Advertisement
০৮ মে ২০২৪

ভিড়ে ভরা পার্কই প্রেমের ঠিকানা

তাকে লুকিয়ে-চুরিয়ে দেখেই হয়তো কেটে গিয়েছে পুরো একটা বছর। কারও আবার বছরভরের ব্যস্ততায় প্রেমই খাচ্ছে হাবুডুবু। পুরনো প্রেমকে গুছিয়ে নিতে আর নতুন প্রেমের খাতা খুলতে তাই হাজির ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’। যদিও বরাবরই ১৪ ফেব্রুয়ারি নয়, বসন্ত পঞ্চমীকেই আসল ভ্যালেন্টাইন্স ডে বলে এসেছে বাঙালিরা। হলুদ শাড়ির জড়তা, আড়চোখের দুষ্টুমিতে প্রেমের আলাদাই আমেজ তৈরি হয় যেন।

নিরিবিলির খোঁজে। নিজস্ব চিত্র।

নিরিবিলির খোঁজে। নিজস্ব চিত্র।

অর্পিতা মজুমদার
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:০৬
Share: Save:

তাকে লুকিয়ে-চুরিয়ে দেখেই হয়তো কেটে গিয়েছে পুরো একটা বছর। কারও আবার বছরভরের ব্যস্ততায় প্রেমই খাচ্ছে হাবুডুবু। পুরনো প্রেমকে গুছিয়ে নিতে আর নতুন প্রেমের খাতা খুলতে তাই হাজির ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’।

যদিও বরাবরই ১৪ ফেব্রুয়ারি নয়, বসন্ত পঞ্চমীকেই আসল ভ্যালেন্টাইন্স ডে বলে এসেছে বাঙালিরা। হলুদ শাড়ির জড়তা, আড়চোখের দুষ্টুমিতে প্রেমের আলাদাই আমেজ তৈরি হয় যেন। বিশেষত বয়স যাঁদের মধ্যগগনে, তাঁদের কাছে স্মৃতিমেদুর বসন্ত মানেই মাঘের পঞ্চমী। রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াসের সঙ্গে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের বিরোধের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক নেই তাঁদের। যদিও নয়ের দশকের গোড়ায় বিদেশি কার্ড কোম্পানিগুলির দৌলতে এ দেশে ভ্যালেন্টাইন ডে-র প্রথা শুরুর পরে বাঙালিরাও কমবেশি মেতেছে। সৈনিকদের বিয়ে নিষিদ্ধ করার যে নিদান রোমান সম্রাট দিয়েছিলেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের সুরে বাঙালির বিপ্লবী মনও সেই লুকিয়ে সৈনিকদের বিয়েকে সমর্থন করেছে। আর সেখানেই জুড়ে গিয়েছে প্রেম। নতুনদের অবশ্য প্রাত্যহিকের ব্যস্ততা থেকে প্রেমের ফাঁক খুঁজে নেওয়াটাই ভ্যালেন্টাইন। তার উপর এ বছর দিনটাও পড়েছে সপ্তাহান্তে। ফলে প্রেম একেবারে বিন্দাস।

শিল্পশহর দুর্গাপুরে যেমন এ রাজ্য, সে রাজ্যের কলেজ পড়ুয়া কিংবা কর্মসূত্রে বাইরে থেকে আসা তরুণ-তরুণীসবাই নানা রকম ভাবে ছকে রেখেছে দিনটা। কেউ কাছের মানুষকে নিয়ে পার্কে, কেউ আর একটু নিরালায় নদীর পাড়ে, কেউ আবার শপিং মল আর নামী রেস্তোরাঁতেই দিন কাটানোর কথা ভেবেছেন। শহরের কুমারমঙ্গলম পার্কটি গড়ে ওঠে আটের দশকের মাঝামাঝি। বিস্তৃত পার্কের একটা অংশ ছোটদের। বাকিটা ‘লাভ-জোন’। প্রেমিক-প্রেমিকারা নিরিবিলি সময় কাটাতে বরাবরই ‘কোন’ খোঁজেন এখানে। পার্ক পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বেসরকারি সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেবাশিস রায়ও জানান, সারা বছরই পার্কে ভিড় থাকে। তবে এ দিন তা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তবে প্রেম দিবসে আলাদা কোনও প্রস্তুতি নিচ্ছেন না তাঁরা। সিটি সেন্টার এলাকার পার্কটিও বেশ সাজানো-গোছানো। তবে নিরালা একটু কম। তাই ভিড়ও কমের দিকে। অনেকে আবার বড়দের চোখের আড়ালে যেতে মোটরবাইকের পিছনে প্রেমিকাকে বসিয়ে ছুট দেন শহর ছাড়িয়ে দেউল পার্কে।

কিন্তু শুধু দিন কাটালেই কি হবে? প্রেমিক বা প্রেমিকাকে চমকে দেওয়ার মতো উপহারও তো চাই। সপ্তাহখানেক আগে থেকেই নানা রকম ছাড় দিতে শুরু করেছে সোনার দোকান বা ব্র্যান্ডেড জামাকাপড়ের দোকান। ছাড় মিলছে অনলাইন কেনাকাটাতেও। অনেকেই দোকানের ভিড় এড়াতে কাজের ফাঁকে উপহারের অর্ডার দিয়ে রেখেছেন। অনেকে আবার দোকান ঘুরে কার্ড, বই, চকোলেট আর গোলাপ কিনতেই স্বচ্ছন্দ। বেনাচিতি বাজারের এক কার্ড ব্যবসায়ী রাজা মাইতিও জানালেন ভালই কার্ড বিক্রি হয়েছে এই ক’দিন।

আবার প্রেমের দেখনদারিতে বিশ্বাস নেই অনেকেরই। হোটেল ম্যানেজমেন্ট ছাত্রী দেবপ্রিয়া যেমন বলেন, কাছের মানুষকে তো ৩৬৫ দিনই ভালবাসি। বিশেষ দিনের দরকার কী?”

তবে শহরের হাবভাবে উল্টোটাই দেখা গেল বেশি। শুক্রবার থেকেই সিটি সেন্টারের শপিং মলগুলিতে যেন লাল-গোলাপি রঙ লেগেছে। বাহারি বেলুন কিংবা হার্টের আকারের সফট টয় কিনছেন অনেকে। চোখ টানল শাড়ি পড়া একঝাঁক তরুণীও। জানা গেল, এ দিন বন্ধুদের সঙ্গে দলবেঁধে কাটাবেন। আর শনিবার কাটবে শুধু দু’জনে। শহরের একটি বেসরকারি ম্যানেজমেন্ট কলেজের দুই পড়ুয়া ইপ্সিতা ও মল্লার জানায়, বাইরে কোথাও যাওয়া মানেই অনেক সময়ের ব্যাপার। তার থেকে শহরের পার্কই ভাল। শনিবার ঠাঁই হবে না ভেবে কাজ কেটে আগের দিনই অনেকে ঘুরে যাচ্ছেন পার্কে। বেশ কিছু বিবাহিত যুগলও রয়েছেন। যেমন, অমরাবতী থেকে সেটি সেন্টারের একটি পার্কে এসেছিলেন এসেছিলেন স্নেহাংশ ও অনিমা চট্টোপাধ্যায়। লাজুক মুখে অনিমা বললেন, “তিন বছর প্রেমের পরে বিয়ে। তার পরে আরও চার বছর পেরিয়েছে। ভিড় এড়াতে আগেই ঘুরে গেলাম।” জানালেন, শনিবার মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখা আর রেস্তোঁরায় খাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। শহরের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়া অনুভব ও পামেলার সেলিব্রেশনটা আবার অন্য রকম। কলেজ ফিরতি পথে তাঁরা জানান, এক সঙ্গে বেশ কিছুটা সময় তো কাটাবেনই, গায়ে গা লাগিয়ে ফুচকা খাওয়ার ইচ্ছেও প্রবল। তবে যাঁরা আরও এলাহি দাওয়াত দিতে চান কাছের মানুষকে, তাঁদের জন্য বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরাঁয় রকমারি মেনুর আয়োজন রয়েছে। পকেটের খেয়াল রাখতে রয়েছে নানা ছাড়ও।

তবে শহরের উদ্দাম প্রেম নাড়া দেয়নি অনেক প্রবীণ মনকেই। ইস্পাতনগরীর এ জোনের প্রবীণ যুগল, ডিএসপি-র অবসরপ্রাপ্ত কর্মী প্রণব ঠাকুর ও তাঁর স্ত্রী প্রণতিদেবী যেমন বলেন, “পাশ্চাত্য সংস্কৃতি নিয়ে এত কীসের মাতামাতি বুঝি না। ভালবাসা তো মনের ব্যাপার!”

তবে হুজুগই হোক বা উদ্দাম প্রেম শহর এখন গোলাপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arpita majumder durgapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE