Advertisement
০৩ মে ২০২৪

সিন্ডিকেট চালানোর অভিযোগ ঘিরে ক্ষোভ ইকড়ার কারখানায়

সিন্ডিকেট চালানোর অভিযোগকে কেন্দ্র করে কোন্দল বাধল বাধল জামুড়িয়ায়। দলেরই স্থানীয় কিছু লোকজন সিন্ডিকেট চালানোর চেষ্টা করছেন, এই অভিযোগ তুলে জামুড়িয়ার ইকড়া শিল্পতালুকে একটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানায় সোমবার সকালে বিক্ষোভ দেখালেন তৃণমূলের কিছু কর্মী-সমর্থক।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৪ ০১:১৯
Share: Save:

সিন্ডিকেট চালানোর অভিযোগকে কেন্দ্র করে কোন্দল বাধল বাধল জামুড়িয়ায়। দলেরই স্থানীয় কিছু লোকজন সিন্ডিকেট চালানোর চেষ্টা করছেন, এই অভিযোগ তুলে জামুড়িয়ার ইকড়া শিল্পতালুকে একটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানায় সোমবার সকালে বিক্ষোভ দেখালেন তৃণমূলের কিছু কর্মী-সমর্থক। সমস্যা মেটাতে পুলিশ সব পক্ষকে নিয়ে একটি বৈঠক করেছে বলে কারখানা কর্তৃপক্ষ জানান।

এ দিন সকালে তৃণমূল কর্মী রুপাই নন্দীর নেতৃত্বে শ’খানেক স্থানীয় যুবক কারখানার গেটে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ, রবিবার এই কারখানা থেকে এক গাড়ি চারকোল নিয়ে বেরোনোর সময়ে স্থানীয় দুই তৃণমূল নেতা গুণময় বাউরি ও চঞ্চল বন্দ্যোপাধ্যায়ের মদতে গঠিত সিন্ডিকেটের যুবকেরা টাকা চায়। তা না দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় কিছু দূরে ফের রাস্তা আটকায় আরও কিছু যুবক। তারা টাকা কেড়ে নেয় বলে অভিযোগ রুপাইবাবুদের। তাঁর প্রশ্ন, “যেখানে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিন্ডিকেট নিষিদ্ধ বলে জানিয়েছেন, সেখানে দলের এখানকার নেতারা কী ভাবে এই জুলুম চালাচ্ছেন?” গুণময়বাবু, চঞ্চলবাবুরা অবশ্য কোনও রকম সিন্ডিকেট চালানোর অভিযোগ মানতে চাননি।

জামুড়িয়ায় স্থানীয় কিছু তৃণমূল কর্মী-সমর্থক সিন্ডিকেট গড়ে কারখানাগুলিতে জিনিসপত্র কেনার জন্য চাপ দিচ্ছে, এই অভিযোগ উঠেছিল আগেই। প্রকাশ্যে অন্য দাবিদাওয়ার কথা বলে ভিতরে ভিতরে এই সিন্ডিকেট চালাতে দেওয়ার দাবিতে আলোচনায় বসার জন্য চাপ দিয়ে একটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানার সামনে জনা পঞ্চাশ লোক বিক্ষোভও দেখিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।

নানা কারখানা ও স্থানীয় সূত্রে অবশ্য দাবি, বাম আমলেও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জিনিস কেনাবেচার চাপ দেওয়া হত। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে ইকড়া গ্রামের পাশে একটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানা নির্মাণ শুরু হতেই স্থানীয় ১২১ জন একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে ইট, বালি, সিমেন্ট ইত্যাদি তাঁদের কাছে কেনার দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। জামুড়িয়া পুরসভার তৎকালীন পুরপ্রধান তাপস কবি বিক্ষোভকারীদের জানিয়ে দেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ যেখান থেকে খুশি সামগ্রী কিনতে পারেন। পরে সিন্ডিকেট ১০ শতাংশ লাভ রেখে সামগ্রী সরবরাহে রাজি হলে সেই মতো কাজ চলতে থাকে। এ ভাবে ইকড়া, শেখপুর, দামোদরপুর, বিজয়নগর, ধাসনার পাশে ১২টি স্পঞ্জ আয়রন কারখানায় একই নিয়মে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের কাজ করত স্থানীয় যুবককে নিয়ে গড়া পাঁচটি সিন্ডিকেট। কারখানা তৈরি হয়ে যাওয়ার পরে অবশ্য সিন্ডিকেট ভেঙে যায়।

এরই মধ্যে কারখানাগুলিতে কয়লা সরবরাহের জন্য ফের সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে বলে অভিযোগ। বিজয়নগরের সেই সময়ের এক সিন্ডিকেটের সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কারখানাগুলি অন্য ভাবে কয়লা কিনলে লরি প্রতি তোলা আদায় করা হত। শেষে কারখানাগুলি সিন্ডিকেটের কাছ থেকেই কয়লা কিনতে শুরু করে বলে তাঁর দাবি। নানা সময়ে সিন্ডিকেটগুলির নেতৃত্ব গিয়েছে নানা লোকের হাতে। মূলত তৎকালীন শাসকদলের আশ্রিত কয়লা চোরেরাই তখন এই সব সিন্ডিকেটের মাথায় চলে আসে বলে এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ।

এলাকা সূত্রে খবর, গত বিধানসভা ভোটের আগে নির্বাচন কমিশন এবং সিবিআই অভিযানের ভয়ে অবৈধ কয়লা সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে অবৈধ কয়লা কারবার সংগঠিত ভাবে চালু না হওয়ায় সিন্ডিকেটগুলি বন্ধ হয়ে যায়। কিছু যুবক চারকোল কিনে বিক্রির জন্য সিন্ডিকেট গড়লেও তা দানা বাঁধেনি। সম্প্রতি নতুন করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্য কেনাবেচা অথবা কয়লা, আকরিক লোহা কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ঢোকানোর সময়ে তাদের টাকা দিতে হবে, এই দাবিতে স্থানীয় কিছু লোকজন সোচ্চার হয়েছে বলে অভিযোগ।

জামুড়িয়া ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি পূর্ণশশী রায় বলেন, “দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশ, কোনও ভাবে সিন্ডিকেট বরদাস্ত করা হবে না। পুলিশ ও কারখানা মালিকদের জানিয়েছি, এ সব পরিস্থিতি কড়া হাতে মোকাবিলা করুন। এর সঙ্গে দলের কোনও সর্ম্পক নেই।” সিপিএম নেতা মনোজ দত্তের দাবি, “আমাদের সময়ে কোনও রকম জুলুমকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়নি। কারখানা কর্তৃপক্ষ এলাকাবাসীর সঙ্গে সম্পর্ক রেখে সুবিধা মতো কাজ করেছেন।”

ওই শিল্পতালুকের এক কারখানার কর্তা অরুণ তুলসিয়ানি জানান, এ দিন এলাকাবাসীকে নিয়ে তাঁদের সঙ্গে পুলিশ ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের ব্যবস্থা করে। সেখানে তাঁরা জানিয়েছেন, স্থানীয় যুবকদের তাঁরা যে কোনও কাজে অগ্রাধিকার দেবেন। বাইরে কী হচ্ছে, তা দেখার দায়িত্ব পুলিশের। পুলিশ জানায়, কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে একটি বিক্ষোভ হয়েছিল। দু’পক্ষকে বসিয়ে মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনও জুলুমের অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nilotpaul roychoudhury syndicate jamuria
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE