Advertisement
১১ মে ২০২৪

রেলকে বিদ্যুতের মাসুল মেটাতে হিমসিম স্কুল

রেলের জায়গায় গড়ে ওঠা স্কুলে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রেলের বিদ্যুতের মাসুল রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার চেয়ে বেশি। স্কুলে বিদ্যুৎ খরচ বাবদ পড়ুয়াদের থেকে যে ‘ফি’ নেওয়া হয় আর বিদ্যুতের যা বিল আসে, তার মধ্যে বিস্তর ফারাক। বাড়তি সেই বিল মেটাতে হিমসিম অবস্থা অন্ডাল জুনিয়র বালিকা বিদ্যালয়ের।

অন্ডালের সেই স্কুল। —নিজস্ব চিত্র।

অন্ডালের সেই স্কুল। —নিজস্ব চিত্র।

অর্পিতা মজুমদার
অন্ডাল শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৪ ০২:২৬
Share: Save:

রেলের জায়গায় গড়ে ওঠা স্কুলে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রেলের বিদ্যুতের মাসুল রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার চেয়ে বেশি। স্কুলে বিদ্যুৎ খরচ বাবদ পড়ুয়াদের থেকে যে ‘ফি’ নেওয়া হয় আর বিদ্যুতের যা বিল আসে, তার মধ্যে বিস্তর ফারাক। বাড়তি সেই বিল মেটাতে হিমসিম অবস্থা অন্ডাল জুনিয়র বালিকা বিদ্যালয়ের। মাসুল কমাতে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে কয়েক বার আবেদন জানানো হলেও সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ স্কুল কর্তৃপক্ষের। পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের তরফে জানানো হয়, বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে।

রেল শহর হিসেবে পরিচিত অন্ডালে রেলকর্মীদের মেয়েদের পড়াশোনার জন্য উত্তর ও দক্ষিণ বাজারের সংযোগস্থলে ১৯৫৪ সালে দু’টি আবাসন নিয়ে চালু হয়েছিল অন্ডাল জুনিয়র বালিকা বিদ্যালয়। রেলকর্মীর সন্তানেরা ছাড়া এলাকার অন্য ছাত্রীরাও সেখানে পড়াশোনা করতে আসে। দীর্ঘনালা, বাকসা, শ্রীরামপুর, রামপ্রসাদপুর ইত্যাদি এলাকার পড়ুয়াদের সুবিধা হয়েছে। পরে পড়ুয়া সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ঘরের সংখ্যা বাড়ানো হয়। ১৯৬৫ সালে মাধ্যমিকে উন্নীত হয় স্কুলটি। ২০০২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক চালু হয়। এক সময়ে এই স্কুলে গড়ে হাজার দেড়েক ছাত্রী পড়াশোনা করত। তবে ইদানীং সেই সংখ্যা কিছুটা কমেছে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন ছাত্রী সংখ্যা হাজারের আশপাশে।

স্কুল সূত্রে জানা যায়, তিন মাস অন্তর রেলের তরফে বিদ্যুৎ মাসুলের বিল পাঠানো হয়। কিন্তু রেলের মাসুল রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার মাসুলের তুলনায় অনেক বেশি। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা যেখানে সাড়ে ৬ টাকা হারে ইউনিটের দাম নেয়, সেখানে রেল নেয় গড়ে সাড়ে ১৫ টাকা হারে। পড়ুয়াদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ খরচ বাবদ ‘ফি’ নেয় স্কুল। কিন্তু তাতে যে টাকা আদায় হয়, তা দিয়ে বিদ্যুতের বিল মেটানো যায় না। আগে পড়ুয়া সংখ্যা তুলনায় বেশি থাকায় সমস্যা কিছুটা কম হত। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রেল বিদ্যুৎ বিল পাঠিয়েছিল ৪৭ হাজার ৯৫৬ টাকা। ২০১২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৪ হাজার ৩৯০ টাকা। ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল এসেছে মোট ১ লক্ষ ১৩ বাজার ৩১৩ টাকা।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে পড়ুয়া পিছু বিদ্যুৎ খরচ নেওয়া হয়েছিল ৩২ টাকা হারে। পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ৯৩০ জন। মোট আদায় হয়েছিল ২৯ হাজার ৭৬০ টাকা। এ বছর তা বাড়িয়ে ৬৫ টাকা করা হয়েছে। কিন্ত তাতেও ৬০ হাজার টাকার বেশি ওঠার কথা নয়। কী ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয় স্কুল? প্রধান শিক্ষিকা তপতীদেবী বলেন, “রেল কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা মাসুল কমানোর জন্য লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু ফল হয়নি। স্কুলের সাধারণ তহবিল বা উন্নয়ন তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে কোনও রকমে চালানো হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন এ ভাবে চালানো মুশকিল।”

রেলের তরফে অবশ্য স্কুল কর্তৃপক্ষের আবেদন খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়। পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বিশ্বনাথ মুর্মু বলেন, “স্কুল কর্তৃপক্ষের আবেদন বিবেচনা করা হবে। এ ব্যাপারে রেলের আইনে কী করা যায় তা খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

andal arpita mazumder school rail
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE