Advertisement
১৭ মে ২০২৪

স্কুল লাগোয়া শ্মশান সংস্কার নিয়ে বিতর্ক ভাতারের গ্রামে

স্কুল লাগোয়া শ্মশানের সংস্কার নিয়ে দ্বিমত তৈরি হয়েছে ভাতারের খেঁড়ুর গ্রামের বাসিন্দা ও শাসকদলের একাংশ নেতাদের মধ্যে। সম্প্রতি আইএসজিপি প্রকল্পের আওতায় ভাতারের খোঁড়র-ছাতনি কেএন হাইস্কুল লাগোয়া প্রায় তিনশো বছরের পুরনো ওই শ্মশানটি সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। এর প্রতিবাদে ভাতারের বিডিও প্রলয় মণ্ডলের কাছে চিঠি দিয়ে সংস্কার বন্ধ এবং শ্মশানটি অন্যত্র সরানোর দাবি জানিয়েছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রামবাসী। সংস্কারে আপত্তি রয়েছে ওই স্কুল এবং তৃণমূলের স্থানীয় কিছু নেতারও।

এই শ্মশান সংস্কার ঘিরে বিতর্ক। ছবি: উদিত সিংহ।

এই শ্মশান সংস্কার ঘিরে বিতর্ক। ছবি: উদিত সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১৫
Share: Save:

স্কুল লাগোয়া শ্মশানের সংস্কার নিয়ে দ্বিমত তৈরি হয়েছে ভাতারের খেঁড়ুর গ্রামের বাসিন্দা ও শাসকদলের একাংশ নেতাদের মধ্যে।

সম্প্রতি আইএসজিপি প্রকল্পের আওতায় ভাতারের খোঁড়র-ছাতনি কেএন হাইস্কুল লাগোয়া প্রায় তিনশো বছরের পুরনো ওই শ্মশানটি সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। এর প্রতিবাদে ভাতারের বিডিও প্রলয় মণ্ডলের কাছে চিঠি দিয়ে সংস্কার বন্ধ এবং শ্মশানটি অন্যত্র সরানোর দাবি জানিয়েছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রামবাসী। সংস্কারে আপত্তি রয়েছে ওই স্কুল এবং তৃণমূলের স্থানীয় কিছু নেতারও। তবে তৃণমূলেরই আরেক অংশ শ্মশান ওখানে রাখারই পক্ষে।

কে এন হাইস্কুল আর শ্মশানের মাঝের দূরত্ব খুব বেশি হলে ৫০ ফুট। ফলে স্কুল চলাকালীন দাহকার্য চললে পড়ুয়া থেকে শিক্ষক সকলেই অসুবিধেয় পড়েন। এমনকী পোড়া গন্ধে একাধিকবার ছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে, পরীক্ষা মাঝপথে থামিয়ে দিতে হয়েছে বলেও স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে। সপ্তম শ্রেণির তনুশ্রী দে বলে, “ক্লাস করতে করতে মোড়া পোড়ার গন্ধ পেয়ে আমি অনেকবারই বমি করে ফেলেছি।” তাঁদের দাবি, পাকাপাকি ভাবে ওই শ্মশান তৈরি করার আগে স্কুলের কথা ভেবে শ্মশানটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। প্রধান শিক্ষক হরেরাম কোঙার বলেন, “আমি ১০ বছর ধরে এই স্কুলে রয়েছি। বহু দিন অভিভাবকেরা এসে স্কুল চলার সময় শবদাহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।

মৃতদেহ পোড়ার গন্ধে অনেক ছাত্রছাত্রী বমি করেছে, অনেকের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। অনেকে অজ্ঞানও হয়ে গিয়েছে। মড়া পোড়ার গন্ধে মিড-ডে মিল খেতেও অনেকে পড়ুয়া নারাজ।” তাঁর অভিযোগ, “এই সমস্যা নিয়ে বেশ কয়েকবার বিডিওর সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে চেয়েছি। কিন্তু বিডিও দেখা পর্যন্ত করেননি।”

স্কুলের এই দাবিতে সহমত গ্রামবাসীরাও। বাড়ির ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে স্কুল চলাকালীন দাহ করা বন্ধ করে রেখেছেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের আপত্তি সত্বেও শ্মশানের নির্মাণ কাজ চলছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। গ্রামের বিভাস দাঁ বলেন, “কালী মন্দিরের কাছের এই শ্মশান স্কুলের চেয়েও বহু পুরনো। তবে আমদের ছেলেমেয়েরাই স্কুলে পড়ে। তাই আমরা অভিভাবক বা গ্রামবাসী হিসেবে স্কুল চলার সময় ওই শ্মশানে মরা পুড়তে দিই না। নজর রাখা হয়, যাতে স্কুল চলার সময় কেউ ওখানে দেহের সৎকার না করেন।” স্থানীয় বাসিন্দা বিপ্লব চক্রবর্তীও জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই স্কুল চলার সময় এখানে দাহ করা হয় না। শ্মশানে গিয়েও দেখা যায়, একটি দেহ পড়ে রয়েছে। মৃতের পরিবারের লোকেরা জানান, স্কুল ছুটির পরে দাহ করা হবে।

শ্মশান সংস্কারে ঢুকে পড়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও। ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মাধ্যক্ষ ও স্থানীয় তৃণমূল নেতা নীলমাধব মুখোপাধ্যায় স্কুলের পাশে থাকলেও আরেক নেতা মানগোবিন্দ অধিকারী শ্মশান সংস্কারেরই পক্ষে। নীলমাধববাবু বলেন, “শ্মশান আধুনিক হলে দূরের অনেক গ্রাম থেকেও শব এখানে আসবে। স্কুল চলাকালীন দাহ না করার যে রীতি গ্রামের মানুষ মেনে চলেন,তা ভিন গ্রামের মানুষ মানবেন কেন? আর স্কুলের সময়ে দাহ হচ্ছে কি না তা পাহারায় বা দেবে কে?” তাঁর দাবি, “বিডিওকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি, শ্মশানটি যেন গ্রামের শেষপ্রান্তে, স্কুল থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানে সরকারি খাস জমি রয়েছে। শবদাহের পরিকাঠামোও রয়েছে।” উল্টোদিকে, ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধক্ষ্য তথা তৃণমূলেরই আরেক স্থানীয় নেতা মানগোবিন্দ অধিকারীর যুক্তি, “প্রাচীন ওই শ্মশান সরালে গ্রামের মানুষই ক্ষুব্ধ হবেন। তা ছাড়া সংস্কার না হলেই যে সংকার বন্ধ হবে তার নিশ্চয়তা কী?” আর গ্রামবাসীদের আপত্তির প্রশ্নে মানগোবিন্দবাবুর জবাব, “গ্রামবাসীরা আপত্তি করতেই পারেন না। আমাদের দলেরই কিছু লোক ওই ব্যাপারটা নিয়ে ঘোঁট পাকাচ্ছে।”

বিডিও প্রলয়বাবু বলেন, “শ্মশানের সঙ্গে গ্রামবাসীর আবেগ জড়িত। তবে ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধার কথা ভেবে শ্মশানটির চারিদিকে পাঁচিল দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যাতে স্কুল থেকে দেহ দেখতে না পাওয়া যায়। এছাড়া সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি ওই শ্মশানে লম্বা চিমনি তৈরি করে যাতে ধোঁয়া নিচের দিকে না নামে তার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

burning ghat renovation bhatar bardwan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE