নতুন শিক্ষাবর্ষে স্কুলের উচ্চমাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান স্তরে পঠনপাঠনের অনুমোদন মিলেছে। কিন্তু কোনও পরীক্ষাগার না থাকায় ক্লাস শুরু করা যাচ্ছিল না। এগিয়ে এলেন লন্ডন নিবাসী স্কুলের প্রাক্তনী কৃষ্ণগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাঁর এই উদ্যোগে খুশির হাওয়া বর্ধমানের বানীপীঠ হাইস্কুলের পড়ুয়া ও শিক্ষক মহলে।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৌগত তা জানান, পুরনো পাঠ্যক্রম শেষ হওয়ার পর থমকে যায় স্কুলের উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনা। এর জেরে দীর্ঘদিন ধরেই কমে যাচ্ছিল পড়ুয়ার সংখ্যা। বারবার শিক্ষা দফতরে দরবার করা সত্ত্বেও উচ্চমাধ্যমিক পঠন পাঠনের পর ২০১১-তে কলা ও ২০১৪ সালের গোড়ায় মেলে বিজ্ঞান বিভাগের অনুমোদন। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে চালু হবে বিজ্ঞান বিভাগের পড়াশোনা। কিন্তু পরীক্ষাগার না থাকাই চালু করা যায়নি বিজ্ঞান বিভাগ। সৌগতবাবুর কথায়, “সমস্যা মোটাতে প্রথমে ভাবা হয়েছিল আমাদের স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়ারা অন্য কোনও স্কুলের পরীক্ষাগার ব্যবহার করবে।” স্কুল সূত্রে জানা যায়, সমস্যার কথা শুনে এগিয়ে আসেন ৭৭ বছরের কৃষ্ণগোপালবাবু। সৌগতবাবু বলেন, “কৃষ্ণগোপালবাবু বললেন, পরীক্ষাগার তৈরি করতে কত টাকা লাগবে তা আমাকে জানান। স্কুলের তরফে মোট ২০ লক্ষ টাকার একটি প্রস্তাবিত হিসাব দেওয়া হয়। উনি দিন কয়েকের মধ্যেই পুরো টাকাও মিটিয়ে দেন।” ওই টাকাতেই স্কুলে পদার্থবিদ্যা, রসায়ণ, প্রাণিবিদ্যা ও ভূগোলের পরীক্ষাগার নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। ২০১৫ থেকেই চালু হবে বিজ্ঞানের পড়াশোনা। এছাড়া স্কুলের তরফে একটি ছাত্রাবাস তৈরি করে দেওয়ার জন্যও কৃষ্ণগোপালবাবুকে অনুরোধ করা হয়েছে।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৫৬ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন কৃষ্ণগোপালবাবু। পেশায় জল শোধন বিজ্ঞানী কৃষ্ণগোপালবাবু জল শোধন সংক্রান্ত বিজ্ঞানী। গত ৫৫ বছর ধরে লন্ডন প্রবাসী কৃষ্ণগোপালবাবু বছরে একবার ভারতে আসেন। বর্ধমানের খালুইবিলের বাড়িতে এলেই ছুটে যান নিজের পুরনো স্কুলে। নবম শ্রেণির পড়ুয়া সচিন সাহা জানান, “উনি স্কুলে এলেই কোথায় সমস্যা জানতে চান। ক্লাসঘরে ঘুরে ঘুরে আমাদের সঙ্গে কথা বলেন, পড়াশোনা কেমন চলছে জানতে চান।”
তবে স্কুলের জন্য এই প্রথম এগিয়ে আসে নয় কৃষ্ণগোপালবাবুর। ২০০৮ সালে স্কুল প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বছরে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মেধাবী পড়ুয়াদের পড়াশোনা ও পাঠ্যপুস্তক কিনে দিতে কৃষ্ণগোপালবাবু ৫ লক্ষ টাকা দান করেন বলে স্কুল কতৃপক্ষের তরফে জানা যায়। ২০১৩ সালে কৃষ্ণগোপালবাবু স্কুলকে ১০টি কম্পিউটারও কিনে দেন স্কুলকে। বর্তমানে তৈরি হচ্ছে একটি কম্পিউটার ঘর। স্কুলের শিক্ষক অনুপ ভট্টাচার্য, অতনু নায়ের, সঞ্জয় অধিকারী প্রাক্তনীর এই দানে গর্বিত। তাঁদের কথায়, “ব্যক্তিগত জীবনে বিরাট সাফল্য সত্ত্বেও নিজের স্কুলকে ভোলেননি তিনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy