আতসবাজিতে মাতল শিল্পাঞ্চল। —নিজস্ব চিত্র।
পুজোর দিন কয়েক আগে থেকে তল্লাশি চালিয়ে আটক করা হয়েছিল বহু শব্দবাজি। এত পরিমাণ বাজি মেলার পরে পুলিশ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আশঙ্কা ছিল, শব্দ-দানবের তাণ্ডবে এ বারও অতিষ্ঠ হতে পারেন শহরবাসী। ট্যাবলো বের করে সচেতনতা প্রচার, অভিযোগ গ্রহণের জন্য কন্ট্রোল রুমের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। কিন্তু, এ বার কালীপুজোর রাতে দুর্গাপুর শহরে শব্দবাজির তাণ্ডবের কোনও অভিযোগ পেল না পুলিশ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। বিক্ষিপ্ত কিছু ক্ষেত্র ছাড়া শব্দবাজির আওয়াজ সে ভাবে শোনা যায়নি বলে জানান শহরের বাসিন্দারাও। বাজি নিয়ে অভিযোগ না উঠলেও বৃহস্পতিবার রাতে জুয়া খেলার ঠেক থেকে এবং অভব্য আচরণের অভিযোগে ৪৬৫ জনকে আটক করে পুলিশ।
কালীপুজোর আগে থেকে প্রতি বছরই বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর শব্দবাজি উদ্ধার করে পুলিশ ও দূষণ নিয়ন্ত্রন পর্ষদ। তবু পুজোর সময় এই বাজির অত্যাচার বন্ধ করতে কালঘাম ছুটে যায় প্রশাসনের। দূষণ নিয়ন্ত্রন পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাজি পুড়লে বাতাসে সালফার ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ে। ২০০৯ সাল থেকে এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ রাখা হচ্ছে। ২০১১ সালে কালীপুজোর রাতে বেনাচিতিতে বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে সালফার ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ছিল ২৬.৩ মাইক্রোগ্রাম। ২০১২ সালে কালীপুজোর রাতে শহরের প্রতি ঘনমিটার বাতাসে সালফার ডাই-অক্সাইডের গড় পরিমাণ মিলেছিল ১০.১২ মাইক্রোগ্রাম। ২০১৩ সালেও তা অনেকটা কমে। পর্ষদের এক আধিকারিক জানান, এ বছরের হিসেব এখনও পাওয়া যায়নি। তবে গত দু’বছরের তুলনায় এ বার মাত্রা কমবে বলে তাঁদের ধারণা।
শুধু দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বা পুলিশ নয়, শহরবাসীও জানাচ্ছেন, গত দু’বছরের তুলনায় এ বার দুর্গাপুরে শব্দবাজির অত্যাচার অনেকটা কম ছিল। আগে সব থেকে বেশি বাজি ফাটত বেনাচিতি এলাকায়। সেখানকার বাসিন্দা দেবাশিস রায় জানান, বছর তিনেক আগে এই এলাকায় এত বাজি ফাটানো হত যে বাড়িতে অসুস্থ কেউ থাকলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়তেন। অনেক রাত পর্যন্ত বিকট শব্দে বাজি ফাটত। কিন্তু এ বছর সেই চিত্রে অনেকটা বদল দেখা গিয়েছে। তিনি জানান, কিছু-কিছু জায়গায় অল্পস্বল্প বাজি ফাটলেও তার তীব্রতা অন্য বছরের মতো ছিল না। ইস্পাতনগরীর এ-জোনের বাসিন্দা অভিজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, “আগে বাজির দৌরাত্ম্যে পুজোর রাতে বাড়ি থেকে বেরোতেই ভয় হত। গত বছর আগের তুলনায় উপদ্রব কম ছিল। এ বছর তা আরও কমে গিয়েছে।” সিটি সেন্টারের শুভদীপ সাহা জানান, শব্দবাজির তুলনায় আতসবাজিই বেশি পুড়েছে। আগে সারা রাত জেগে বাজি ফাটানো হলেও এখন আর সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না। তবে তাঁর আশঙ্কা, “কালীপুজোর রাতে কড়া নজরদারির জন্য হয়তো এই বাজি ফাটেনি। কিন্তু এর পরে আগামী কয়েক দিনে যে ফাটবে না, সে ব্যাপারে নিশ্চয়তা কোথায়?”
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, কালীপুজোর সময়ে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানানোর জন্য রাতভর কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। শব্দবাজির ফলে কী কী অসুবিধা হতে পারে, তা লাগাতার প্রচার করা হয়েছে। মানুষকে সচেতন করার ফলেই শব্দবাজি ফাটানো অনেকটা কমেছে বলে পর্ষদের দাবি। পর্ষদের এক আধিকারিক বলেন, “আমরা মোবাইল ভ্যানের ব্যবস্থা রেখেছিলাম। কোনও অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে সেখানে আমাদের কর্মীরা হাজির হয়ে যাবেন। কিন্তু পুজোর রাতে এ বছর দুর্গাপুরে কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি।” পুলিশ জানায়, কালীপুজোর রাতে বিশেষ টহলদার বাহিনী ঘুরে বেরিয়েছে শহরে। পুজোর আগে থেকেই ধরপাকড় চলছিল। এখনও তা চালানো হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy