Advertisement
E-Paper

স্মৃতিটুকুই সম্বল ভাঙাচোরা স্টেডিয়ামের

গ্যালারির গর্জনে চাপা পড়ে যেত কারখানার সাইরেনের আওয়াজ। কলকাতার বড় ক্লাবে খেলা ফুটবলার, অলিম্পিক খেলে আসা ফুটবলারেরা দাপিয়ে বেড়াতেন সংস্থার মাঠ। কিন্তু সে সব এখন অতীত। বার্ন স্ট্যান্ডার্ড সংস্থার সেই মাঠে এখন চরে বেড়ায় গরু-ছাগল। প্রতিযোগিতামূলক খেলা বন্ধ হয়েছে অনেক দিন। গ্যালারির কাঠ কবে চুরি হয়ে গিয়েছে।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৪ ০২:২৮
বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের বার্নপুর ইউনিটের মাঠ পড়ে অবহেলায়। নিজস্ব চিত্র।

বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের বার্নপুর ইউনিটের মাঠ পড়ে অবহেলায়। নিজস্ব চিত্র।

গ্যালারির গর্জনে চাপা পড়ে যেত কারখানার সাইরেনের আওয়াজ।

কলকাতার বড় ক্লাবে খেলা ফুটবলার, অলিম্পিক খেলে আসা ফুটবলারেরা দাপিয়ে বেড়াতেন সংস্থার মাঠ।

কিন্তু সে সব এখন অতীত। বার্ন স্ট্যান্ডার্ড সংস্থার সেই মাঠে এখন চরে বেড়ায় গরু-ছাগল। প্রতিযোগিতামূলক খেলা বন্ধ হয়েছে অনেক দিন। গ্যালারির কাঠ কবে চুরি হয়ে গিয়েছে। ২০০৯ সালে রেল মন্ত্রক ধুঁকতে থাকা এই কারখানা অধিগ্রহণের পরেও মাঠের হাল ফেরেনি। কর্তৃপক্ষ জানান, অর্থের অভাবেই মাঠটি সংস্কার করা যাচ্ছে না।

এক সময়ে বার্ন স্ট্যান্ডার্ড সংস্থার বার্নপুর ইউনিটের নিজস্ব ফুটবল দল ছিল। সেই দল খেলতে যেত কলকাতায়। প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, ফুটবল ছিল সংস্থার একটি গরিমার জায়গা। সংস্থার ক্রীড়া বিভাগ আন্তঃবিভাগীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজন করত। আড়ম্বরের সঙ্গে হত চ্যালেঞ্জ শিল্ড ফুটবল। সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত ফুটবল খেলোয়াড় সুকুমার দত্ত জানান, এই মাঠে আসানসোল মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার একাধিক প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়েছে। চ্যালেঞ্জ শিল্ড খেলতে আসত অনেক খ্যাতনামা দল। শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের বাইরে থেকেও দল আসত। কিন্তু আশির দশকের শেষ দিক থেকেই খারাপ সময়ের শুরু। তখন থেকেই সংস্থার আর্থিক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি বিআইএফআর-এর অধীনে চলে যায় এই সংস্থা। অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল হয়ে যাওয়ায় সব থেকে বেশি প্রভাব পড়ে ক্রীড়া বিভাগে। বন্ধ হতে শুরু করে সংস্থার জনপ্রিয় ফুটবল প্রতিযোগিতাগুলি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে টিন দিয়ে ঘেরা কাঠের গ্যালারি বেহাল হয়ে পড়ে। বিনা বাধায় গ্যালারি থেকে ইট-বাঁশ-লোহা খুলে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।

বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের পুরনো কর্মীরা জানান, কলকাতার প্রথম ডিভিশনে খেলা অনেক খেলোয়াড় এই সংস্থায় চাকরি করতে এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম অরুণ ঘোষ, মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, চিত্তরঞ্জন দাস প্রমুখ। অরুণবাবু ১৯৬০ সালের অলিম্পিকে ভারতীয় ফুটবল দলের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। পরে ১৯৮২ সালের এশিয়াডে ভারতীয় ফুটবল দলের কোচও হন তিনি। এই সংস্থায় চাকরি নিয়েছিলেন ১৯৫২-এর অলিম্পিকে ভারতীয় ফুটবল দলের সদস্য পল্টু রায়। তিনি পঞ্চাশের দশকে ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের ফুটবলার ছিলেন। পল্টুবাবু বার্ন স্ট্যান্ডার্ডেই তাঁর চাকরিজীবন শেষ করেন। খিদিরপুর ক্লাবের ফুটবলার দিলীপ রায় এক সময়ে এই সংস্থার ফুটবল দলে নিয়মিত খেলতেন।

সেই সব উজ্জ্বল দিন অবশ্য এখন মলিন। সংস্থার নিজস্ব দল অনেক দিন আগে উঠে গিয়েছে। মাঠে খেলা হয় না বললেই চলে। আসানসোল মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক অমল সরকারের আক্ষেপ, “বিভিন্ন সময়ে বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের ওই মাঠ আমরা ব্যবহার করেছি। এখন সব অতীত। গ্যালারি-সহ একটা ভাল মাঠ আমরা হারিয়ে ফেলেছি।”

সংস্থার বার্নপুর ইউনিটের জেনারেল ম্যানেজার অশোক ঘোষের দাবি, ওই মাঠ ও গ্যালারি পুরো সংস্কার করতে কয়েক কোটি টাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, “রেল অধিগ্রহণ করলেও কর্মীদের বেতন দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই বহু স্মৃতিতে ঘেরা একটা মাঠ নষ্ট হয়ে গেলেও চোখের জল ফেলা ছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই।”

burn standard nilotpal roy chowdhury hirapur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy