বেআইনি ভাবে সেচখালের মাটি কাটা চলছে। নিজস্ব চিত্র।
রাস্তা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় মাটি জোগাড় করতে কাঁকসা ও আউশগ্রাম ব্লকের ভিতর দিয়ে যাওয়া একাধিক সেচখালের পাড়ের মাটি বেআইনি ভাবে কেটে নেওয়া হচ্ছে বলে মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ করলেন কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য অজয় মজুমদার। এর জেরে সরকারের রাজস্ব যেমন মার খাচ্ছে, তেমনই এলাকার চাষাবাদও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ।
কাঁকসা ব্লকের বড় অংশ জুড়েই ২ নম্বর জাতীয় সড়কের পানাগড় বাইপাস নির্মাণের কাজ চলছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রয়োজনীয় মাটি জোগাড় করতে বাইপাস তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থা ভরসা করছে এলাকার মাটি ব্যবসায়ীদের উপরেই। কাঁকসা ও আউশগ্রাম ব্লকের ভিতর দিয়ে ‘দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন’-র (ডিভিসি) সেচখাল গিয়েছে। সেচখালের পাড় দীর্ঘদিন ধরেই সংস্কার হয়নি বলে জানান এলাকার বাসিন্দারা। এর জেরে পাড়ের বাইরে অতিরিক্ত মাটি জমতে শুরু করে। দিন কয়েক আগে কাঁকসার বিরুডিহার কাছে ও পানাগড়ের নির্মীয়মাণ সার কারখানার দু’দিকে আউশগ্রাম ব্লকের ভিতর দিয়ে যাওয়া খালপাড়ের বাইরের অতিরিক্ত মাটি কাটা শুরু হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অতিরিক্ত মাটি কাটা শেষ হলে এক শ্রেণির মাটি ব্যবসায়ী খালপাড়ের মাটিও কাটতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে খালের ভিতরের মাটিও তুলে ফেলা হয় বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের। অজয়বাবুর আশঙ্কা, “এর জেরে খালের জল প্রয়োজন না হলেও পাশের চাষের জমিতে ঢুকে যাবে।” জমিতে জল ঢুকে যাওয়ায় একাধারে ভূমিক্ষয় ও চাষের যেমন ক্ষতি হবে, তেমনই পাড়ের অস্তিত্বও সঙ্কটের মু্খে পড়বে। মানুষ ও গবাদি পশুর খালে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও বাড়ছে বলে দাবি করেছেন অজয়বাবু।
ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মাটি তুলতে গেলে পশ্চিমবঙ্গ ভূমি রাজস্ব আইন অনুযায়ী প্রথমে সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমতি নিতে হয় । অনুমতি মিললে প্রয়োজনীয় অর্থ জমা দিয়ে মাটি তোলার অনুমতি পাওয়া যায়। তবে মাটি তোলার সময় নির্দিষ্ট পরিমাপের থেকে বেশি মাটি কেটে নেওয়া হল কি না তা-ও দেখে নিতে হয়। ডিভিসি-র সেচখালটি রাজ্য সরকারের সেচ দফতরের অধীন। সেচ দফতরের দুর্গাপুর বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্দিষ্ট নিময় মেনে সেচ খালের পাড়ের মাটি তোলার অনুমতি দেওয়া হয়।
যদিও মাটি কাটা প্রসঙ্গে দফতরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “নির্দিষ্ট মাপের থেকে বেশি মাটি তুলে নেওয়া হয়েছে কি না তা খতিয়ে না দেখে বলা মুশকিল।” অজয়বাবু জানান, সেচ দফতরের পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ২৬ ডিসেম্বর এক আধিকারিককে পাঠানোর আশ্বাস দেওয়া হয়। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাটি কাটার সময় এক বারের জন্যও সেচ দফতরের আধিকারিকের দেখা মেলেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “উপযুক্ত নজরদারি থাকলে খাল-পাড়ের এই হাল হতো না!” অজয়বাবুরও অভিযোগ, “কোনও আইনের তোয়াক্কা না করেই সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে মুনাফা লুঠছে মাটি মাফিয়ারা।”
অজয়বাবুর অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে মহকুমাশাসক কস্তুরী সেনগুপ্তের জানান, স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ‘রিপোর্ট’ চাওয়া হবে। প্রয়োজনে যোগাযোগ করা হবে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও। কস্তুরীদেবীর আশ্বাস, “সব দিক ভাল ভাবে খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy