬ কিলোমিটার জমি ঘিরে রেখেছিল পিডিসিএল। বাকি ৪ কিলোমিটার চাষিদের বাধায় ঘিরতে পারেনি পিডিসিএল। তবে সরকার মধ্যস্থতা করায় পাঁচ বছর পরে সেই জট কেটে গেল বলেই এনটিপিসি কর্তারা মনে করছেন।

মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ১২০ জন চাষি সঠিক ক্ষতিপূরণ পাননি বলে এসডিওর (কাটোয়া) কাছে দরখাস্ত করেছিলেন। পরে বিএলএলআরও ও জেলা জমি অধিগ্রহণ দফতরের সাহায্যে ওই চাষিদের মধ্যে ক্ষতিপূরণের ‘চেক’ কারা তুলেছেন তার তালিকা তৈরি করে প্রশাসন। তারপর তাঁদের বাড়িতে নোটিশ পাঠিয়ে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে প্রশাসনের কর্তা ও আইনজীবীদের সামনে প্রথম দিন তাঁরা টাকা ফিরিয়ে দেবেন বলে লিখিত ভাবে সম্মতি জানান। পরের দিন এসে নগদ টাকা সঠিক ক্ষতিপূরণ প্রাপকদের হাতে তাঁরা তুলে দেন। মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “৪৫ লক্ষ টাকার গড়মিল হয়েছিল। সেই জায়গায় আমরা ৪০ লক্ষ টাকা চাষিদের মধ্যে সমঝোতা করে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি। বাকি টাকাও কয়েকদিনের মধ্যে সঠিক চাষিরা পেয়ে যাবেন।” তবে বিষয়টি এত সহজ ছিল না বলে মনে করেন কাটোয়ার প্রাক্তন বিএলএলআরও, বর্তমানে এনটিপিসির কর্মী মহম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, “বিএলএলআরও দফতরের কর্মী গোবিন্দ দাস দিনের পর দিন চাষিদের কাছে গিয়ে সরকারি টাকা ফেরত না দিলে কী হতে পারে বলে বুঝিয়েছেন। তাতেই চাষিরা পাঁচ বছর পরেও এক কথায় টাকা ফেরত দিচ্ছেন।”

দেবকুণ্ডু গ্রামের বেনুকর ঘোষ, রাধাচরণ ঘোষেরা বলেন, “ভুল করে টাকা তুলে ফেলেছিলাম। সেই টাকা ফেরত দিয়ে দিলাম। আমরাও তো টাকা পাব। সরকার এগিয়ে আসায় সবার ভাল হল।” শ্রীখণ্ড গ্রামের দম্পতি রবীন্দ্রনাথ ও অনিমা গড়াই পাঁচ বছর আগে ২ লাখ ১৯ হাজার টাকা চেক তুলে নিয়েছিলেন। সেই টাকা ভাঙিয়ে পাকা বাড়ি তৈরিও করে ফেলেছেন। তিনিও লিখিত ভাবে সমস্ত টাকা প্রশাসনের হাতে তুলে দেবেন বলে সম্মতি দিয়েছেন। মহকুমাশাসকের দাবি, “এমন ভাবে চাষিদের মধ্যে সমঝোতা আগে হয়েছে বলে জানিনা।”

katwa thermal power project compensation return katwa soumen dutta farmers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy