হাই মাদ্রাসা পরীক্ষার ফল বেরোনোর পরে। বর্ধমানে উদিত সিংহের তোলা ছবি।
চলতি বছরের হাই মাদ্রাসা-সহ আলিম ও ফাজিল পরীক্ষার ফল ঘোষিত হয়েছে মঙ্গলবার। জেলা মাদ্রাসা শিক্ষাকর্মী সমিতি আয়োজিত এক সাংবাদিক বৈঠকে সমিতির জেলা সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ জানান, হাইমাদ্রাসা পরীক্ষায় ৩৫টি মাদ্রাসার মোট ১২৮০ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছিল। তাদের মধ্যে ৯২০ জন উর্ত্তীর্ণ হয়েছে। তাঁদের দেওয়া তথ্যানুসারে, বর্ধমান জেলার মধ্যে হাইমাদ্রাসা পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে কাটোয়ার পাঁচপাড়া মাদ্রাসার শাহিন আফরোজ। রাজ্যে অষ্টম হয়েছে সে। প্রাপ্ত নম্বর ৭১৭। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন বর্ধমানের উপকন্ঠে অবস্থিত কুলগোড়িয়া হাই মাদ্রাসার আসরাফুল মণ্ডল। সে পেয়েছে ৭০২। জেলায় তৃতীয় হয়েছে বর্ধমান হাইমাদ্রাসার ছাত্র মাহমুদুল হাসান। সে পেয়েছে ৫৮৬। জেলায় মেয়েদের মধ্যে সব চেয়ে এগিয়ে মেমারি হাই মাদ্রাসার ছাত্রী আসমা খাতুন। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৫৬।
এছাড়া আলিম পরীক্ষায় সর্বাধিক নম্বর পেয়েছে আটাগড়ের কাছের ঘাটশিলা হাই মাদ্রাসার মহম্মদ সালমান মল্লিক। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৪৩। ফাজিলে জেলায় প্রথম হয়েছে শেখ আফজল হাসান। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৩৪। তবে এ দিন মাদ্রাসাগুলিতে গ্রীষ্মাবকাশ চলতে থাকায় আলিম ও ফাজিল পরীক্ষায় স্থানাধীকারিদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য মেলেনি।
আসরাফুল।
কাটোয়ার পাঁচপাড়া হাই মাদ্রাসার ছাত্র শাহিন আফরজের বাড়ি পাশের লোহাপোতা গ্রামে। শাহিনের মা আরফুন্নেসা বিবি ওই মাদ্রাসারই পার্শ্বশিক্ষিকা। শাহিন বাংলায় ৭৫, ইংরেজিতে ৮৫, অঙ্কে ৮৭, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৯, জীবন বিজ্ঞানে ৯৭, ইতিহাস ৯২, ভূগোলে ৮৬, ইসলামিক বিষয়ে ৯৬ পেয়েছে। ফল বেরোনোর পরে শাহিন বলে, “সারাদিনে ৬-৭ ঘন্টা পড়তাম। বাকি সময় খেলার মাঠে চলে যেত।” শাহিনের প্রিয় খেলা ক্রিকেট আর প্রিয় ক্রিকেটার মাহি। কলকাতা-চেন্নাই আইপিএল দেখতে দেখতে শাহিন বলে, “আমি বড় হয়ে আইপিএস অফিসার হতে চাই।”
মাহমুদুল।
হাইমাদ্রাসা পরীক্ষায় জেলায় দ্বিতীয় হওয়া আসরাফুল মণ্ডল ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখে। তার বাড়ি মঙ্গলকোটের মার্তুবা গ্রামে। আসরাফুলের বাবা শরীফ মণ্ডলের সামান্য জমিজমা রয়েছে। তাতেই কোনও মতে সংসার চলে তাদের। তবে তার মধ্যেও ছেলের লেখাপড়ায় বাধা পড়তে দেননি তিনি। প্রথমে গ্রামের কাছে খারিজি মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া, তারপরে কুলগোড়িয়া হাই মাদ্রাসায় ভর্তি হয় সে। তারপর আর পিছু ফিরতে হয়নি আসরাফুলকে। সমস্ত পরীক্ষায় প্রথম হওয়াটাই যেন অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। আসরাফুল জানায়, পড়ার ফাঁকে নেশা বলতে খেলা। তাছাড়া ছবি এঁকে, গল্পের বই পড়ে সময় কাটে তার। জেলা অ্যাথলেটিক্স মিটে ১০০ মিটার দৌড়ে পদকও পেয়েছে সে। বরাবর মেধাবী ছাত্রের পাশে দাঁড়িয়েছেন কুলগোড়িয়া হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ ও অন্য শিক্ষকেরা। ছাত্রকে পড়ানো, বইখাতা কিনে দেওয়া এমনকী মাদ্রাসার হস্টেলে থাকা-খাওয়ার টাকাও জোগান তাঁরা। তবে প্রধান শিক্ষকের দুঃখ, “আমাদের মাদ্রাসা ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বারবার আবেদন জানানোর পরেও এখনও উচ্চমাধ্যমিকের সমতুল শিক্ষা পাঠ্যক্রম চালু হয় নি। ফলে নিজেদের হাতে তৈরি সেরাদের হারাতে হচ্ছে। অন্য স্কুলে চলে যাচ্ছে তারা।”
টেস্টে আসরাফুল পেয়েছিল ৬৮৫। এ দিন ফল বেরোনোর পরে সে বলে, “ভেবেছিলাম অন্তত ৭২৮ পাব। তা হল না।” তবে সে যে নম্বর পেয়েছে তাতে কলকাতার কাছাকাছি অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খলতপুর আল আমিন মিশনে ভর্তি হওয়া আটকাবে না তার। আসরাফুল বাংলায় ৭৯, ইংরেজিতে ৮২, গণিতে ৯৮, ভৌত ও জীবন বিজ্ঞানে যথাক্রমে ৯৩ ও ৯৪, ইতিহাসে ৮১, ভূগোলে ৮৭, ইসলাম পরিচয়ে ৮৮ ও দুই ঐচ্ছিক বিষয় আরবি ও কর্মশিক্ষাতে পেয়েছে ৮৮ ও ৮০। হাইমাদ্রাসা পরীক্ষায় জেলায় তৃতীয় হয়েছে বর্ধমান শহরের মাহমুদুল হাসান। মাহমাদুল জানায়, প্রথমে খারিজি মাদ্রাসায়, তারপরে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধমানের দুবরাজদিঘির একটি স্কুলে পড়ে সে। পরে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয় বর্ধমান হাই মাদ্রাসায়। চাষি পরিবারের ছেলে মাহমাদুল বড় হয়ে শিক্ষক হতে চায়। পরীক্ষায় বাংলায় ৭৩, ইংরেজিতে ৮৪, গণিতে ৭৭, ভৌত ও জীবন বিজ্ঞানে যথাক্রমে ৯৪ ও ৯৯, ইতিহাসে ৮৮, ভূগোলে ৮৪ ও ইসলাম পরিচয়ে পেয়েছে ৮৭ পেয়েছে সে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy